উপমহাদেশে ইংরেজদের আগমন
ইংরেজদের আগমন ও ক্ষমতা বিস্তার : পর্তুগিজ ও ওলন্দাজ বণিকদের বাণিজ্যিক সাফল্য ও এদেশের বিপুল ধন-সম্পদের বর্ণনা ইংরেজ বণিকদের মনে এদেশে বাণিজ্য করার আগ্রহ সৃষ্টি করে। উপমহাদেশে তখন মোগল-সম্রাট আকবরের রাজত্বের শেষ সময়। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথের কাছ থেকে ১৫ বছর মেয়াদী সনদ নিয়ে এদেশে বাণিজ্য করতে আসে।
সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়ে তারা ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে মুম্বাইয়ের নিকট সুরাটে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ রাজদূত স্যার টমাস রো সম্রাট জাহাঙ্গীরের দরবারে এসে ইংরেজদের বাণিজ্যের জন্য কিছু সুবিধা আদায় করেন। এরপর মসূলিপট্টমে ইংরেজদের দ্বিতীয় বাণিজ্য কুঠি স্থাপিত হয়। পর্তুগিজরা বাংলা থেকে বিতাড়িত হলে ইংরেজগণ বালেশ্বরে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে এবং করমণ্ডল উপকূলে কিছু জমি নিয়ে একটি দুর্গ নির্মাণ করে এবং এ দুর্গই পরে মাদ্রাজ শহরে পরিণত হয়। ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে জলপথে ইংরেজগণ হুগলিতে আসে এবং বাংলার সুবেদার শাহ সুজার অনুমতি নিয়ে ১৬৫১ খ্রিস্টাব্দে সেখানে বাণিজ্য কুঠি নির্মাণ করে। ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে তারা কাশিমবাজারে আরও একটি কুঠি স্থাপন করে। এরপর ধীরে ধীরে তারা ঢাকা ও মালদহে কুঠি নির্মাণ করে শক্তি বাড়াতে থাকে।
এদিকে ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লস পর্তুগালের রাজার বোনকে বিয়ে করে মুম্বাই যৌতুক হিসাবে পান। ১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দে চার্লস বার্ষিক দশ পাউন্ডের বিনিময়ে কোম্পানিকে মুম্বাই ইজারা দেন। বর্তমান মুম্বাই নগর ও বন্দর এখানেই গড়ে উঠে। ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দে জব চার্নক ভাগীরথী নদীর তীরে ১২০০ টাকার বিনিময়ে কলকাতা, সূতানটি ও গোবিন্দপুর এ তিনটি গ্রামের জমিদারী স্বত্ব কিনে নেন। পরবর্তীকালে উপমহাদেশের ভাগ্য নির্ধারণকারী দুর্গ ফোর্ট উইলিয়াম এখানেই নির্মিত হয়। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট ফররুখশিয়ারের অনুমতি নিয়ে ইংরেজগণ বাংলা, মাদ্রাজ ও মুম্বাইয়ে বিনা শুল্কে অবাধ বাণিজ্য করতে থাকে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions