কারবালার যুদ্ধের কারণ
কারবালার যুদ্ধের কারণ সমূহ নিম্নে দেয়া হলো:
১. সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ : হযরত মুয়াবিয়া (রা.) ও হযরত আলী (রা.) এর জেষ্ঠ্য পুত্র ইমাম হাসান (রা.) এর সাথে এই মর্মে চুক্তি হয়েছিল যে, মুয়াবিয়া (রা.)-এর মৃত্যুর পর ইমাম হুসাইন (রা.) খিলাফত গ্রহণ করবেন। কিন্তু মুয়াবিয়া (রা.) উক্ত চুক্তি ভঙ্গ করেন এবং ৬৮০ খ্রি: ইয়াযিদ ইবনে মুয়াবিয়া দামেস্কের সিংহাসন আরোহণ করে খিলাফত গ্রহণ করেন।
২. ইয়াযিদের ব্যক্তিগত চরিত্র : ইয়াযিদ ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন মদ্যপ, ইন্দ্রিয়পরায়ণ, দাম্ভিক এবং শাসক হিসেবে অযোগ্য। অপর দিকে ইমাম হুসাইন (রা.) ছিলেন মহানবী (সা.) এর দৌহিত্র ও শৌর্য-বীর্য ও চারিত্রিক গুণে অনন্য একজন পুরুষ। তাই তাঁর প্রতি মুসলিমদের সমর্থন ছিল ব্যাপক।
৩. রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা : ইয়াযীদের মনোনয়ন রাজতন্ত্রের ভিত্তিকে আরো মজবুত করে যা মুয়াবিয়া (রা.) কর্তৃক প্রথম স্থাপিত হয়েছিল। এতে করে খুলাফায়ে রাশিদীনের সোনালী যুগের শাসন ব্যবস্থার বিলোপ ঘটে। এর ফলে মুসলিম বিশ্বে বিশেষ করে মক্কা, মদীনা ও কুফার অধিবাসীগণ ইমাম হুসাইনকে সমর্থন জানায় এবং উমাইয়া শাসনের বিরোধিতা করতে শুরু করে।
৪. মদীনার প্রাধান্য হ্রাস : দামেস্কে খিলাফতের রাজধানী প্রতিষ্ঠার পর থেকে মদীনা তার পূর্বের গৌরব ও গুরুত্ব হারায়। এতে মহানবী (সা.) এর সাহাবা ও তার অনুসারীগণ উমাইয়া খিলাফতের বিরোধিতা শুরু করেন।
৫. ইমাম হুসাইনের ব্যক্তিত্ব ও সরলতা : ইমাম হুসাইন (রা.) ছিলেন ঈমানের শক্তিতে নিষ্ঠাবান। তিনি মদ্যপ, চরিত্রহীন ও দাম্ভিক ইয়াযীদের প্রতি বায়াৎ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। অপরদিকে সরলতার কারণে তিনি ইয়াযিদ ও উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদের কূট-কৌশলের নিকট পরাস্থ হন।
৬. আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের এর কর্মকান্ড : আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা.)ও ইয়াযিদের বিরোধিতা করেন। তিনিও বায়াৎ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। তিনি ইমাম হুসাইনকে ইয়াযীদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হতে প্ররোচিত করেন। ইমাম হুসাইন (রা.) ছিলেন ধর্মপরায়ণ, ন্যায়নিষ্ঠ, সৎ ও খিলাফতের যোগ্য দাবিদার। মুয়াবিয়া (রা.) কর্তৃর্ক বলপূর্বক ক্ষমতা দখল এবং ইয়াযিদের মনোনয়ন এবং ক্ষমতায় আরোহণ ইত্যাদিতে ইমাম হুসাইন (রা.) তীব্র প্রতিবাদ করতে শক্তি যোগান। বস্তুত মুয়াবিয়া (রা.) এর পুত্র ইয়াযীদের চেয়ে হযরত হুসাইন (রা.) চরিত্র বলে শতগুণে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। তাই হুসাইন ইবনে আলী (রা.) খিলাফতের ন্যায়সঙ্গত দাবিদার ছিলেন। তাঁর এই দাবীকে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ির (রা.) সমর্থন করেন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions