Home » » বেঙ্গল প্যাক্ট কি

বেঙ্গল প্যাক্ট কি

বেঙ্গল প্যাক্ট কি / বেঙ্গল প্যাক্ট ১৯২৩

বেঙ্গল প্যাক্ট: স্বরাজ্য দলের নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস এবং বাঙালি মুসলিম নেতা সিলেটের অধিবাসী আবদুল করিম ছিলেন ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে সম্পাদিত বেঙ্গল প্যাক্টের উদ্যোক্তা। উদার চিত্ত রাজনীতিক দেশবন্ধু অনুভব করেছিলেন যে, মুসলমানদের সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া ভারতের জন্য স্বরাজ অর্জন সম্ভব নয়। তিনি মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা ও নায্য দাবি পূরণে উদার মনোভাব প্রদর্শন করেন এবং সে কারণে রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর ফরোয়ার্ড পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখেন যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে বাংলার মুসলমানদেরকে তাদের নায্য হিস্যা দিতে হবে। তারা সুযোগ্য হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুক- এ দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ | এ যুক্তি দিয়েই বিদেশি শক্তি হিন্দু-মুসলমান উভয়কেই শাসন ক্ষমতা থেকে দূরে রেখেছে। চিত্তরঞ্জন দাস বাংলার মুসলমানদের নেতা ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে বাংলার রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন এবং হিন্দু-মুসলমানদের দাবি দাওয়ার ব্যাপারে একটি চুক্তি সম্পন্ন করেন। এ চুক্তি ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ বা ‘বাংলা চুক্তি’ নামে পরিচিত। অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ হবার পর চিত্তরঞ্জন দাসের সাথে কংগ্রেসের অন্যান্য নেতাদের মতানৈক্য হয়। সি.আর.দাস ও তার সমর্থকগণ ব্যবস্থাপক পরিষদগুলোতে যোগদানের পক্ষপাতি ছিলেন। তাঁরা আইনসভায় প্রতিবন্ধকতামূলক নীতি অবলম্বন করে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের সংস্কার আইন অচল করে দিতে চেয়েছিলেন। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের গয়া অধিবেশনে তার দেয়া উক্ত প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। এতে ব্যর্থ হয়ে তিনি মতিলাল নেহেরু ও হাকিম আজমল খানকে নিয়ে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর ‘স্বরাজ্য পার্টি' নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। অল্প সময়ের মধ্যে স্বরাজ্য পার্টির সমর্থকগণ বাংলা প্রাদেশিক কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং সি.আর. দাস ও সুভাষ বসু যথাক্রমে এর সভাপতি ও সেক্রেটারি নির্বাচিত হন।

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ছিলেন একজন দূরদর্শী ও বাস্তববাদী রাজনীতিবিদ। তিনি বুঝেছিলেন যে ব্যবস্থাপক পরিষদে মুসলমানদের সমর্থন লাভ করতে পারলে তিনি সেখানে তাঁর প্রতিবন্ধক নীতি কার্যকরী করতে সক্ষম হবেন। তাছাড়া তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের নায্য অধিকার স্বীকার করতেন এবং স্বরাজ লাভে তাদের সহযোগিতা ও সমর্থন যে অত্যাবশ্যক তা বিশ্বাস করতেন। ফজলুল হক ও সোহরাওয়ার্দী সহ কয়েকজন মুসলিম নেতার সঙ্গে তিনি মত বিনিময় করেন এবং শেষে তাঁদের সঙ্গে বেঙ্গল প্যাক্ট নামক রাজনৈতিক চুক্তিতে আবদ্ধ হন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর এটি স্বরাজ্য পার্টির | কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা ঐক্যমতে আসেন যে, যখন স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে তখন এ চুক্তির শর্তানুযায়ী প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ অধিকার ভোগ করবে। লোকসংখ্যার অনুপাতে ও স্বতন্ত্র নির্বাচন ব্যবস্থায় বাংলার ব্যবস্থাপক পরিষদে প্রতিনিধিত্বের বিধান থাকবে। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রত্যেক জেলার সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় শতকরা ৬০টি আসন পাবে এবং সংখ্যালঘুরা পাবে শতকরা ৪০টি আসন। মুসলমানদের জন্য সরকারি চাকুরীর ৫৫% সংরক্ষিত থাকবে এবং যে পর্যন্ত তারা এ সংরক্ষিত পর্যায়ে না পৌছে | সে পর্যন্ত তাদের মধ্য থেকে শতকরা ৮০ জনকে সরকারি চাকুরীতে নিয়োগ করা হবে। এ ক্ষেত্রে নূন্যতম যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদেরকে চাকুরীতে নেয়া হবে। পরে মুসলমানগণ চাকুরীর ৫৫% ও অসুমলমানরা ৪৫% লাভ করবে। আইন পরিষদে যেকোন সম্প্রদায়ের তিন চতুর্থাংশ সদস্যের সমর্থন না থাকলে ঐ সম্প্রদায়ের ধর্ম সম্পৰ্কীয় কোনো আইন গৃহীত হবে না। মসজিদের সামনে গান বাজনা ও শোভাযাত্রা করা চলবে না এবং ধর্মীয় অনুশাসনের জন্য গরু জবাই করা হলে। | সে ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা যাবে না।

উপরিউক্ত চুক্তির ফলে সি.আর. দাসের হাত শক্তিশালী হয়। ফলে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের কাউন্সিল নির্বাচনে স্বরাজ্য পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। মুসলমানদের সংরক্ষিত ৩৯টি আসনের মধ্যে এ দল ১৯টি লাভ করে এবং পরে আরো দুজন | এতে যোগ দেয়। পরের বছর কলিকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচনে স্বরাজ্য পার্টি ৭৫টি নির্বাচিত আসনের মধ্যে ৫৫টি লাভ করে। সি.আর. দাস মেয়র এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হন। বেঙ্গল প্যাক্টের শর্ত অনুযায়ী কলকাতা কর্পোরেশনের চাকুরিতে কতিপয় মুসলমানকে নিয়োগ করা হয়। মুসলমানদের সমর্থন লাভ করার ফলে আইন সভায় স্বরাজ পার্টির একটি শক্ত ভিত গড়ে উঠে এবং সি.আর. দাস সরকারকে বিভিন্ন পদক্ষেপে বাধা দিতে সক্ষম হন। কিন্তু তাঁর বিপক্ষ দল এতে নিশ্ৰুপ ছিল না। খান বাহাদুর মােশাররফ হোসেনকে দিয়ে সরকার স্বরাজ্য পার্টি বহির্ভূত মুসলমানদেরকে এর বিরুদ্ধে ব্যবহারের চেষ্টা করেন। কিন্তু সরকারের সে চেষ্টা নিষ্ফল হয়।

এ চুক্তির ফলে স্বভাবতই মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ খুশী হন। হিন্দু মুসলমান সম্প্রীতির একটা আবহাওয়া সৃষ্টি হয়। কিন্তু শিক্ষিত হিন্দু মধ্যবিত্ত ও জমিদার শ্রেণি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। তাদের নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র বেঙ্গল প্যাক্টের বিরূপ সমালোচনা করে। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের কোকদ অধিবেশনে এ চুক্তি সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব প্রদর্শিত হয়। কংগ্রেস সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে কোনো পৃথক প্রাদেশিক চুক্তি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এর ফলে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে সি.আর দাসের মৃত্যুর পর বেঙ্গল প্যাক্ট অকার্যকর হয়ে যায়। বাংলায় হিন্দু মুসলমান সমস্যার সমাধান করতে চেয়ে তিনি যে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দেন তাঁর অনুসারীরা সেটি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়। স্বরাজ্য পার্টির কর্মসূচির মধ্যে অনেক পরিবর্তনের ফলে হিন্দু মুসলমান সভ্যদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। সাম্প্রদায়িকতা পুনরায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। এর ফলে হিন্দু মুসলিম ঐক্যে ভাঙ্গন ধরে এবং সি.আর. দাসের বেঙ্গল প্যাক্ট অচল হয়ে পড়ে।


শেষে বলা যায়, ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের উদ্যোগে বাংলায় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সহযোগিতা ও সদ্ভাব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একটি চুক্তি হয়। এ চুক্তিই বেঙ্গল প্যাক্ট নামে পরিচিত। এ চুক্তিতে মুসলমান সম্প্রদায়কে কিছু বেশি সুবিধা প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু দেশবন্ধুর অকাল মৃত্যুতে এবং কংগ্রেস ও হিন্দুদের বিরোধিতার কারণে এ চুক্তি অকার্যকর হয়ে পড়ে। রাজনীতিতে পুনরায় সাম্প্রদায়িকতা মাথা তুলে দাঁড়ায়।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *