Home » » পেপটিক আলসার

পেপটিক আলসার

Peptic ulcer / পাকস্থলীর ঘা / পেপটিক আলসার

পেপটিক আলসার

পরিপাকনালির যে অংশ অ্যাসিড -পেপসিনের সংস্পর্শে আসে তার  ঝিল্লি পর্দায় কোনো ক্ষত বা ঘা পেপটিক আলসার নামে পরিচিত। এ ধরনের ঘা সাধারণত ঝিল্লির নিচের পেশিশুর (muscularis mucosa) ভেদ করে যায়। যে সকল ক্ষত পেশিস্তর ভেদ করে না,  তা ঝিল্লিপর্দার ক্ষয় (gastric erosion) নামে পরিচিত।  ডিওডেনামের প্রথম অংশ এবং পাকস্থলীতে পেপটিক আলসার

সবচেয়ে বেশি হয়। তবে খাদ্যনালির নিচের অংশে, জেজুনামের  প্রথম অংশে (গ্যাস্ট্রো-জেজুনস্টমি অপারেশনের পরে) এবং মেকেলের ডাইভার্টিকুলামে (Meckel's diverticulum) এ রকম ঘা হতে পারে।

বাংলাদেশে পেপটিক আলসার রোগের প্রকোপ খুবই বেশি। পনেরো বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সী লোকদের শতকরা ১২ জন ডিওডেনাল আলসার এবং ৩.৫% গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগে  ভুগছে। মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের পেপটিক আলসার বেশি হয়। উন্নত দেশগুলোতে বিশ শতকের শুরুর দিকে ডিওডেনাল আলসারের চেয়ে গ্যাস্ট্রিক আলসারের প্রকোপ বেশি ছিল। কিন্তু এখন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশেও ডিওডেনাল আলসারের প্রকোপই তুলনামূলকভাবে বেশি।

পেপটিক আলসার কেন হয় তা সঠিক জানা যায় নি। অনেকে  এ রোগের সঙ্গে বংশগতির একটি সম্পর্ক পেয়েছেন। পেপটিক  আলসারের রোগীর নিকট আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ বেশি। যাদের রক্তের গ্রুপ ‘ও’ (Blood group O) তাদের এ রোগ বেশি হয়। অ্যাসপিরিন জাতীয় ব্যথার ওষুধ খেলে অনেক ক্ষেত্রে (৩০%) গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়। এ ছাড়া স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের কারণেও এ রকম হতে পারে। ধূমপায়ীদের পেপটিক আলসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। শুধু তাই নয়, ধূমপান করলে পেপটিক আলসার সারতে অনেক দেরি হয়। পেপটিক আলসারের কারণ হিসাবে কোনো খাদ্য কিংবা মানসিক অবস্থার বিশেষ কোনো সম্পর্ক প্রমাণিত হয় নি।

তবে পেপটিক আলসারের কারণ হিসাবে আজকাল Helicobacter pylori নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ামকে মূলত দায়ী করা হচ্ছে। এটা শুধু পেপটিক আলসারই সৃষ্টি করে তাই নয়, এরা পাকস্থলীতে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্যও দায়ী। পেপটিক আলসারের কারণ হিসাবে এই ব্যাকটেরিয়ামকে শনাক্ত করার পর অনেকেই  এটাকে একটি সংক্রামক ব্যাধি হিসাবে গণ্য করতে শুরু করেন এবং

এ নিয়ে বেশ তােলপাড় সৃষ্টি হয়। কারণ পৃথিবীর শতকরা ৬০ ভাগ মানুষের পাকস্থলীতেই এ ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে ৯০ ভাগ লোকের পাকস্থলীতে হেলিকোব্যাকটার সংক্রমণ রয়েছে। বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সীদের ৮০% এবং বয়স্কদের ৯০% এই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত।

পেপটিক আলসার রোগ হলে সাধারণত উপরের পেটে ব্যথা হয়। এই ব্যথার সঙ্গে খাদ্যের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আহার করলে কিংবা অ্যান্টাসিড বড়ি চুষলে ডিওডেনাল আলসারের ব্যথা কমে যায়। তবে গ্যাস্ট্রিক আলসারের ব্যথা সাধারণত আহারের পরে বেড়ে যায়। অনেক ডিওডেনাল আলসারের রোগীর ভোরের দিকে তীব্র পেটব্যথার কারণে ঘুম ভেঙে যায়। পেটে ব্যথা ছাড়া অনেকের বমি বমি ভাব, বমি কিংবা ক্ষুধামন্দা থাকে। কেউ কেউ পেপটিক। আলসারের ক্ষত থাকা সত্ত্বেও এর কোনো লক্ষণ-উপসর্গ একেবারেই টের পায় না।


আপাতদৃষ্টিতে পেপটিক আলসার একটি সাধারণ রোগ হলেও এর জটিলতা অত্যন্ত গুরুতর, যেমন : 

(১) পেপটিক আলসারের ফলে পাকস্থলীর রক্তনালি ফুটো হয়ে মারাত্মক রক্তবমি ও কালো পায়খানা হতে পারে, 

(২) পাকস্থলী ফুটো হয়ে যেতে পারে এবং 

(৩) উপযুক্ত চিকিৎসা না করলে দীর্ঘমেয়াদে পাকস্থলীর পাইলোরাস। কিংবা ডিওডেনামের শুরুর অংশ সরু হয়ে খাদ্য যাওয়ার পথ একেবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে যা পাইলোরিক স্টেনোসিস (pyloric stenosis) নামে পরিচিত।


পেপটিক আলসার চিকিৎসার লক্ষ্য মূলত তিনটি : 

(১) রোগের লক্ষণ উপসর্গের উপশম করা, 

(২) পাকস্থলী কিংবা ডিওডেনামের ক্ষত নিরাময় করা, এবং 

(৩) পুনরায় পেপটিক আলসার হওয়া এবং এর জটিলতা প্রতিরোধ করা। 

H. pylori দ্বারা সংঘটিত পেপটিক আলসারের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন রকম অ্যান্টিবায়ােটিক কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। 

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *