খানুয়ার যুদ্ধ
খানুয়ার যুদ্ধ, ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দ
ভারতের অন্যান্য শক্তির মধ্যে রাজপুত শক্তি ছিল অন্যতম। রাজপুতানার মেবারের অধিপতি ছিলেন রানা সংগ্রাম সিংহ। সংগ্রাম সিংহ আশা করেছিলেন যে বাবর তাঁর পূর্বপুরুষের ন্যায় দিল্লি লুট করে স্বদেশে ফিরে যাবেন। তখন তিনি ইব্রাহিম লোদীর রণক্লান্ত সেনাবাহিনীকে সহজেই পরাস্ত করে মুসলিম শাসনের ধ্বংসস্তুপের উপর এক স্বাধীন হিন্দুরাজ্য প্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু পানিপথের যুদ্ধে জয় লাভের পর বাবরের ভারতবর্ষে স্থায়ীভাবে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার সংকল্পের কথা জেনে সংগ্রাম সিংহ একটি শক্তিশালী রাজপুত সৈন্য বাহিনী গঠন করেন। বিভিন্ন রাজ্যের নেতৃবর্গ, আজমীর, মারওয়াড়, আম্বর ও চান্দেরীর রাজপুতগণ এবং মেওয়াটের হাসান খান তাঁর দলে যোগদান করেন। প্রতিপক্ষের যুদ্ধ প্রস্তুতি দেখে বাবরের সৈন্যগণ আতংকিত হয়ে পড়ে এবং যুদ্ধ না করে কাবুলে ফিরে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে। সেনাদলের মনোবল বৃদ্ধির জন্য বাবর দু’টি কাজ করেন। তিনি নিজের পানপাত্র ভেঙ্গে ফেলেন এবং তাঁর সোনার ও রূপার পানপাত্রগুলো বিতরণ করে দেন। বাবর সৈন্যদেরকে উদ্দীপ্ত করে মানসিক শক্তি বাড়িয়ে দেন। এভাবে তিনি রাজপুতদের মোকাবেলা করার জন্য আগ্রার পশ্চিমে খানুয়ার প্রান্তরে সৈন্য সমাবেশ করেন।
১৫২৭ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মার্চ খানুয়ার প্রান্তরে রানা সংগ্রাম সিংহ এবং বাবরের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রায় ১০ ঘন্টার যুদ্ধে রাজপুত বাহিনী অসাধারণ বিক্রম দেখালেও বাবরের রণকৌশল শেষ পর্যন্ত রাজপুতদেরকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়। বাবর এ যুদ্ধেও তুলঘুমা যুদ্ধ রীতি এবং আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারের দ্বারা রাজপুত শক্তিকে ধ্বংস করেন। সংগ্রাম সিংহ আহত অবস্থায় যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করেন। কিছুদিনের মধ্যে তাঁর সহযোগীরা তাঁকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে।
খানুয়ার যুদ্ধের গুরুত্ব
খানুয়ার যুদ্ধের গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী। খানুয়ার যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর সংগ্রাম সিংহের ভারতে রাজপুত প্রাধান্য স্থাপনের স্বপ্ন চিরতরে বিনষ্ট হয়ে যায়। শক্তিশালী মোগলদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করার জন্য আর কোনো শক্তি রইল না। রাজপুত শক্তি পতনের ফলে আফগানরাও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। কারণ রাজপুতদের সাথে যোগ দিয়ে জোট গড়ার সম্ভাবনাও বিলীন হয়ে যায়। এ যুদ্ধে জয়ের ফলে ভারতে মোগল শক্তির ভিত্তি দৃঢ় হয় এবং বাবর কাবুল থেকে দিল্লিতে রাজধানী স্থানান্তর করেন। অতঃপর তিনি সহজে মালবের মেদিনী রায়কে পরাস্ত করেন। কোনো কোনো ঐতিহাসিক খানুয়ার যুদ্ধকে বক্সারের যুদ্ধের সাথে তুলনা করেছেন। কারণ ভারতে বৃটিশ শক্তির প্রাধান্য স্থাপনে বক্সার যেমন একটি নিষ্পত্তিকারী যুদ্ধ, ভারতে মোগল শক্তির উত্থানে খানুয়ার যুদ্ধও ছিল তদরূপ।
খানুয়ার যুদ্ধের ফলাফল
১. খানুয়ার যুদ্ধের ফলে ভারতবর্ষে মোগল শক্তি সুদৃঢ় ভিত্তির উপর সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
২. বাবরের ভারতবর্ষ আক্রমণকালীন সময়ে এদেশে দুইটি পরাক্রমশালী শক্তি ছিল। তারা হলো আফগান ও রাজপুত। পরপর দু'টি যুদ্ধে বিজয়ের ফলে উভয় শক্তি বিনষ্ট হয়। ফলে ভারতবর্ষে মোগল শক্তির উত্থানের পথ খুলে যায়।
৩. খানুয়ার প্রান্তরে জয়লাভের পর মোগলদের কেন্দ্রীয় রাজধানী কাবুল থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয়।
৪. খানুয়ার যুদ্ধে জয়লাভের পর বাবর অন্যান্য রাজপুতদেরকে পরাজিত করতে সক্ষম হন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions