পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের গুরুত্ব
আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকের সার্বিক কল্যাণের নিমিত্তে পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের বিকল্প নেই। কেননা পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকতার সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। সুশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হল:
রাষ্ট্র ও সরকার সম্বন্ধে জানা :
রাষ্ট্র ও সরকার ব্যতীত নাগরিক জীবন কল্পনা করা যায় না। আর নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্র ও সরকার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান থাকা আবশ্যক। রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের উপাদান, সরকার, সরকারের শ্রেণি বিভাগ, রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ, সংবিধান ইত্যাদি সম্পর্কে জানার জন্য পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের কোন বিকল্প নেই।
সুনাগরিক হওয়ার শিক্ষা :
রাষ্ট্রের একজন সাধারণ নাগরিক থেকে কিভাবে সুনাগরিক হওয়া যায় সে সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করা যায় পৌরনীতি ও সুশাসন থেকে। একজন সুনাগরিক বুদ্ধিমত্তা, বিবেক ও আত্মসংযমের অধিকারী হওয়ায় রাষ্ট্রের প্রতি তার অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকে। সুনাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করার জন্যও পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
স্বদেশ প্রেম জাগ্রত করার জন্য :
দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মধ্যে স্বদেশ প্রেম জাগ্রত করার জন্য পৌরনীতি ও সুশাসন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করে প্রকৃত দেশ প্রেমিক জনগণের উপর। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক পল জানে (Paul Janet) বলেন, “স্বদেশ প্রেম জাগ্রত করার জন্য পৌরনীতির জ্ঞান খুবই জরুরি।”
সুস্থ ও সুন্দর সমাজ জীবন গঠনের শিক্ষা :
পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের সুস্থ ও সুন্দর সমাজ জীবন গঠনে শিক্ষা দিয়ে থাকে। মানুষের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনকে কেন্দ্র করে পৌরনীতি ও সুশাসন গড়ে উঠেছে। পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতার মাধ্যমে কিভাবে সুস্থ ও সুন্দর সমাজ জীবন গঠন করে মানুষের সর্বাধিক কল্যাণ করা যায় তা পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের মাধ্যমে জানা যায়।
ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে :
নাগরিকের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রদত্ত অধিকারসমূহ পাঠ ও চর্চার মাধ্যমে নাগরিক তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ করে থাকে। রাষ্ট্র থেকে নাগরিক যেমন বিভিন্ন অধিকার গ্রহণ করে তেমনি রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের কিছু কর্তব্য বা দায়বদ্ধতা রয়েছে যা একজন নাগরিক পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের মাধ্যমে জানতে পারে।
দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন :
পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠ মানব মনের সংকীর্ণতা দূর করে মহৎ জীবন গঠনের অনুপ্রেরণা দেয়। বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবতাবোধ সৃষ্টিতে পৌরনীতি ও সুশাসন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। দেশ ও বিশ্বের কল্যাণার্থে এ শাস্ত্র নাগরিকের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির উন্নতি ঘটায়।
জাতীয় চেতনার উন্মেষ :
পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের মাধ্যমে নাগরিকের মনে জাতীয় চেতনার উন্মেষ হয়। সচেতন নাগরিক রাষ্ট্রের অমূল্য সম্পদ। জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সচেতন নাগরিকেরা দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করে। এর ফলে রাষ্ট্রের সামগ্রিক সমৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়।
সুশাসন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ :
সুশাসন প্রত্যয়টি সাম্প্রতিক সময়ে পৌরনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। যার ফলে পৌরনীতি আরো বেশি সমৃদ্ধ হয়েছে। কোন রাষ্ট্র সুশাসনের মাধ্যমে পরিচালিত হলে অতি শীঘ্র ইপ্সিত লক্ষ্যে আরোহন করতে পারে। পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের মাধ্যমে সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মত বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা সহজতর হয়।
গণতন্ত্রের বিকাশ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ :
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা হল গণতন্ত্র । গণতন্ত্রের স্বরূপ, ভবিষ্যৎ, কার্যকারিতা এবং বিকাশ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করার জন্য পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের বিকল্প নেই।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য :
রাষ্ট্র যেমন নাগরিকের কল্যাণ সাধন করে থাকে তেমনি নাগরিক রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে থাকে। একজন সুনাগরিক রাষ্ট্রের অগ্রগতির জন্য নানাবিধ পরিকল্পনা করে। সে পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র ও বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নের জন্য পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠ অত্যাবশ্যক।
পরিশেষে বলা যায় যে, পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সুস্থ ও সুন্দর জীবন গঠনে তথা কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাই প্রত্যেক নাগরিকের নিজের স্বার্থে পৌরনীতি ও সুশাসন পাঠ করা প্রয়োজন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions