Home » » মিনারেল কি

মিনারেল কি

মিনারেল কি?  / Mineral / মণিক

মিনারেল কি :

একটি প্রাকৃতিক বস্তু। মণিকের বৈশিষ্ট্যময় রাসায়নিক গঠন থাকে যা রাসায়নিক সংকেত দ্বারা প্রকাশ করা যায়। যদিও কয়লা ও তেলের মতো জৈব পদার্থগুলোকে সাধারণত খনিজ সম্পদের মধ্যে তালিকাভুক্ত করা হয় তবুও এইসব বস্তু কিন্তু মণিক নয়। কারণ এইসব পদার্থের কোনো সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক গঠন থাকে না এবং এরা এক প্রকারের জটিল মিশ্রণ। মণিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। অধিকাংশ ধাতু ও অজৈব রাসায়নিক দ্রব্য এবং মানুষের জন্য অপরিহার্য অনেক বস্তু মণিক থেকে উদ্ভূত। মৃত্তিকা প্রধানত মণিক দিয়ে গঠিত এবং এই মৃত্তিকার উপর বনভূমি ও কৃষিখামার নির্ভরশীল।

প্রাপ্তিস্থান : মণিক স্বতন্ত্র কেলাস হিসাবে থাকতে পারে বা অন্য কোনো মণিক বা শিলাতে ছড়িয়ে থাকতে পারে। পৃথিবীপৃষ্ঠের শিলাতে অধিকাংশ মণিক বিদ্যমান থাকে। কোনো কোনো উন্মুক্ত স্থানের পৃষ্ঠে মণিকগুলো সংযোজিত থাকতে পারে। জিয়োড (geode) হলো শিলার এ গহ্বর এবং গহবরের পৃষ্ঠে মণিক থাকে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে গহ্বরগুলো সম্পূর্ণরূপে মণিক দ্বারা পূর্ণ থাকে। বিভিন্ন আকারের শিরা ও ফাটল এক বা একাধিক মণিক দ্বারা পূর্ণ। থাকে। আকরনালি বা ধাতুনালি (lode) শব্দটি কোনো নির্দিষ্ট এলাকার একটি শিরা বা শিরার গ্রুপ বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। আকর-খাদের (gangue) মণিকগুলো মূল্যহীন মণিক, কিন্তু মূল্যবান। মণিক বা আকরিকের সঙ্গে অবস্থান করে। যেসব মণিক থেকে ধাতু পাওয়া যায় সেইসব মণিকের জন্য আকরিক শব্দটি ব্যবহার করা হয়। স্রোতজাত (placer) মণিকগুলো তুলনামূলকভাবে ভারি ও দীর্ঘস্থায়ী মণিকের সমাহরণ। এইসব মণিক পানির দ্বারা পরিবাহিত হয়, কিন্তু পানির বেগ হ্রাস পাওয়ার কারণে পুনঃঅবক্ষেপিত হয়।

মণিকের নাম : সাধারণত মণিকগুলোর একটি রাসায়নিক নাম ও একটি মণিক নাম থাকে। প্রকৃতিতে প্রাপ্ত লেড সালফাইডকে গ্যালেনা এবং সোডিয়াম ক্লোরাইডকে হ্যালাইট বলা হয়। বর্তমানে মণিকের নামকরণে শব্দের শেষে ite যোগ করা হয়। কোনো কোনো মণিকের নামে রাসায়নিক গূঢ়ার্থ থাকে; যেমন—মলিবডেনাইট, Mos, এবং জিঙ্কাইট ZnO। ম্যাগনেটাইট, গ্রাফাইট, রোডোনাইট (গোলাপি রং) এবং ক্রায়োলাইটের (বরফ পাথর) নামকরণ এদের ভৌত ধর্মাবলির উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। কোনো কোনো মণিকের একাধিক নাম থাকে যেমন কোয়ার্টজের জন্য অ্যামিথিস্ট, অ্যাগেট ও জেপসার শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়। মণিকের নামকরণে কথ্য শব্দও ব্যবহার করা হয়, যেমন—পিরাইটের নাম fool's gold বা বোকার সোনা। 

শ্রেণিবিন্যাস : মণিকের শ্রেণিবিন্যাস মূলত রাসায়নিক গঠনের ভিত্তিতেই করা হয়। এছাড়া সমরূপতা বা কেলাসিত আকারের সদৃশতার ভিত্তিতেও মণিকগুলোকে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়ে থাকে। মণিকের ক্ষেত্রে ঋণাত্মক আয়নের চেয়ে ধনাত্মক আয়নের তাৎপর্য সাধারণত কম ।

মণিক শ্রেণিবিন্যাসের প্রধান গ্রুপগুলো হলো :

মিনারেল

গ্রুপ : মণিকের যে কোনো পূর্ণাঙ্গ শ্রেণিবিন্যাস অবশ্যই রাসায়নিক গঠনের উপর ভিত্তিশীল হতে হবে। তৎসত্ত্বেও, মণিকের কিছু সীমিত গ্রুপ বিশেষ উদ্দেশ্যে আকর্ষণীয় হতে পারে। উৎপত্তি, অবস্থানের প্রকার, সুনির্দিষ্ট ভৌত ধর্মাবলি বা ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে এ ধরনের গ্রুপ করা যেতে পারে।

প্রাথমিক মণিকগুলো ম্যাগমা থেকে তৈরি হয়। এদের উৎপত্তির সঙ্গে পেগমাটাইট ও উষ্ণজলীয় দশাও বিজড়িত। অন্যান্য মণিক অণুসভৃত (secondary)। শিলা গঠনকারী মণিক দিয়ে আগ্নেয়, পাললিক এবং রূপান্তরিত শিলার অধিকাংশই তৈরি হয়। উদাহরণস্বরূপ, শিলা গঠনকারী মণিক কোয়ার্টজ, ফেল্ডম্পার ও মাইকা গ্রানাইট নামক আগ্নেয় শিলাতে পাওয়া যায়। এইসব মণিককে অত্যাবশ্যকীয় মণিক বলা হয়। অন্যদিকে, পিরাইট, জিরকন বা অ্যাপাটাইট কখনো কখনো গ্রানাইটে পাওয়া যায় এবং এইসব মণিককে আনুষঙ্গিক (accessory) মণিক বলা হয়। কোনো সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক গ্রুপ দ্বারা মণিক তৈরি হলে একে মণিকের শ্রেণি বলা হয়, যেমন—কার্বনেট, সালফেট বা অক্সাইড। সমরূপী গ্রুপের সদস্যরা সুস্পষ্টভাবেই সমরূপী; যেমন—গারনেট গ্রুপ। রাসায়নিক ও ভৌত সদৃশতা সংবলিত অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত মণিক নিয়ে মণিক পরিবার গঠিত। কিন্তু একই পরিবারের মণিকগুলো সমরূপী হতে হবে এমন কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই। যেমন—ফেল্ডম্পার বা পাইরোক্সিন।

যেসব মণিকের অর্থনৈতিক গুরুত্ব আছে তাদেরকে অর্থনৈতিক মণিক বলা হয়। ধাতব (আকরিক মণিক) এবং অধাতব উভয় প্রকারের মণিক অর্থনৈতিক মণিকের অন্তর্ভুক্ত, যেমন—ক্রায়োলাইট ও সালফার এবং রত্ন মণিক। এঁটেল মণিকগুলোর মধ্যে পার্থক্য থাকলেও এদের কিছু সাধারণ ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম আছে। এসব মণিক সূক্ষ্ম দানাদার, ভেজা অবস্থায় নমনীয় কিন্তু শুকালে পােড়ালে শক্ত হয়ে যায়। এই মণিকগুলো প্রধানত অ্যালুমিনিয়ামের হাইড্রাস সিলিকেট।

স্থিতিশীল মণিকগুলো অদ্রবণীয় ও শক্ত হওয়ার কারণে ভৌত ও রাসায়নিক অবক্ষয়রোধী। স্রোতজাত এবং সৈকত বালি থেকে সংগৃহীত মণিকগুলো হলো ভারি মণিক। ভারি মণিকগুলোর আপেক্ষিক গুরুত্ব অনেক বেশি বা এদেরকে ল্যাবরেটরিতে অভিকর্ষ পদ্ধতিতে পৃথক করা যায়। কৰ্করীয় (detrital) মণিকগুলো অপরিবর্তিত অবস্থায় বিদ্যমান শিলার খণ্ডিতাংশ। অনুজাত (authigenic) মণিকগুলো উৎপত্তিস্থলেই বিদ্যমান থাকে, কিন্তু বিস্থানীয় (allogenic) মণিকগুলো অন্যস্থান থেকে পরিবাহিত হয়ে আসে।

একই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন ও নিবিড় সম্পর্কিত মণিক নিয়ে মণিক দল (mineral association) গঠিত। মণিক ক্রম বলতে অনুক্রমিক ধাপে উৎপন্ন অনুষঙ্গী মণিক দ্বারা গঠিত সিরিজকে নির্দেশ করা হয়। মণিক সমষ্টি (mineral suite) একটি সাধারণ শব্দ যা দ্বারা (১) কোনো একটি অবক্ষেপে বিদ্যমান অনুষঙ্গী মণিকের গ্রুপ; (২) কোনো নির্দিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিত্বকারী একটি গ্রুপ; এবং (৩) পার্থক্য প্রদর্শনকারী মণিক নমুনার একটি গ্রুপ, যেমন—একক মণিক স্পিসিসে রং বা আকারের পার্থক্য বুঝানো যেতে পারে। 

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *