ওয়ারেন হেস্টিংস এর অবদান
উপমহাদেশে বৃটিশ শক্তিকে সুদৃঢ় করার পেছনে হেস্টিংসের অবদান অনস্বীকার্য। ক্লাইভের শাসন ব্যবস্থার ফলে যখন বাংলার সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত করুণ, ঠিক সে মুহূর্তে হেস্টিংস এদেশের শাসনভার গ্রহণ করেন। হেস্টিংসের সীমান্ত নীতির মূল উদ্দেশ্যই ছিল কোম্পানির অধীনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিধান ও বিস্তার। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে হেস্টিংসের নীতি ছিল রাজস্ব আদায়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা এবং বিচার বিভাগের সংস্কার সাধন করা। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়েও ব্যক্তিগতভাবে হেস্টিংস ছিলেন অসচ্চরিত্র, বিশ্বাসঘাতক, অর্থলোভী ও প্রতিহিংসাপরায়ন। তবে এ উপমহাদেশে যে সমস্ত শাসক এসেছিলেন তাঁদের মধ্যে হেস্টিংসের অবদানই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। হেস্টিংস যখন ক্ষমতায় আসেন তখন কোম্পানি ছিল রাজস্ব আদায়কারী একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মাত্র। তিনি যখন কর্মভার ত্যাগ করে দেশে যাত্রা করেন তখন কোম্পানি এ উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়। তাই হেস্টিংসকে উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাতা বলা চলে।
হেস্টিংসের জীবনের শেষ পরিণতি দু:খজনক হলেও এ কথা মানতে হবে যে বাংলা যখন দ্বৈত শাসনের ফলে জর্জরিত, আমেরিকা যখন ব্রিটিশ শাসন থেকে বিচ্ছিন্ন, পররাষ্ট্র নীতিতে ইংল্যান্ডের গৌরব যখন ক্ষুন্ন, ভোঁসলে, নিজাম, হায়দর-এর আক্রমণে যখন ইংরেজ প্রভুত্বের ভিত্তি প্রকম্পিত, মন্বন্তরে জনপদ যখন বিরান, কোম্পানির কোষাগার যখন শূন্য প্রায়, তখন হেস্টিংস ইংরেজ কোম্পানির মর্যাদা ও শক্তিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ধৈৰ্য্য, সাহস ও দৃঢ় মনোবল দ্বারা তিনি শাসন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা স্থাপন করেন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions