আগুন কি?
আগুন (fire)
বিজ্ঞানীরা বলেন আগুন একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। সাধারণত এতে বাতাসের অক্সিজেন এবং জ্বালানির কার্বন ও হাইড্রোজেন মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করে। তাপ এবং আলোর মাধ্যমে রাসায়নিক বিক্রিয়া শক্তিকে প্রকাশ বা মুক্ত করে। আগুন জ্বলার জন্য তিনটি জিনিস দরকারজ্বালানি, অক্সিজেন এবং উত্তাপ। শুধু জ্বালানি (দ্র) এবং অক্সিজেন আগুন জ্বালাতে পারে না। যখন জ্বালানি অক্সিজেনের সঙ্গে ধীরে ধীরে সংযুক্ত হয় তখন শুধু তাপই সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে সংযুক্তি এত ধীরে ধীরে সম্পন্ন হয় যে তখন তাপ আর তেমন বোধগম্য হয় না, যদিও তাপ-সৃষ্টি বন্ধ থাকে না কখনো। এই ব্যাপারটাই ঘটে যখন লোহায় মরচে ধরে। এ ক্ষেত্রে লোহার পরমাণু অক্সিজেনের পরমাণুর সঙ্গে খুব ধীরে ধীরে সংযুক্ত হয় । লোহায় মরচে ধরা এক ধরনের মৃদু জ্বলন বা দহন । যখন জ্বলন খুব দ্রুত সম্পন্ন হয় তখন অনেক ক্ষেত্রে বিস্ফোরণ ঘটে। এটা তখনই ঘটে যখন বেশির ভাগ জ্বালানি একসঙ্গে জ্বলে ওঠে। জ্বালানির সমস্ত শক্তি তখন একই সময়ে মুক্ত হয়।
কখনো কখনো মৃদু দহন দ্রুত সম্পন্ন হয়ে জ্বলনকে ত্বরান্বিত করে, ফলে আগুন জ্বলে ওঠে। স্বতঃস্ফুর্ত দহন অনেক সময় ভেজা খড়ের গাদায় কিংবা কিছুটা তৈলাক্ত শুকনো ছালার গাদায় ঘটতে দেখা যায় । মৃদু দহনের তাপ ধীরে ধীরে সঞ্চিত হয় এবং এই সঞ্চিত তাপকে যদি কোনো বায়ুপ্রবাহ গাদা থেকে সরিয়ে ফেলতে সক্ষম না হয় তবে ঐ সঞ্চিত তাপ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে গাদার প্রজ্বলন তাপে (ignition temperature) পৌছে যাবে। ফলে হঠাৎ করে ঐ গাদায় তখন আগুন জ্বলে উঠবে । ১৯০৬ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল । তখন সারা শহরে বেশ কিছু স্থানে আগুন ধরে যায়।
মানুষ কবে থেকে আগুন ব্যবহার করে আসছে তা সঠিক জানা যায় না। তবে দু' লক্ষ বছর থেকে মানুষ যে আগুন ব্যবহার করছে তা জানা গেছে। চীন দেশের পিকিং মানুষেরা আগুন ব্যবহার করত । আগুনের ব্যবহার মানুষকে নানাভাবে নানাদিকে প্রভাবিত করেছিল । আগুনে মাংস সেঁকে মানুষ বুঝেছিল এতে খাবার বেশ উপাদেয় হয়- সহজে তা হজম হয়, স্বাস্থ্যবান ও শক্তিশালী হওয়া যায়। রোগ-ব্যাধিও হয় কম। নিজেকে। সে বেশ নিরাপদ ভাবতে শিখেছিল- হিংস্র জন্তুজানোয়ারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একটা চমৎকার উপায় সে বের করেছিল । নানা জীব-জন্তু, পশু-পাখি শিকার করার জন্য নানা যন্ত্রপাতি তৈরি করা সে শিখেছিল । রান্না করা খাবার বেশি দিন ভালো থাকে জেনেছিল বলে কোথাও যাওয়ার সময় পথে খাওয়ার জন্য এই রান্না করা খাবারই বয়ে নিয়ে যেত সঙ্গে করে । মাটির তৈরি জিনিসপত্র আগুনে পোড়ালে সেগুলি যে শক্ত ও টেকসই হয় তা একদিন জানার পর মৃৎশিল্পের প্রসার ঘটল নানা স্থানে। এর সূচনা প্রায় সাত হাজার বছর আগে।
আগুন সম্পর্কে একটা সুন্দর কথা বলা হয়ে থাকে দাস হিসাবে আগুন খুবই ভালো, কিন্তু প্রভু হিসাবে নয় । অর্থাৎ আগুন আমাদের জন্য ততক্ষণই বেশ কাজের যতক্ষণ তা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকেনিয়ন্ত্রণে না থাকলে সমূহ বিপদ- দাবানলে পরিণত হয়ে নিমেষে সব কিছু পুড়িয়ে ছারখার করে ছাইভস্মে পরিণত করবে ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions