Home » » উষ্ট্রের যুদ্ধ

উষ্ট্রের যুদ্ধ

উষ্ট্রের যুদ্ধ

হযরত উসমান (রা.) এর হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ইসলামী রাষ্ট্রে সংকটজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়। হযরত আলী (রা.) এই সময় বিদ্রোহীদের দ্বারা খলীফা নিযুক্ত হন, যদিও তার খিলাফতে সকলেই আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করে। এই সময় হযরত উসমান (রা.) এর হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি জানানো হয়। এবং এই প্রেক্ষিতে ইসলামে বেশ কয়েকটি গৃহ যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। তার মধ্যে প্রথমটি ছিল উষ্ট্রের যুদ্ধ।


উষ্ট্রের যুদ্ধের ঘটনা

এই প্রসংগে Joseph Hell বলেন, e The muder of Othman was a signal for civil war.” মুসলিমদের মধ্যে সংঘঠিত প্রথম গৃহযুদ্ধ ছিল উষ্ট্রের যুদ্ধ। এই যুদ্ধের বীজ হযরত উসমান (রা.) এর হত্যাকাণ্ডের মধ্যে নিহিত ছিল।

উষ্ট্রের যুদ্ধটি ৬৫৬ খ্রিঃ সংঘটিত হয়। তালহা ও যুবায়ের মক্কা ও মদীনা হতে ৩০০০ সৈন্য নিয়ে বসরা দখল করেন। বিদ্রোহীদের সাথে বিবি আয়িশাঅংশগ্রহণ করেন। বসরার শাসনকর্তা উসমান বিন হানিফকে হত্যা করা হয়। এখানে কতিপয় ব্যক্তিকে যারা উসমান হত্যায় জড়িত ছিলেন তাদেরকে শাস্তি প্রদান করা হয়। 

খলীফা আলী (রা.) কুফার পথে বিদ্রোহীদের প্রতিহত  করার জন্য একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। কুফার শাসক আবু মুসা আনসারী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে খলিফাকে সাহায্য করতে রাজি না হলে তিনি পদচ্যুত হন। ৯০০০ কুফাবাসী হযরত আলী (রা.) এর সাথে যোগদান করেন। বসরায়় হযরত আলী (রাঃ) তালহা, যুবায়ের ও বিবি আয়েশার সাথে সাক্ষাৎ করেন, এবং আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট এড়াতে উদ্যোগী হন। এতে তালহা (রা.), যুবায়ির (রা.) ও বিবি আয়িশা (রা.) সম্মত হন। 

কিন্তু বিদ্রোহীরা বিচলিত হয়ে রাতের অন্ধকারে উভয় শিবিরে অতর্কিত আক্রমণ চালালে, উভয় পক্ষ বিস্মিত হন। তারা পরস্পরকে আক্রমণের জন্য দায়ী করেন। প্রত্যতুরে হযরত আলী (রা.) অশ্বপৃষ্টে এবং হযরত আয়িশা (রা.) উস্ট্রের পৃষ্ঠে আরোহণ করে যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত হন। 

ইতিমধ্যে তালহা ও যুবায়ের বসরার উদ্দেশ্যে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করেন এবং পথিমধ্যে দুইজন আততায়ী দ্বারা নিহত হয়। এবার যুদ্ধে হযরত আয়িশা(রা.) উস্ট্রকে লক্ষ্য করে বিপরীতপক্ষ আক্রমণ করলো। হযরত আয়িশা (রা.) যুদ্ধ থামাতে অসমর্থ হলেন। 

হযরত আলী (রা.) এর আদেশে বিবি আয়িশা (রা.)এর উটের পা কর্তিত হয়, হযরত আলী (রা.) বহু কষ্টে যুদ্ধ থামিয়ে বিবি আয়িশা(রা.)কে উদ্ধার করেন এবং তার ভ্রাতা মুহাম্মদ বিন আবু বকরের সাথে ৪০ জন মহিলার সহচার্যে মদীনায় পাঠিয়ে দেন। 

এ যুদ্ধের পর হযরত আয়িশা (রা.) জীবনে আর কখনো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। এই যুদ্ধে হযরত আয়িশা(রা.) এর বাহন উটটি আক্রান্ত হয় বলে, ইতিহাসে এই যুদ্ধ উষ্ট্রের বা (জামালের যুদ্ধ) নামে পরিচিতি লাভ করে। আরবীতে একে বলা হয় জংগে জামাল বা জামালের যুদ্ধ। আরবী জামাল অর্থ উট।


যুদ্ধের ফলাফল 

উষ্ট্রের যুদ্ধ ছিল মুসলিমদের মধ্যে সংঘটিত প্রথম গৃহযুদ্ধ। এই যুদ্ধের মাধ্যমেই ইসলামে গৃহ যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এই যুদ্ধে প্রায় সাড়ে চার হাজার মুসলিম সৈন্য নিহত হয়। তবে এই যুদ্ধের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে বসরা, কুফা, মক্কার মুসলিমদের মধ্যে মতবিরোধের অবসান ঘটে। বসরা, কুফা ও মিসরে হযরত আলী (রা.) এর আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে সিরিয়ায় তখনো মুয়াবিয়ার একচ্ছত্র কর্তৃত্ব বজায় থাকে। খলীফা কায়েস বিন সাদকে মিসরে, সুহাইল ইবনেহানিফকে হেজায এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে বসরার শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেন। 

অন্যদিকে বিশাল মুসলিম রাষ্ট্রকে কেন্দ্রস্থল হতে শাসন করার জন্য এবং ইরাকীদের সমর্থনের প্রতিশ্রুতিতে খলীফা মুসলিম রাষ্ট্রের রাজধানী মদীনা থেকে ৬৫৭ খ্রিঃ কুফায় স্থানান্তরিত করেন। পরবর্তীতে হযরত আলী (রা.) কে এই সিদ্ধান্তের জন্য চরম মূল্য দিতে হয়। মদীনা রাষ্ট্র তার রাজধানীর মর্যাদা হারায়। আর খলীফা আলী হারালেন বিশিষ্ট সাহাবীদের সমর্থন।


পরিশেষে বলা যায়, উষ্ট্রের যুদ্ধ ছিল ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ। এই যুদ্ধের মাধ্যমে মূলত হযরত উসমান (রা.) হত্যাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীরাই জয়ী হয়েছিল। এই যুদ্ধটি ছিল মূলত ভুল বোঝাবুঝি এবং শত্রুপক্ষের প্ররোচনার ফল। হযরত আলী (রা.) এবং তালহা (রা.), যুবায়ির (রা.) ও বিবি আয়িশা (রা.) কেউই এই অযথা রক্তপাত মূলক যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু তাঁরা সকলেই পরিস্থিতির শিকার হন এবং এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় যা পরবর্তী ইতিহাসে ব্যাপকভাবে প্রভাব  বিস্তার করেছিল।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *