Home » » দুধ

দুধ

দুধ (Milk) / মিল্ক / দুগ্ধ

দুধ :

দুধ হলো দুগ্ধবৎ (lacteal) নিঃসরণ যা বস্তুত কোলস্ট্রাম (colostrum) মুক্ত। এই নিঃসরণ একাধিক স্বাস্থ্যবতী গাভীর পূর্ণ দোহন থেকে পাওয়া যায়। এর মধ্যে কমপক্ষে ৮,২৫% কঠিন দুধ (milk solid যা স্নেহজাতীয় পদার্থ নয়) এবং নিদেনপক্ষে ৩.২৫% স্নেহজাতীয় পদার্থ রয়েছে। স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে মানুষ গরুর দুধকে খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করে। দুগ্ধ শিল্পের সরবরাহের অধিকাংশ দুধ মানুষ ব্যবহার করে থাকে। অবশ্য অন্য উৎস থেকে পাওয়া দুধ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে যেমন, ছাগল, মহিষ এবং বলগা হরিণের দুধও অন্য দেশে পানীয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বিনা শর্তে, সাধারণ সংজ্ঞা হিসাবে দুধ বলতে গরুর দুধকেই বোঝানো হয়।

গড়পড়তায় দুধের উপাদানের ৮৭% পানি, ৩,৭% স্নেহজাতীয় পদার্থ, ৩.৫% আমিষ, ৪,৯% ল্যাকটোজ (lactose) এবং ০.৭ছাই  (ash)। সম্পূর্ণ দুধ এবং সরু-তোলা দুধ (skim milk) ক্যালসিয়াম  (calcium), ফসফরাস (phosphorous) এবং রাইবোফ্লাবিন (riboflavin) প্রাপ্তির ভালো উৎস হিসাবে বিবেচিত হয়। কারণ, প্রতিদিনকার শতকরা ১০ ভাগ পুষ্টি চাহিদার ১০০ কিলোক্যালরি (৪২০ কিলোজুল) এ উৎস থেকে পাওয়া যায়। এই দুই ধরনের পানীয়তে যথেষ্ট পরিমাণে আমিষ ও থায়ামিন (thiamine) থাকে এবং সম্পূর্ণ। দুধে বেশ কিছু পরিমাণ ভিটামিন-এ (vitamin-A) থাকে। ভালো  পুষ্টিমানের উৎস হিসাবে চিহ্নিত করতে হলে এতে ১০% অর্থাৎ ২০০  কিলোক্যালরি (৮৪০ কিলোজুল) পুষ্টির প্রয়ােজন। দুধে যথেষ্ট পরিমাণে আমিষ অর্থাৎ প্রয়ােজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে।

দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ (Processing) : সাধারণ খামারের। দুধ ক্রমাঙ্কিত (calibrated) এবং স্টেনলেস স্টিলের হিমায়ন যন্ত্রে ভরে ট্রাকের সাহায্যে দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্লান্টে পাঠানো হয়। কাচা। দুধ পৃথককরণ বা শোধনের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়। এই যন্ত্রগুলো বস্তুত একই রকমের তবে শোধনযন্ত্রের বেলায় সর এবং সর-তোলা দুধের পৃথককরণ করা যায় না। অনেক দুধ প্রক্রিয়াজাত করণ কারখানায় একমাত্রা সংবলিত প্রমিতকারক শোধনযন্ত্র রয়েছে। যা দিয়ে সম্পূর্ণ কাঁচা দুধ থেকে সামান্য পরিমাণ স্নেহজাতীয় পদার্থ। আলাদা করা হয়ে থাকে। এভাবে এই পদার্থ সংগ্রহের পরিমাণ। নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে কাঁচা দুধের বিভিন্ন উপাদানের। তারতম্য থাকলেও নির্দিষ্ট স্নেহজাতীয় পদার্থ মানের দুধ তৈরি করা। সম্ভবপর হয়। পাস্তুরায়ণ দ্বারা রোগ উৎপাদক ব্যাকটেরিয়া থেকে দুধকে মুক্ত করা যায়। দুধের প্রতিটি কণাকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট। সময়ের জন্য রেখে এই প্রক্রিয়া কার্যকর করা হয়।

তরল দুগ্নবস্তুর স্নেহজাতীয় পদার্থের দানাসমূহকে সমসত্ত্বকরণ।  পদ্ধতিতে দুই মাইক্রোমিটার বা এর চেয়ে কম সাইজে পরিণত করা। হয় যাতে করে সেগুলো তুলনামূলকভাবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা। প্রভাবান্বিত না হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য সেবা (U.s. Public Health Service) সংস্থার মতে সমসত্ত্বকারী দুধের এক-চতুর্থাংশের উপরের ৬ ইঞ্চি (১০০ মিলিলিটার) ৪৮ ঘণ্টা রেখে দিলে শতকরা ১০ ভাগের চেয়ে বেশি তারতম্য হয় না।

এক-চতুর্থাংশ দুধে ভিটামিন-ডি (Vitamin-D) ৪০০ আন্তর্জাতিক মাত্রায় (JU) সংরক্ষণ করা হয়। অন্যদিকে সর-তোলা দুধে এক চতুর্থাংশ পরিমাণে ভিটামিন-এ ২০০০ আন্তর্জাতিক মাত্রায় সংরক্ষিত করা হয়ে থাকে। এই ঘনীভূত ভিটামিন পাস্তুরীকরণের আগে চলমান দুধ-প্রবাহে কিংবা নির্দিষ্ট পরিমাণে দুধে মিশ্রিত করা দুগ্ধজাত বস্তু (Products) : গাজন প্রক্রিয়াজাত কিংবা পরীক্ষিত নানাবিধ দুগ্ধ সামগ্রী এখন পাওয়া যায়। এই গজন প্রক্রিয়ার জন্য ব্যাকটেরিয়ার প্রয়ােজন হয় যা ল্যাকটোজ (lactose) বা দুধচিনি (milk sugar) তৈরি করে।

আবাদি মাখনে সর-তোলা দুধ বা নিম্নমাত্রার স্নেহজাতীয় দুধ থাকে যা পাস্তুরীকরণের সময়ে ৮২° সে. তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট রাখার পর ২২° সে. তাপমাত্রায় রাখা হয়। এ পর্যায়ে এই দুধ আবাদের 723 Streptococcus lactis 430 Leuconostoc citrovorum উৎস প্রক্রিয়াকরণের জন্য যােগ করা হয়। এই মিশ্র দুগ্ধবস্তু ২১ সে, তাপমাত্রায় ইনকিউবেটরে রাখা হয়। পরবর্তীতে ঠাণ্ডা করার সময়ে এই দুধ অনুমানিক ০.৮%, অম্লত্ব (acidity) প্রাপ্ত হয়। এই সান্দ্র (vicous) বস্তু নেড়ে, প্যাকেটে ভরে, ঠাণ্ডা করা হয়। এতে L. citrovortam-এর সহায়তায় diacetyl করা হয় এবং প্রয়ােজনীয় বাষ্পীয় সুগন্ধির মিশ্রণ ঘটানো হয়।

জানামতে গাজনকৃত প্রাচীনতম দুধ হলো দই (yogurt) সম্পূর্ণ বা কম স্নেহজাতীয় পদার্থসহ দুধের সাথে স্নেহজাতীয় পদার্থবর্জিত দুধ মিশিয়ে দই তৈরি করা হয়। এটি তৈরি করতে ৮২° সে, তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট রেখে দুধকে সমসত্ত্বকরণ

(homogenized) করে ৪৬ সে.-এ সক্রিয় আবাদের মাধ্যমে তা মােড়কবদ্ধ (packaged) করা হয়। দই-আবাদ Streptococcus thermophilus এবং Lactobacillus bulgaricus ১:১ অনুপাতিক মিশ্রণে করা হয়। এই দুই প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার মিশ্রণ আবাদ দইএর মান ঠিক রাখার জন্য দরকার।

ঘন এবং শুকনো দুগ্ধজাতীয় উৎপন্ন দ্রব্য : পরিবহন খরচ কমানো ও নাড়াচাড়ার সুবিধার্থে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে দুধ থেকে। পানি সরিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়া আংশিকভাবে শুকননা দুধের নানাবিধ দুগ্ধজাতীয় বস্তু জীবাণুমুক্তকরণ বা হিমায়িত সংরক্ষণ ছাড়াও। দীর্ঘদিন রেখে দেওয়া হয়। এই নির্দিষ্ট কারণে দুধের নানা ধরনের দ্রব্য (যেমন, শুকনো সম্পূর্ণ দুধ, বাপাকার দুধ, জমানো দুধ) প্রস্তুত করা হয়। এই ধরনের কিছু সংযােজিত দুগ্ধজাত দ্রব্যের নিজস্ব মানগত পরিচয় রয়েছে। এছাড়া বাণিজ্যিক ক্রেতার অনুরোধেও নানা ধরনের দুধের জিনিস বানানো হয়ে থাকে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *