Home » » রসায়ন ল্যাব আপনার বাড়িতেই আছে! জেনে নিন কিভাবে?

রসায়ন ল্যাব আপনার বাড়িতেই আছে! জেনে নিন কিভাবে?

রসায়ন ল্যাব আপনার বাড়িতেই আছে! জেনে নিন কিভাবে?

রাসায়নিক দ্রব্যের কথা উঠলেই আমরা মনে করি একটি ল্যাবরেটরির কথা অথবা শিল্প কারখানার কথা। অথচ আমাদের বাড়িতে রান্নাঘরে, গোসলখানায় অথবা এমনি অন্য জায়গায় যেসব দ্রব্য আমরা নিত্য ব্যবহার করছি তাদেরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পরিচয় রয়েছে। অনেক সময় আমরা বাইরের রসায়ন সম্বন্ধে বেশ কিছু জেনেও বাড়ির রসায়নকে সেভাবে চিনতে পারি না। আজ তাই এমনি কিছু সাধারণ জিনিসের খবর নেওয়া যাক।

রসায়নের কথা বলতে এসিডের কথাটি আগে মনে আসে। এমনি একটি এসিড আমাদের রান্নাঘরে প্রায়ই মজুদ থাকে, সেটি সিরকা বা ভিনেগার—এসেটিক এসিড। অবশ্য মারাত্মক সবকিছু ক্ষয়কারী যে সব এসিড রয়েছে এটি সে রকম খনিজভিত্তিক এসিড নয় সালফিউরিক বা নাইট্রিক এসিডের মত। এটি নেহাৎ গোবেচাৱা পাতলা জৈব এসিড। তবে এসিডের সব রকম গুণ এর মধ্যেও বর্তমান—তাইতো এর সাহায্য চমৎকার জারানো যায় পেঁয়াজকে কিংবা অন্যান্য নানা সবজি বা ফলকে। এমনি দুর্বল এবং নিরাপদ আরো কিছু জৈব এসিডের পরিচয় আমরা বাড়িতে বসেই পেতে পারি। লেবু আর কমলার রসে রয়েছে সাইট্রিক এসিড। কাঁচা আপেলে আছে ম্যালিক এসিড, আর আঙুরের রসে টারটারিক এসিড। এগুলোর সবই যে সত্যি এসিড তা মুখের টক অনুভূতিতেই বোঝা যায়, তা ছাড়া নীল লিটমাস কাগজকে এরা ঠিক লাল রঙে পরিবর্তিত করবে।

বাড়ির সবচেয়ে জরুরি রাসায়নিক দ্রব্যের কথাটি এখনো বলা হয়নি, সেটি লবণ। রসায়নের ভাষায় অবশ্য লবণ বলতে অনেক কিছুকেই বোঝায় -এসিড আর ক্ষারের বিক্রিয়ায় যা সৃষ্টি হয়। আমাদের রান্নাঘরের সাধারণ লবণটি একটি সোডিয়াম যৌগ সোডিয়াম ক্লোরাইড। প্রকৃতিতে এটা প্রচুর রয়েছে। আমাদের দেশের সবটুকু লবণই আমরা পাই উপকূল অঞ্চলে জমিতে সমুদ্রের পানি ঢুকিয়ে এবং ধীরে ধীরে সৌর তাপে সে পানিকে উড়িয়ে দিয়ে। নোনা পানির লবণটুকু তখন নিচে পড়ে থাকে। দুনিয়ার সর্বত্র ভিনেগার আর লবণের ব্যবহার অতি প্রাচীনকাল থেকে দেখা যায় প্রধানত এদের খাদ্য সংরক্ষণকারী এবং খাদ্যের স্বাদ সৃষ্টিকারী ভূমিকার জন্য। | লবণ ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি সোডিয়াম যৌগ আমাদের বাড়ির রসায়নের অঙ্গীভূত। ধোয়ার সোড়া বলে পরিচিত যে গুড়া বোয়া-মোছায় ব্যবহৃত হয় সেটি সোডিয়াম কার্বনেট। এটা খর পানিকে কোমল করে, তৈজসপত্রের উপর পানি থেকে বিশ্রী গাদ জমতে দেয় না। এর সোডিয়াম আয়নের সাথে খর পানির ধাতব আয়নের স্থান পরিবর্তন হয় বলেই এটা খরতা নিরসন করতে পারে। তেমনি আবার রয়েছে খাবার সোডা বা বেকিং সোড়া। এটি সোডিয়াম-বাই-কার্বনেট। কেক ও রুটি বানাতে রান্নাঘরে এটি আমরা ব্যবহার করছি। কেক বা রুটির খমীরার সাথে এটি যখন উত্তপ্ত হয় তখন এর যৌগ ভেঙে গিয়ে কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাস বেরিয়ে আসে। এই গ্যাস বুদবুদের মত আটকে পড়ে রুটিকে ফুলিয়ে তোলে। বাড়িতে কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাসের সাক্ষাৎ আমরা পানীয়ের মধ্যেও পাই- কোকাকোলা, ফান্টা ইত্যাদি সফট ড্রিংকের মধ্যে।

সোডিয়াম যৌগের আরো একটি উদাহরণ আমরা বাড়িতে বোজ ব্যবহার করছি, এটি সাবান। সাধারণত সাবান হচ্ছে সোডিয়াম স্টিয়েরেট। চর্বিকে কস্টিক সোডা অর্থাৎ সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডের সাথে সিদ্ধ করলে সাবান পাওয়া যায়। চর্বি হচ্ছে গ্লিসেরাইল স্টিয়েরেট। এই বিক্রিয়ায় এটা ভেঙে গিয়ে গ্লিসারিন আর সোডিয়াম স্টিয়েরেট অর্থাৎ সাবান গঠন করে। গ্লিসারিন নিজেও প্রায়ই আমাদের বাড়িতে স্থান পায়, শুষ্ক আবহাওয়ায় হাত মুখ ফেটে গেলে লাগাবার জন্য। সাবানের থাকে হাইড্রোকার্বন চেইনের লম্বা অণু। এর এক প্রান্ত পানিতে দ্রবণীয়, অন্য প্রান্ত তৈলাক্ত পদার্থে। ময়লা সাধারণত তেল-গ্রিজ জাতীয় পদার্থের মাধ্যমে আটকে থাকে। এ কারণেই ময়লাকে আলগা করে নিয়ে সাবান পরিষ্কার করার কাজ করতে পারে। আজকাল অনেক বাড়িতে কাপড় ধোয়ার জন্য অন্য জিনিসও থাকে যা সাবান নয়। এটি ডিটারজেন্ট। এর গঠন বিক্রিয়া অন্য রকম এবং আরো জটিল, তবে কার্য পদ্ধতির নীতি একই।

এ পর্যন্ত উল্লেখিত অধিকাংশ রাসায়নিক দ্রব্য কিন্তু বহুদিন ধরেই মানুষ দৈনন্দিন ব্যবহার করছে। এগুলো আবিষ্কৃতও হয়েছে মোটামুটি দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে; কাজে লাগতে দেখা গেছে বলেই ধীরে ধীরে এরা ব্যবহারের অঙ্গীভূত হয়েছে। কিন্তু আধুনিক আরো অনেক রাসায়নিক দ্রব্য আমাদের ঘরে স্থান পাচ্ছে যেগুলো ঠিক সেভাবে আসেনি। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে রাসায়নিক গবেষণার মাধ্যমেই এরা আবিষ্কৃত হয়েছে প্রধানত গবেষণাগারে। উদাহরণস্বরূপ, সাবান সুপ্রাচীন জিনিস, এর আবিষ্কারককে চিহ্নিত করা যায় না। কিন্তু ডিটারজেন্ট আধুনিক গবেষণার ফসল। সঙ্গত কারণেই এভাবে আবিষ্কৃত জিনিসগুলো রাসায়নিকভাবে জটিলতর।'

ঘরের রাসায়নিক দ্রব্যগুলোর কোন কোনটির কাজ ধ্বংসাত্মক—বিব্রতকর পোকা মাকড় এবং জীবাণুর বিরুদ্ধে এদের প্রয়োগ। আলমারী বা ট্রাংকে রাখা জামা কাপড়ের ভাজে ভাজে আমরা ব্যবহার করি কপূর বা ন্যাপথেলিন। এটি আলকাতরা তৈরির সময় একটি উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়। এর একটি ব্যতিক্রমী আচরণ হল কঠিন অবস্থা থেকেই সরাসরি বায়বীয় অবস্থায় চলে যাওয়া—এ জন্যই তো কপূরের মত উবে যাওয়ার কথা বলা হয়। কপূর পোকা মাকড়কে দূরে রাখে। তেলাপোকা বা মশা মাছির বিরুদ্ধে যে সব সস্তা ওষুধ আমরা বাড়িতে রাখি তার অধিকাংশই ডিডিটি দিয়ে তৈরি। এর পুরো নাম ডাই ক্লোরো ডাই ফিনাইল-ট্রাইক্লোরো ইথেন। ডিডিটি একটি দক্ষ কীটনাশক, কিন্তু সাম্প্রতিক কালে মানুষের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাবের কথা বিবেচনা করে এর ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কাজেই ডিডিটি ঘটিত কীটনাশক বাড়িতে রাখার ব্যাপারে আমাদের সাবধান হওয়া উচিৎ। আজকাল অবশ্য ঘরে ব্যবহারের জন্য অন্যান্য নানা নিরাপদ কীটনাশক পাওয়া যায়, তবে সেগুলোর দাম অপেক্ষাকৃত বেশি।

কীটনাশকের মত বিরক্তিকর জিনিসের প্রসঙ্গ থেকে এবার আমরা বাড়ির এমন কিছু রসায়নের কথায় আসি যেগুলো আমাদের সবার প্রিয়—এরা প্রসাধন সামগ্রী। এদের উন্নয়নও অনেকখানি রসায়নের কৌশলের উপর নির্ভর করে। সুগন্ধ দ্রব্য তৈরির মূল যে উপাদান সেগুলার অণু অত্যন্ত জটিল। তাই এগুলোকে প্রায়শ প্রকৃতি থেকেই সংগ্রহ করতে হয়। সাধারণত ফুল ও বিশেষ গাছের অন্য কিছু অংশ থেকে পাতনের মাধ্যমে এই উপাদান নিষ্কাশন করা হয়। এমনিভাবে প্রচুর পরিমাণে গোলাপের পাপড়ি অথবা ল্যাভেন্ডার ফুলের পাতনের ফলশ্রুতিতে আসে অতি সামান্য পরিমাণ সুগন্ধি উপাদান। এ জন্যই সুগন্ধি দ্রব্যের এত দাম।

সাধারণ সাবান যে সোডিয়াম স্টিয়েরেট সেটি আমরা দেখেছি। কিন্তু তৈরির সময় সোডিয়াম যৌগের বদলে পটাশিয়াম যৌগ ব্যবহার করে, অথবা ভিন্ন ধরনের চবি ব্যবহার করে শক্ত সাবানের বদলে নরম, জেলীর মত, তরল ইত্যাদি নানা রকম সাবান তৈরি করা সম্ভব। প্রসাধনী দ্রব্যে এরকম নানা সাবানের ব্যবহার আমরা দেখি। তরলের বদলে কঠিন সুগন্ধি তৈরিতে সাবান ব্যবহার করা হয়। শ্যাম্পুর জন্য ব্যবহার করা হয় জেলীর মত বা টলটলে সাবান। মুখে মাখার জন্য যে ফেইস ক্রিম ব্যবহৃত হয় তা আসলে বিশেষ ধরনের নরম সাবানের সাথে চর্বি বা তেল জাতীয় পদার্থের ঘুটে নেয়া মিশ্রণ।

লিপস্টিকও জৈব রসায়নের একটি অবদান। এতে তেল ও চর্বি জাতীয় জিনিসের সাথে মেশানো থাকে রঞ্জক বস্তু। তেলের অংশটুকু ঠোটের সাথে রঞ্জক বস্তু সংযুক্ত করে আর চর্বির অংশটুকু তার উপর একটি পাতলা আবরণের সৃষ্টি করে। মাখনের মত লিপস্টিকেরও ঠাণ্ডায় জমে কঠিন হওয়ার আর গরমে গলতে চাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। ট্যালকম পাউডার হল জিংক অক্সাইড, ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেট আর হেক্সাক্লোরোফিনের মিশ্রণ।

জৈব রসায়নের একটি প্রধান দ্রাবক এসিটোন আমাদের বাড়িতে আসে নখ পালিশের অংশ হিসেবে এবং নখ-পালিশ মোছার তরল হিসেবে। এসিটোন সাধারণত পেট্রোলিয়াম থেকেই তৈরি হয় এবং দ্রাবক হিসেবে এর চমৎকার উপযোগিতা। এ ছাড়া এটি খুব দ্রুত উঠে যায় বলে পালিশের রং নখের উপর চট করে শুকিয়ে বসে যেতে পারে। এতে এসিটোনের বদলে অন্যান্য কেটোন জাতীয় তরলও ব্যবহৃত হতে পারে। নখ পালিশের বিশেষ গন্ধ এদের উপস্থিতি সূচিত করে। ঘরে নখ পালিশ তোলর তরল থাকলে তা দ্রাবক হিসেবেও অন্যান্য অনেক রকম দাগ মুছতে ব্যবহৃত হতে পারে।

আজকাল কি সুগন্ধি দ্রব্য, কি কীটনাশক এদের প্রয়োগবিধিতেও কিছু উন্নয়ন। ঘটেছে। এগুলো এখন বাড়িতে আসছে স্প্রে করে এরোসল হিসেবে ছিটাবার উপযোগী হয়ে। বদ্ধ টিনের মধ্যে জিনিসটি রাখা হয় গতিদানকারী অন্য একটি তরলের সাথে মিশিয়ে যথেষ্ট চাপের মধ্যে। বোতাম টিপে চাপটা তুলে নিলে ঐ তরলটি দ্রুত তরল থেকে বাষ্পে পরিণত হয় এবং সুগন্ধি বা কীটনাশককে সাথে নিয়ে বেরিয়ে সূক্ষ আকারে ছড়িয়ে দেয়। ঐ গতিদানকারী তরলটি সাধারণত হয় ক্লোরো ডাই ফ্লোরো মিথেন এটা চাপে সহজে তরল হয়, আর চাপ তুলে নিলে সহজে গ্যাস হয়ে পড়ে।

রসায়ন বা রাসায়নিক দ্রব্যের খোজ পড়লে আমাদের কি সব সময় ল্যাবরেটরিতে দৌড়াতে হবে? মোটেই না। রসায়ন রয়েছে আমাদের রান্নাঘরে, গোসলখানায়, কিংবা ড্রেসিং টেবিলে-দৈনন্দিন কাজের সাথে একাকার হয়ে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *