Home » » সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ

সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ

সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ

ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সমাজবিজ্ঞান একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে বিকাশ লাভ করেনি। অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের মত জ্ঞানের একটি পৃথক শাখা হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের পরিচয় খুব বেশি দিনের নয়। ফরাসী সমাজবিজ্ঞানী অগাস্ট কোঁৎ (Auguste Comte) ১৮৩৯ সালে সর্বপ্রথম Sociology বা সমাজবিজ্ঞান শব্দটি উদ্ভাবন করেন। তবে সমাজকে অধ্যয়নের এ শাস্ত্রটিকে কেঁাৎ প্রথমে Social physics বা সামাজিক পদার্থবিদ্যা বলে অভিহিত করেন। পরে এই বিষয়টিকে Sociology বা সমাজবিজ্ঞান হিসেবে নামকরণ করেন। সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে এমন একটি বিশেষ বিজ্ঞান যা বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় সমাজকে বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করে। সমাজবিজ্ঞান মানব সংগঠন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং তা বিশ্লেষণ করে থাকে। সামাজিক বিজ্ঞানের একটি গতিশীল শাখা হিসেবে সমাজবিজ্ঞান সমাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পঠন-পাঠন এবং গবেষণায় আগ্রহী। 


সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ নিম্নে দেয়া হলো:

বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানীর মতবাদ। সামাজিক বিজ্ঞানসমূহের মধ্যে সমাজবিজ্ঞান সর্বকনিষ্ঠ। উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে শাস্ত্রটির উৎপত্তি হয়। সমাজের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের প্রচেষ্টা থেকে সমাজবিজ্ঞানের বিকাশ ঘটে। প্রাথমিক অবস্থায় মানব জীবন সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিল। প্রকৃতির অনুকূল ও প্রতিকূল পরিবেশেই মানব চিন্তা বিকশিত হতে থাকে। জগৎ ও জীবন সম্পর্কে ভাবনা-চিন্তা আদিকাল থেকে চলে আসছে। আদিতে সকল রকম চিন্তা-চেতনা দর্শন শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু মানবচিন্তার ক্রমবিকাশের ধারায় দর্শনশাস্ত্রের সীমানা পেরিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নবদিগন্ত উন্মোচিত হতে থাকে। এভাবে মানুষের বিচিত্র জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা হিসেবে জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, মনোবিদ্যা, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, অর্থনীতি প্রভৃতি শাস্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। 

প্রাচীন গ্রিক ও রোমান দার্শনিকদের লেখায় সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কিত আলোচনা সমৃদ্ধি লাভ করে। গ্রিক দার্শনিকদের মধ্যে প্লেটো এবং এরিষ্টটল এর নাম এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। মূলত প্লেটো, এরিষ্টটল ও পিথাগোরাস প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞানকে দর্শনশাস্ত্রের আওতাভুক্ত বলে মনে করতেন। দর্শনশাস্ত্রের অঙ্গ হিসেবেই তাঁরা সামাজিক বিজ্ঞানকে পর্যালোচনা করেন। এ প্রসঙ্গে প্লেটোর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এখন ধারাবাহিকভাবে সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে বিভিন্ন দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানীর মতবাদ আলোচনা করা হলো।


কৌটিল্য 

ভারতীয় দার্শনিক কৌটিল্য খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০ অব্দে জন্ম গ্রহণ করেন এবং খ্রিষ্টপূর্ব ২৭৫ অব্দে মৃত্যুবরণ করেন। কৌটিল্য চাণক্য ও বিষ্ণুগুপ্ত নামেও পরিচিত। তবে খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতকে রচিত অর্থশাস্ত্রের লেখক হিসাবে কৌটিল্য নামটিই বোদ্ধা সমাজে অধিকতর পরিচিত। কৌটিল্য ছিলেন প্রাচীন ভারতের প্রথম সম্রাট মৌর্যবংশীয় চন্দ্র গুপ্তের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর অর্থশাস্ত্র নামক গ্রন্থটি চন্দ্রগুপ্তের রাজ্য শাসনের প্রেক্ষাপটে প্রণীত। কৌটিল্যর অর্থশাস্ত্রে তৎকালীন ভারতের আইন, রাষ্ট্র, রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতি, কৃষি, শিল্প, সমাজনীতি ও ধর্মীয় বিধিনিষেধ সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ধ্যান-ধারণা রয়েছে।


প্লেটো

গ্রিক দার্শনিক প্লেটো খ্রিষ্টপূর্ব ৪২৭ অব্দে গ্রিসে জন্মগ্রহণ করেন এবং খ্রিষ্টপূর্ব ৩৪৭ অব্দে মৃতুবরণ করেন। প্লেটো তাঁর ‘Republic' নামক গ্রন্থে সমাজ সম্পর্কে যেসব চিন্তার অবতারণা করেছেন সেসব মূলত যুক্তি নির্ভর হলেও বহুলাংশে কাল্পনিক । তিনি তাঁর গ্রন্থে একটি আদর্শ রাষ্ট্রের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন, যেখানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকলের কল্যাণ সম্ভব। এ লক্ষ্যে তিনি বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলেছেন যা শারীরিক সক্ষমতা ও মানসিক বিকাশ লাভে সহায়ক। এ গ্রন্থে সামাজিক শ্রমবিভাজনের এবং বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা ও প্রশ্নের পর্যালোচনা রয়েছে। তিনি একাডেমি নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এ একাডেমিতেই প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল শিক্ষা গ্রহণ করেন । 


এরিস্টটল

গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৪ অব্দে গ্রিসে জন্মগ্রহণ করেন এবং খ্রিষ্টপূর্ব ৩২২ অব্দে মৃত্যুবরণ করেন। প্লেটোর প্রিয় ছাত্র এরিস্টটল সামাজিক সমস্যা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছেন। 'The Politics' গ্রন্থের মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রের গঠন, সরকারের ধরন, শ্রেণি-নির্ভর সমাজের দাস-মনিব সম্পর্ক এবং সামাজিক বিপ্লবের কারণ অনুসন্ধান করেছেন। তাঁর এসব মতবাদের সমাজতাত্ত্বিক ও সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক মূল্য অপরিসীম। প্লেটোর চেয়ে এরিস্টটল অধিকতর বস্তুনিষ্ঠতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি মূলত যুক্তিতর্কের মাধ্যমে একটি আদর্শ সামাজিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হয়েছিলেন। তবে তিনি প্রাচীন গ্রিসের দাসপ্রথার বিলোপের কথা বলেননি। বরং তাঁর মতে, সমাজের অস্তিত্বের জন্য দাসপ্রথা ছিল অপরিহার্য। শিক্ষাদানের জন্য তিনি লাইসিয়াম নামক একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন ।


ইবনে খালদুন 

উত্তর আফ্রিকার মুসলিম দার্শনিক ও চিন্তাবিদ ইবনে খালদুন ১৩৩২ খ্রিস্টাব্দে তিউনিসে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৪০৬ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। মধ্যযুগের প্রখ্যাত চিন্তাবিদ ইবনে খালদুন সমাজচিন্তার বিকাশের ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন। তিনি ঐতিহাসিক দর্শনের দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘কিতাব-উল-ইব’ রচনা করেন। এ গ্রন্থের দুটি  খন্ড ‘আল-মুকাদ্দিমা' এবং ‘আল-উমরান’ সমাজের গতি-প্রকৃতি এবং সমাজ জীবনে বিভিন্ন উপাদানের প্রভাব পর্যালোচনা  করা হয়েছে। ইবনে খালদুন সমাজ জীবনের বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সংস্কৃতি, রাষ্ট্র, সামাজিক সংহতি সম্পর্কে তিনি বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য social solidarity বা সামাজিক সংহতির গুরুত্ব রয়েছে। মধ্যযুগের এই মনীষী তার চিন্তা-ভাবনা এবং জ্ঞান-দর্শনের মধ্য দিয়ে মানব সভ্যতার অগ্রগতিকে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি সামাজিক সংহতিকে ‘আসাবিয়াহ' (Assabiyah) বা গোষ্ঠীসংহতি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সঠিক ইতিহাস রচনায় সমাজ-সংস্কৃতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি  করেন। ইবনে খালদুনকে অনেকে সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলেও মনে করেন।



ম্যাকিয়াভেলি

ইটালীয় মনীষী ম্যাকিয়াভেলি ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। সমাজ দার্শনিক ম্যাকিয়াভেলি তাঁর 'The Prince' নামক গ্রন্থে একজন শাসকের গুণাবলি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী শাসকের যে কার্যাবলির সুপারিশ তিনি করেছেন তা অত্যন্ত বাস্তবধর্মী। তিনি মানব চরিত্র বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে  বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেছেন। সমাজ এবং মানব চরিত্র সম্পর্কে বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ম্যাকিয়াভেলিকে আধুনিক সামাজিক এবং রাজনৈতিক চিন্তাবিদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ঐক্য প্রতিষ্টার মাধ্যমে জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। তিনি ‘Father of power politics' হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি রাষ্ট্রের কল্যাণে শাসকের অবাধ ক্ষমতার পক্ষে ছিলেন। তার মতে, রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে শাসক স্বৈরাচারী হলেও কোনো ক্ষতি নেই। মানুষের সমালোচনায় বিভ্রান্ত না হয়ে শাসক যা ভালো মনে করবেন তা-ই করা উচিত। সবশেষে যখন প্রমাণিত হবে, তিনি যা করেছেন তা রাষ্ট্র ও জনসধারণের কল্যাণ বয়ে এনেছে তখন আর কোনো সমালোচনা থাকবে না।


ভিকো 

ইটালীয় মনীষী ভিকো ১৬৬৮ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। ভিকো সমাজবিজ্ঞানের  বিকাশের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি সমাজবিজ্ঞান পাঠের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

ভিকো তাঁর The New Science' নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, সমাজ একটি নির্দিষ্ট নিয়মে বিবর্তিত হয়। ভিকো সমাজ বিবর্তনের ধারায় তিনটি যুগ লক্ষ করেন। তা হলো: 

১। দেবতাদের যুগ (Age of Gods); 

২। বীর যোদ্ধাদের যুগ (Age of Heros) এবং 

৩। মানবের যুগ (Age of Men)। 


সেন্ট-সাইমন 

ফরাসী সমাজবিজ্ঞানী সেন্ট সাইমন ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মানুষের মাঝে সামাজিক অসাম্যের প্রতিকার খুঁজতে গিয়ে বলেন ‘উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তনের ফলে যদি আর্থিক কল্যাণ। বাড়ানো যায়, তবে সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনের ফলে সামাজিক কল্যাণ বাড়ানো যাবে না কেন? সেন্ট সাইমন মনে করেন যে, বিজ্ঞানের প্রয়োগের ফলে যদি প্রাযুক্তিক প্রগতি (Technological progress) হতে পারে তাহলে সমাজবিজ্ঞানের প্রয়োগের ফলে নিশ্চয়ই সামাজিক প্রগতি (Social progress) অর্জন করা সম্ভব। এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই সেন্ট সাইমন মানুষের দুঃখ দুর্দশা মােচনের জন্য এক নতুন বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তিনি সমাজবিকাশ ও সমাজ পরিবর্তনের সূত্রের একটি রূপরেখা প্রদান করেন। সেই সূত্র অনুসরণ করে পরবর্তীতে তারই ছাত্র ও অনুগামী অগাস্ট কোঁৎ ‘সমাজবিজ্ঞান’- এর প্রবর্তন করেন।


অগাস্ট কোঁৎ

ফরাসী সমাজবিজ্ঞানী অগাস্ট কোঁৎ ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। প্রতিষ্ঠা ও নামকরণের জন্য অগাস্ট কোঁতকে সমাজবিজ্ঞানের জনক বলে অভিহিত করা হয়। সমাজকে জানার জন্য একটি আলাদা বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা তিনি সেন্ট সাইমন থেকেই উপলব্ধি করেছিলেন। সমাজ অধ্যয়ন সম্পর্কিত বিজ্ঞানকে প্রথমে কোঁত 'Social physics' বা সামাজিক পদার্থবিদ্যা' নামে নামকরণ করেন। পরবর্তীতে তিনি এই শাস্ত্রকে Sociology বা সমাজবিজ্ঞান নামে নামকরণ করেন। অগাস্ট কোঁৎ মনে করেন যে, সমাজবিজ্ঞান হবে এমন একটি বিজ্ঞান যেখানে  এককভাবে সমাজ সম্পর্কিত সমস্যা, ঘটনা ও পরিস্থিতি বিষয়ে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা যাবে। তিনি তাঁর বিখ্যাত রচনা ‘Positive philosophy' গ্রন্থে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা বিকাশের তিনটি স্তরের (Three Stages) উল্লেখ করেছেন। মানবজ্ঞান বিকশিত হওয়ার মাধ্যমে সমাজেরও বিকাশ সাধিত হয়েছে। তিনি মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের তিনটি স্তরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সমাজেরও তিনটি স্তর ব্যাখ্যা করেছেন। 

মানবজ্ঞান বা সমাজ বিকাশের তিনটি স্তর হল: 

১। ধর্মতাত্ত্বিক স্তর (Theological Stage); 

২। অধিবিদ্যার স্তর (Metaphysical Stage) এবং 

৩। দৃষ্টবাদী স্তর (Positive Stage)। 

অগাস্ট কোঁৎ এর মতে, মানবচিন্তা ঐতিহাসিকভাবে ধর্মতাত্ত্বিক স্তর থেকে অধিবিদ্যার স্তর অতিক্রম করে দৃষ্টিবাদী স্তরে উপনীত হয়েছে। তাঁর মতানুসারে, মানবজ্ঞানের ধর্মতাত্ত্বিক স্তরে মানুষ সর্বপ্রাণবাদ (Animism) ধারণা থেকে ক্রমান্বয়ে একেশ্বরবাদে (Monotheism) বিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। উক্ত চিন্তার বশবর্তী হয়েই তিনি মানবতার ধর্মের (Religion of Humanity) ধারণাটির ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তবে তাঁর এ ধারণাটি সর্বজনগ্রাহ্য হয়নি। তবে কোতের মানবজ্ঞানের বিবর্তনভিত্তিক সমাজবিকাশের তিনটি পর্যায় অতিক্রম করে আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তার স্তরে মানুষের পদযাত্রা এক অপরিহার্য ও বাস্তব পরিণতি। অর্থাৎ কোঁত এর সমাজবিজ্ঞানের ধারণার ভিত্তিমূলে রয়েছে প্রথমে ধর্ম, দ্বিতীয় পর্যায়ে দর্শন (তথা অধিবিদ্যা) এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে বিজ্ঞানের অবদান। আর এভাবেই তিনি সমাজবিজ্ঞানের ভিত্তি রচনা করেছেন।


পরিশেষে বলা যায় যে, উপরিউক্ত চিন্তাবিদদের রচনা এবং চিন্তাধারা সমাজবিজ্ঞানের উদ্ভব ও বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিকা পালন করেছে। আজও অনেকে মনে করেন যে, সমাজবিজ্ঞান তার শৈশবকাল অতিক্রম করতে পারেনি। কিন্তু একথা জোর দিয়ে বলা যায় যে, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মত স্পষ্ট, নির্ভরযোগ্য কোনো তও হয়ত সমাজবিজ্ঞান দিতে পারেনি,  কিন্তু তাই বলে সমাজবিজ্ঞান সম্পূর্ণ বিজ্ঞান বিবর্জিত নয়। কারণ সমাজের বাস্তবতা বিশেষ করে শিল্পায়ন, নগরায়ন,  বিশ্বায়ন ইত্যাদি বিশ্লেষণে এর প্রয়োজনীয়তা ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে।

সমাজবিজ্ঞান সমাজ সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান দান করতে পারছে বলেই অল্প সময়ের মধ্যে শাস্ত্রটি ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। তবে শাস্ত্রটি ‘শূন্য’ হতে যাত্রা শুরু করেনি। রাজনৈতিক, দার্শনিক, ঐতিহাসিক, জৈবিক ও সংস্কারমূলক ধ্যানধারণার সার্বিক বিশ্লেষণই সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তির উল্লেখযোগ্য কারণ। বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী জিনস্বার্গ তাঁর Reason and Unreason in Society নামক গ্রন্থে সমাজতন্ত্রের অতীত ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে বলেছেন, সুস্পষ্টভাবে সমাজবিজ্ঞানের রয়েছে চারটি উৎপত্তিসূত্র, যথা রাজনৈতিক দর্শন, ইতিহাসের দর্শন, বিবর্তনের জৈবিকতত্ত্ব এবং সামাজিক জরিপ।' এগুলোই সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তিকে ত্বরান্বিত করেছে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *