Home » » বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন

বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন

বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের প্রথম সূত্রপাত ঘটে মহারাষ্ট্রে। কিন্তু পরে এ আন্দোলন অধিক জোরদার হয়ে উঠে বাংলায়। বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশী আন্দোলনে সরকারী দমন নীতির মোকাবেলায় বাংলার এক শ্রেণির যুবক বিপ্লব ও সন্ত্রাসবাদের পথ বেছে নেয়। বিভিন্ন গুপ্ত সমিতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তারা বৈপ্লবিক ক্রিয়াকর্ম পরিচালনা করে এবং সশস্ত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বৃটিশ সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করে। গুপ্ত সমিতিগুলোর মধ্যে ঢাকার অনুশীলন সমিতি' ও কলকাতার যুগান্তর সমিতি ছিল প্রধান। সারাদেশে এসব সংগঠনের অনেক শাখা প্রশাখা ছিল। যুগান্তর' নামে যুগান্তর সমিতির একটি সাপ্তাহিক পত্রিকাও বের হতো। এ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্র ঘোষ, ভূপেন্দ্র নাথ দত্ত প্রমুখ বিপ্লবীগণ। ঢাকার অনুশীলন সমিতির প্রধান সংগঠক ছিলেন পুলিন বিহারী দাস। গুপ্ত হত্যা, সন্ত্রাস ও ডাকাতির মাধ্যমে ইংরেজ প্রশাসনকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলার উদ্দেশ্যে এসব সংগঠনের নেতারা বোমা তৈরি, অস্ত্র সংগ্রহসহ নানাবিধ কাজে জড়িত হয়। পূর্ব বাংলা ও আসামের প্রথম লেফটেন্যান্ট গভর্নর ব্যামফিল্ড ফুলারকে দুবার হত্যার চেষ্টা চলে। ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার চেষ্টায় নিয়োজিত প্রফুল্ল চাকী আত্মহত্যা করেন এবং একই অপরাধে ধৃত ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়। সরকার মানিকতলা বোমা হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে আরও কয়েকজনকে ফাঁসি দেন এবং অনেককে কারাবন্দী ও দ্বীপান্তর করা হয়। সরকারী দমন নীতির ফলে এবং বিপ্লবী নেতাদের একাধিক ব্যক্তি এ রাজনীতি থেকে সরে পড়ায় ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদের পূর্বেই বাংলার প্রথম পর্যায়ের সশস্ত্র আন্দোলন কিছুটা থেমে আসে। 

১৯১২ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে বিপ্লবী আন্দোলন প্রধানত কলকাতা কেন্দ্রিক ছিল। ঐ সময় কলকাতার রাজাবাজারে অমৃত হাজরার পরিচালনায় একটি বোমার কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। কলকাতা, যশোর ও খুলনায় অনেকগুলো সশস্ত্র ডাকাতি হয়। একই বছরের শেষ দিকে বিপ্লবী নেতা রাস বিহারী বসুর পরিকল্পনা অনুযায়ী দিল্লীতে লর্ড হার্ডিঞ্জকে লক্ষ করে বোমা ছোড়া হয়। কিন্তু তিনি অল্পের জন্য বেঁচে যান। সরকার রাস বিহারীকে ধরার জন্য এক লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন। 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বাংলায় বিপ্লবীদের মধ্যে একদল বিদেশ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে সম্মুখ যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে থেকে ক্ষমতা দখলের নীতি গ্রহণ করে। এঁদের মধ্যে ছিলেন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ওরফে বাঘা যতীন, ডা. যদুগোপাল মুখোপাধ্যায়, নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য প্রমুখ। নরেন্দ্র নাথ পরে এম.এন.রায় নামে বিখ্যাত হন। তাঁরা ইংরেজ বিরোধী শক্তি জার্মানি থেকে অস্ত্র সাহায্যের আশ্বাস পান। কিন্তু ইংরেজ সরকার বিপ্লবীদের এ চক্রান্তের কথা আগেই জেনে যাওয়ায় জার্মানির জাহাজ আসার পথ রুদ্ধ হয়। এ দিকে বাঘা যতীন ও তার কয়েকজন সঙ্গী উড়িষ্যার বালেশ্বরে জার্মান জাহাজের উপস্থিতির আশায় হাজির হয়েছিলেন। তাঁদের আগমনের সংবাদ পেয়ে কলিকাতা থেকে পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্ট একদল সশস্ত্র পুলিশ নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। বাঘা যতীন ও তাঁর সহকর্মীদের সাথে পুলিশ বাহিনীর গুলি বিনিময়কালে | চিত্ত প্রিয় নামের একজন বিপ্লবী নিহত হন। অন্য তিন আহত সহকর্মীসহ বাঘা যতীন ধরা পড়েন এবং বন্দী অবস্থায় তাঁর মৃত্যু ঘটে। তার দুই সহকর্মীর ফাসি হয় এবং একজন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।

কিন্তু এসব ব্যর্থতা বিপ্লবীদের হতোদ্যম করেনি। দেশি বিদেশি উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারী হত্যা অব্যাহত ছিল। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জানুয়ারি পুলিশের ডেপুটি সুপার বসন্ত চট্টোপাধ্যায়কে ভবানীপুরে হত্যা করা হয়। পুলিশের সঙ্গে খণ্ড যুদ্ধ লেগে থাকত প্রায়ই। ১৯১৬-১৭ খ্রিস্টাব্দে এর মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার ভারত প্রতিরক্ষা আইনে অনেককে গ্রেফতার করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে এদের মুক্তি দেয়া হয়। 

১৯২২ খ্রিস্টাব্দে গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করার পর বাংলায় আবার সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ শুরু হয়। পর বছর ‘লাল বাংলা’ শীর্ষক প্রচার পত্রে অত্যাচারী পুলিশ কর্মচারীদের হত্যার আহবান জানানাে হয়। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে গোপীনাথ সাহা নামে জনৈক বিপ্লবী কলিকাতার পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্টকে হত্যা করতে গিয়ে ভুলক্রমে মি: ডে নামে সাহেবকে হত্যা করে। উক্ত ঘটনায় গোপীনাথের ফাসি হয়। সে বছরের মার্চ মাসে দক্ষিণেশ্বরে বোমা তৈরির এক গোপন কারখানা আবিষ্কৃত হয়। আলিপুর জেলের সুপার বন্দি বিপ্লবীদের পরিদর্শন করতে গেলে প্রমোদ চৌধুরী তাকে লোহার রড় দিয়ে হত্যা করে। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে সরকার বেঙ্গল অর্ডিন্যান্স জারী করে বহু বিপ্লবীকে কারারুদ্ধ করেন। এর ফলে বৈপ্লবিক কার্যকলাপ অনেকাংশে হ্রাস পায়। 

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধী আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করলে বৈপ্লবিক ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ পুনরায় বাড়ে। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে সুর্যসেন, যিনি মাস্টার দা নামে অধিক পরিচিত, তাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠিত হয়। সূর্যসেনের সহযোগী ছিলেন অম্বিকা চক্রবর্তী, গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, অনন্ত সিংহ ও অন্যান্য বহু বিপ্লবী। জালালাবাদ পাহাড়ে বিপ্লবীদের সঙ্গে পুলিশের যে সশস্ত্র সংঘর্ষ ঘটে, তাতে সূর্যসেনের ১২জন সঙ্গীর মৃত্যু হয়। সেনাবাহিনীর মধ্যে হতাহতের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন বাংলার যুব সমাজকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে এবং একের পর এক নানা সংঘর্ষ ঘটতে থাকে। ঢাকা মেডিকেল স্কুলের ছাত্র বিনয় বসু পুলিশের বড় সাহেব লোম্যানকে গুলি করে হত্যা করে। বহুদিন আত্মগোপন করার পর অবশেষে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে সূর্যসেন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। বিচারে তার ফাসি হয়। কলকাতায় যুগান্তর দলও এ সময় সক্রিয় ছিল। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ২৫ আগস্ট ডালহৌসী স্কোয়ারে চার্লস টেগার্টকে হত্যা করার আরো একটি চেষ্টা নিষ্ফল হয়। ঐ বছর ডিসেম্বর মাসে বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং-এ কারা বিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেল সিম্পসনকে হত্যা করেন। বিনয় ও বাদল এর পর আত্মঘাতী হন এবং পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর দীনেশের ফাসি হয়। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের নেতৃত্ব দেন ও দেশের জন্য নিজ জীবন উৎসর্গ করেন। ঐ বছরই বীনা দাস

বাংলার গভর্নর জ্যাকসনকে হত্যার চেষ্টা করেন। তাঁর সে চেষ্টা অবশ্য ব্যর্থ হয় এবং তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এ দিকে মেদেনীপুরে ১৯৩১ থেকে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পর পর তিনজন ইউরোপীয়ান ম্যাজিস্ট্রেট জেমস পেডি, বরার্ট ডগলাস এবং বার্জ বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স নামের বিপ্লবী উপদলের হাতে নিহত হন। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের পর বাংলার সশস্ত্র আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যায় এবং বিপ্লবীদের রাজনৈতিক কর্মধারা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়।

পরিশেষে বলা যায়, বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশী আন্দোলনের পরিণতিতে বাংলায় সশস্ত্র আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। প্রধান দুটি সংগঠন যুগান্তর সমিতি ও অনুশীলন সমিতি বিপ্লবী আন্দোলনের প্রাণস্বরূপ কাজ করে। সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে বৃটিশ সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে বাংলার অসংখ্য যুবক এ আন্দোলনে অংশ নেয় এবং জীবন উৎসর্গ করে। সরকারকে সন্ত্রস্ত করার জন্য বিপ্লবীরা পুলিশ কর্মকর্তাসহ বহু সরকারী অফিসারকে হত্যা করে। বিদেশি সাহায্য নিয়ে অভ্যুত্থান ঘটাবার চেষ্টাও করা হয়েছিল। কিন্তু এসবই ব্যর্থ হয়। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের পর বাংলার বিপ্লবী সশস্ত্র আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যায়।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *