পৌরনীতি কাকে বলে / পৌরনীতি কি
পৌরনীতি হল সামাজিক ও নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। পৌরনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Civics (সিভিক)। Civics শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Civics এবং Civitas শব্দ থেকে এসেছে। Civics এবং Civitas শব্দের অর্থ যথাক্রমে নাগরিক (Citizen) ও নগররাষ্ট্র (City State)। সুতরাং শব্দগত বা উৎপত্তিগত অর্থে Civics বা পৌরনীতি হল নগর রাষ্ট্রে বসবাসরত নাগরিকদের আচার-আচরণ, রীতিনীতি ও কার্যাবলি সংক্রান্ত বিজ্ঞান। তবে প্রাচীনকালে ভারতবর্ষে এবং গ্রীসে Civics বা পৌরনীতি বলতে নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্যকে বোঝানো হতো।
সংস্কৃত ভাষায় নগরকে (City) পুর’ বা ‘পুরী’ এবং নগরে বসবাসকারীদেরকে ‘পুরবাসী' বলা হয়। যার জন্য নাগরিক জীবনের অপর নাম ‘পৌর জীবন' একং নাগরিক জীবনের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কিত বিদ্যার নাম পৌরনীতি।
প্রাচীন গ্রিসে এক একটি নগর ছিল এক একটি রাষ্ট্র। রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল এথেন্স এবং স্পার্টা। এ নগর রাষ্ট্রগুলোর আয়তন ও জনসংখ্যা ছিল অত্যন্ত কম। নগর রাষ্ট্রের সকল জনগণকে নাগরিক বলা হতো না। কেবল নগর রাষ্ট্রের যারা রাজনৈতিক অধিকার ভােগ করতে অর্থাৎ রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনায় যারা অংশগ্রহণ করতো তাদেরকেই ‘নাগরিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো। উল্লেখ্য নারী, দাস ও বিদেশীরা এসব নগর রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে বিবেচ্য হতো না। এসব নগর রাষ্ট্রে বসবাসকারী নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্য, আচার-আচরণ, রীতিনীতি নিয়ে আলোচনা করা হতো পৌরনীতিতে। সুতরাং শব্দগত এবং মূলগত অর্থে পৌরনীতির ধারণা ছিল অনেকটা সীমিত ও সংকীর্ণ।
বর্তমানে পৌরনীতিকে কেবল শব্দগত অর্থে আলোচনা করা হয় না। কেননা, বর্তমান আধুনিক রাষ্ট্রগুলো গ্রিসের নগররাষ্ট্র (City State) এর মতো নয়, বরং এগুলো এখন জাতি রাষ্ট্র (Nation State) হিসেবেই পরিগণিত। প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রগুলোর অপেক্ষা বর্তমান আধুনিক জাতি রাষ্ট্রগুলো আয়তনে বড় এবং জনসংখ্যাও বেশি। এসব জাতি রাষ্ট্রের নাগরিকদের জীবন এবং কার্যাবলি জটিল ও বহুমুখী। আধুনিক জাতি রাষ্ট্রে নাগরিকদের ভূমিকা ও কার্যাবলি, আচার-আচরণ এবং তাদের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারাবাহিক পর্যালোচনার মাধ্যমে যে শাস্ত্র আদর্শ নাগরিক জীবনের জ্ঞান দান করে তাকেই পৌরনীতি বলে।
ই এম হোয়াইট (E.M. White) মনে করেন, “পৌরনীতি হল জ্ঞানের সেই শাখা যা এক জন নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং স্থানীয়, জাতীয় ও মানবসত্তার সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।” (Civics is that branch of human knowledge which deals with everything relating to a citizen- past, present and future; local, national and human.)
ফ্রেডরিখ জেমস গোল্ড (Frederick James Gould) বলেন, “পৌরনীতি হচ্ছে প্রতিষ্ঠান, আচরণ ও চেতনার অধ্যয়ন শাস্ত্র যার মাধ্যমে একজন পুরুষ বা নারী কোন একটি রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের সদস্য হিসাবে কর্তব্য পালন করতে পারে এবং এর সুযোগ-সুবিধাগুলো গ্রহন করতে পারে।” (Civics is the study of institutions, habits and spirit by means of which a man or women may fulfill the duties and receive the benefit of membership in a political community.)
Webster's International Dictionary তে বলা হয়েছে, “পৌরনীতি হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সেই শাখা, যা নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্য নিয়ে আলোচনা করে”। (Civics is that department of Political Science dealing with rights of citizenship and duties of citizen.) |
পৌরনীতির উপরোক্ত সংজ্ঞা ও ধারণা থেকে যেসব অর্থ ও প্রকৃতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তা নিয়ে ছকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হল-
সুতরাং পৌরনীতি হল সে শাস্ত্র যা নাগরিক, নাগরিকের কার্যক্রম, অধিকার ও কর্তব্য, নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত দিক এবং নাগরিকের সংগঠনসমূহ, রাষ্ট্র ও বিশ্বমানবতা সংক্রান্ত সকল বিষয়ের সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions