মসজিদের ঝাড়ুদার এক বৃদ্ধা নারী
আবু হুরায়রা (রা:) প্রশ্ন হতে বর্ণিত। একজন গাঢ়কৃষ্ণকায় মহিলা মসজিদ ঝাড়ুু দিতেন। এজন্য আল্লাহর রসূল (সা:) তাকে পছন্দ করতেন ও তার খোঁজ খবর নিতেন। কেউ একজন এসে রসূল -কে বললেন, ঐ মহিলা মারা গেছেন। তিনি প্রশ্ন করলেন তোমরা কেন আমাকে জানাওনি? এ প্রশ্নের মাধ্যমে এমন একটি অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন যে, তারা হয়ত উক্ত মহিলার ঝাড়ুু দেয়ার কাজকে তুচ্ছ ভাবত। তিনি বললেন : আমাকে তার কবরে নিয়ে চল। তখন তারা তাকে তার কবরের কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি তার জন্য দুয়া করলেন। এরপর জানালেন, এ কবরস্থানের অনেক কবরবাসীর কবর সম্পূর্ণ অন্ধকারে (আযাবে) নিমজ্জিত ছিল। মহান আল্লাহ রব্বল আলামীন তাদের জন্য আমার দুয়ার মাধ্যমে স্বীয় রহমত বর্ষণ করত: আলোকিত করেছেন। আবু সাঈদ খ বর্ণনা করেন যে, উক্ত মহিলা অতি কৃষ্ণকার ছিলেন। তিনি রাতে মারা যান আর রসূলকে সকালে তার মৃত্যুর খবর দেয়া হয়েছিল। তিনি প্রশ্নকরে বলেন, “কেন আমাকে তোমরা তার মৃত্যুর খবর জানাওনি?” তিনি তার সাহাবীদেরকে নিয়ে যান ও তার কবরের পার্শ্বে দাড়ান। তিনি আল্লাহু আকবার বলে অনেক্ষণ ধরে দু’য়া করেন। অন্যরা তার পিছে একইভাবে থাকেন তিনি দীর্ঘক্ষণ দুয়া করে ফিরে আসেন। ইবনে আব্বাস হিন্দ বলেন, রসূলুল্লাহ বলেন: আমি ঐ মহিলাকে জান্নাতে মসজিদ হতে ময়লা ঝাড়ু দিতে দেখেছি।
মানবতার মহান নেতা নবী মুহাম্মদ (সা:) এ প্রকার একজন মহিলা যিনি তার ঝাড়ু দেয়ার কাজ করতেন তাকে সর্বশেষ স্তরের স্থানে সমাসীন করলেন? তিনি কতটাই সচেতন ছিলেন যে ঐ মহিলার অনুপস্থিতিতে যিনি মসজিদ ঝাড়ু দিতেন তিনি তার সম্পর্কে প্রশ্ন করে বসলেন? কি মহানুভবতা তাকে তার সাহাবীদেরকে অভিযোগ করালেন যে তোমরা আমাকে না জানিয়ে কেন তাকে কবর দিলে? কি জিনিস বাধিত করেছে তাঁকে যাওয়ার জন্য তাও একাকী নয় বরং তাঁর সাহাবীগণসহ একটি দল এবং তার কবরের পার্শ্বে দাড়িয়ে তার নাজাতের জন্য, তার কাজের প্রতি অনুমোদন প্রকাশ করার জন্য দুয়া করতে কি অনুভূতি তাকে উৎসাহিত করেছে? নেতার পক্ষ হতে সাহাবীর এ দলটির অন্তরে কি মহানুভূতির প্রেরণা তিনি যুগিয়েছেন যেটি তার অবর্তমানে নেতৃত্বের চরিত্রের প্রশিক্ষণ কি প্রদান করা ছিল না? কেন এ মহিমান্বিত মহিলাকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করে আনন্দিত করাল? এটা কি মহানুভবতা প্রকাশের ছোটখাট স্থর? তিনি ছিলেন একজন মহিলা যিনি তার নিজেকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন ও তার ঘরের খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন, এটি তাকে মহান করে উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
তার চেহারাগত কদার্জতা ও বার্ধক্যজনিত বয়স থাকা সত্ত্বেও নিজেকে মসজিদের কাজে এমনভাবে আত্মনিয়োগ করে রেখেছিলেন যেখানে মানুষের পক্ষ হতে কাজের স্বীকৃতি বা প্রশংসার প্রতি ভ্রুক্ষেপ ছিল না। মহান শিক্ষক ও পথ নির্দেশক রসূলুল্লাহ মসজিদের দিকে আসা-যাওয়া করতেন তখন এ পূণ্যবতী মহিলার একাগ্রচিত্রে অত্যন্ত প্রাণবন্তভাবে যে মসজিদ ঝাড়ু দেয়ার কাজ করতেন তা তিনি দেখতেন। তিনি তার এ মহান ইবাদতের প্রতি খুবই সন্তুষ্ট হতেন ও আত্মতৃপ্তি পেতেন। বস্তুতঃ এটা এমনই একটি বিষয়, যার প্রতি খুব কম সংখ্যক মানুষই গভীরভাবে উপলব্ধি করে। আর পূর্ণাত্মা-মহিলা তার কাজ প্রতিনিয়ত মসজিদে আসাযাওয়ার মধ্য দিয়ে একান্ত ইবাদতের নিয়তেই করতেন।
আল্লাহ রব্বল আলামীন জান্নাতের আটটি দরজা তার বান্দাদের কাজের স্তর ভিত্তিক স্বীকৃতি প্রদানের জন্য তৈরী করেছেন। একাগ্রতা ও ঐকান্তিকতা দিয়ে যা মাপা হবে। উক্ত মহিলা এমনই কাজ তিনি সম্পন্ন করতে পেরেছেন যার মাধ্যমে তার জন্য জান্নাতের সকল দরজা উন্মুক্ত হয়েছে ও নবীজী তাকে জান্নাতে মসজিদের ঝাড়ু দিতে দেখেছেন। সুতরাং তার সমাপ্ত ছিল অত্যন্ত চমৎকার। আর প্রতিটি মানুষ তার শেষ কর্ম দিয়েই আখিরাতের প্রতিফলের সম্মুখীন হবেন। ঐ মহিলা তার কাজ সুচারুরূপে সুসম্পন্ন করেছেন ও তার জীবনের শেষ সময় আল্লাহর মহান ঘর নবীর মসজিদ পরিষ্কারের কাজে অতিবাহিত করেন।
এ কারণে মহান নেতা রসূলুল্লাহ -এর পক্ষ হতে যথাযথ প্রতিদানও পেয়েছেন। আর তা হলো তাঁর জান্নাতে পদচারণ। আর ঐ মসজিদের মহান ইমামের পক্ষ হতে তার প্রতি তাঁর মসজিদ পরিচ্ছন্নতা কাজের পরম স্বীকৃতি ও প্রতিদান। আর তাহলে তিনি স্বয়ং ও তাঁর সাহাবীগণকে নিয়ে তার কবরের কাছে যেয়ে তার জন্য একান্তভাবে দীর্ঘক্ষণ ধরে ঐরূপভাবে দুয়া ও প্রার্থনা করেছেন ও ঐ মহিলার সর্বশেষ আকাঙ্খা, জান্নাতে যাওয়া যা যথাযথ পেয়েছেন তার সুসংবাদ প্রদান করেছেন।
হাদীসের শিক্ষা
রসূলুল্লাহ এর গভীর মনোযোগ এমনই, একটি অতি সাধারণ ঝাড়ুদার মহিলার প্রতি ছিল, যাকে তিনি অত্যন্ত মূল্যায়ন করেন ও যথাযথ সম্মানে আসীন করেন।
রেফারেন্স:
মুসলিম : হাদীস-১৬৪৮
ইবনে মাজাহ, কবর জিয়ারত অধ্যায় হাদীস নং ১৫৩৪
মাজমা আল-জওয়াইদ ২/১৩, তাবারানী।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions