অনুধাবন অর্থ / Perception / উপলব্ধি / বোধ/ মালুম
অনুধাবন অর্থ
শরীরের অনুভূতি গ্রাহক ইন্দ্রিয়সমূহ বস্তু কিংবা কোন ঘটনা দেখে বা শুনে এর দ্বারা উদ্দীপিত হওয়ার ফলে ব্যক্তি যে পরিপক্ক মানসিক আচরণ বা বোধ বা চৈতন্য বা অভিজ্ঞতা অর্জন করে তাকে অনুধাবন বা উপলব্ধি (perception) বলে। এ সকল উদ্দীপনা বিশেষ ধরনের গ্রাহক কোষের সাহায্যে স্নায়বিক বার্তায় রূপান্তরিত হয় এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে তা পৌছে প্রক্রিয়াজাত হয়। সম্ভবত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রক্রিয়াজাত হলেই উপলব্ধি করা সম্ভবপর হয়। কারণ অনেক সময় বাইরের উদ্দীপনা ব্যতীত অনেক অভিজ্ঞতা অনুধাবন করা সম্ভব হয়। যেমন- স্বপ্নে বিভিন্ন অনুভূতি অনুধাবন করা।
বর্তমান মনস্তত্ত্বে শুধু ইন্দ্রিয়ানুভূতির উপর গুরুত্ব আরোপ না করে কোনো বস্তু কিংবা ঘটনা অনুধাবন করার প্রক্রিয়া কৌশলের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এ দুই ক্ষেত্রে তেমন কোনো ব্যবস্থা দ্বারা সম্পন্ন হয়; আর উপলব্ধি মস্তিষ্কের একটি উচ্চস্তরের প্রক্রিয়া।
কোনো বস্তু কিংবা ঘটনার অনুধাবন শুধু দর্শনেন্দ্রিয় দ্বারা সম্পন্ন হয় না, অন্যান্য ইন্দ্রিয়ও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেমন—ত্বক থেকে স্পর্শানুভূতি, অস্থিসন্ধি থেকে শুন্যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের তুলনামূলক অবস্থানের অনুভূতি, ইত্যাদি। শরীরের অবস্থানের অনুভূতি বিশেষত কেউ স্থির অবস্থায় আছে, নাকি চলন্ত অবস্থায় আছে তার অনুভূতি অন্তঃকর্ণের ভেস্টিবুলার অঙ্গ থেকেও মস্তিষ্কে যায়। শ্রবণানুভূতি শব্দের উৎসের অবস্থান এবং শব্দের প্রকৃতি সম্পর্কেও ধারণা দেয়। স্বাদ, গন্ধ, ব্যথা এবং উষ্ণতার অনুভূতি বিশেষ গুণ নির্দেশক হলেও তা দর্শন, শ্রবণ কিংবা স্পর্শানুভূতির মতো অনুধাবন সহায়ক নয়। মোটের উপর কোনো বস্তু উপলব্ধি করতে হলে তা এমন হতে হবে যেন দূরত্ব, কৌণিক অবস্থান কিংবা দর্শকের নড়াচড়ার জন্য ব্যাহত না হয়। যেমন--কোনো বস্তুর আকার সম্পর্কে যখন অনুধাবন করা হয় তখন তা কাছে কিংবা দূরে (অবশ্য অতি দূরে থাকলে অন্য কথা) যেখানেই থাকুক না কেন একই রকম মনে হয়। একটি বৃত্তাকার বস্তুকে যেদিক থেকেই দেখা হোক না কেন, সেটাকে বৃত্তাকার হিসাবে অনুধাবন করতে তেমন অসুবিধা হয় না।
উপলব্ধি করার ক্ষমতা কি জন্মগত, নাকি অতীত অভিজ্ঞতা দ্বারা নির্ধারিত, এ সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে। অনেকে মনে করেন। বিবর্তন প্রক্রিয়ায় অনুধাবন করার ক্ষমতা জন্মগতভাবে অর্জিত হয়। এবং স্নায়ুতন্ত্র পরিণত হলেই অনুধাবন সক্ষমতা জন্মায়। আর। অনেকে মনে করেন, অনুধাবন ক্ষমতা এক প্রকার শিক্ষা প্রক্রিয়ার ফল। বহু বছর যাবৎ এ সম্পর্কে বিস্তর গবেষণা হলেও এ বিতর্কের অবসান হয় নি। বর্তমানে মনে করা হয় কতকগুলো বিষয় অনুধাবন। করার ক্ষমতা জন্মগতভাবে অর্জিত; আর কতকগুলো ক্ষেত্রে অতীত অভিজ্ঞতা বা শিক্ষা অনুধাবনের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন। করে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions