Home » » যুক্তিবিদ্যার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ

যুক্তিবিদ্যার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ

যুক্তিবিদ্যার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ

যুক্তিবিদ্যার উৎপত্তি ও বিকাশ (Origin and Development of Logic) : 

যুক্তিবিদ্যায় বৈধ চিন্তার নিয়ম, অনুমান ও সিদ্ধান্ত গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয় । সিদ্ধান্ত গঠনের বিষয়টি প্রথম সূত্রপাত হয় জ্যামিতিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে, ভূমি পরিমাপের মাধ্যমে । প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা বিকাশের শুরুর দিকেই অভিজ্ঞতামূলক ভাবে জ্যামিতিক সূত্র আবিষ্কৃত হয়। মিশরীয়রা এ সূত্রগুলোকে ভূমি পরিমাপের ক্ষেত্রে যেমন ব্যবহার করেছেন, তেমনি সুউচ্চ পিরামিড নির্মাণের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করেছেন। খৃস্টপূর্ব ১১ শতকে ব্যবিলনীয় সভ্যতায় যুক্তিবিদ্যায় সূত্র ও প্রমাণের ব্যবহার দেখা যায় । 

চীনে প্রায় ১০০০ খৃষ্টপূর্বাব্দে যুক্তিবিদ্যা চর্চার প্রমাণ পাওয়া যায়। কনফুসিয়াসের সমসাময়িক মোহিষ্ট সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা মোজি, যিনি মাষ্টার মোহ নামে পরিচিত, তাঁর আইন সম্পর্কিত গ্রন্থে বৈধ অনুমান ও সিদ্ধান্ত প্রতিপাদনের শতাবলি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এছাড়াও মোহবাদী সম্প্রদায়ের বাইরে যুক্তিবাদী পন্ডিতদের একটি দল আকারগত যুক্তিবিদ্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। 

প্রাচীন ভারতে বাইরের কোনো প্রভাব ছাড়াই স্বাধীনভাবে আকারগত যুক্তিবিদ্যা বিকাশ লাভ করে। ভারতীয় দর্শনের প্রতিটি সম্প্রদায়ের আলোচনার মূল কৌশল হলো যুক্তি, বিচার-বিশ্লেষণ ও মননশীলতা। ভারতীয় দর্শনে ন্যায় ও বৈশেষিক সম্প্রদায় সরাসরি যুক্তিবিদ্যা নিয়ে আলোচনা করেছে। চর্তুদশ থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত পূর্ব ভারত ও বাংলায় নব্য-ন্যায় নামক একটি সম্প্রদায় বিকাশ লাভ করে যারা অনুমানের আকারগত বিশ্লেষণ করেছেন। 

পাশ্চাত্য যুক্তিবিদ্যায় প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলকে যুক্তিবিদ্যার জনক বলা হয়। যদিও এরিস্টটলের পূর্ববর্তী পন্ডিত ও দার্শনিকগণ প্ররোচক যুক্তি (persuasive argument) গঠনে এবং অন্যের যুক্তি খন্ডনে বেশি আগ্রহী ছিলেন। এরিস্টটলই প্রথম যুক্তিবিদ্যাকে একটি পদ্ধতিগত জ্ঞানশাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। যুক্তিবিদ্যায় এরিস্টটলের বড় অবদান হলো সহানুমান। তাঁর যুক্তিবিদ্যা আকারগত যুক্তিবিদ্যা হিসেবে পরিচিত। এরিস্টটলের আকারগত যুক্তিবিদ্যায় পদ (term) মৌলিক উপাদান হিসেবে স্বীকৃত এবং একটি যুক্তি ভাল কী মন্দ তা নির্ভর করে যুক্তিটিতে পদগুলো কিভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে তার উপর । 

এরিস্টটলের মৃত্যু-পরবর্তীকালে স্টোয়িক দর্শনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ক্রিসিপ্লাস (২৮০-২০৬ খ্রিস্টপূর্ব) যুক্তিবিদ্যার বিকাশ ঘটান যার প্রধান বিষয় ছিল সমগ্র যুক্তিবাক্য (whole proposition)। ক্রিসিপ্লাস মনে করে যে, প্রতিটি বচন সত্য বা মিথ্যা হবে এবং যৌগিক বচনের সত্যতা-মিথ্যাত্ব নির্ভর করে অঙ্গ বচন বা উপাদান বচনের সত্যতা বা মিথ্যাত্বের উপর । ক্রিসিপ্লাস পাঁচটি মৌলিক বা বৈধ অনুমানের কাঠামো নিয়ে আলোচনা করেছেন। 

ক্রিসিপ্পাসের মৃত্যুর পর অধিকাংশ যুক্তিবিদই এরিস্টটল ও ক্রিসিপ্লাসের যুক্তিবিদ্যার উপর আলোচনা ও সমালোচনা গ্রন্থ লেখেন। এর মধ্যে বিথীয়াস উল্লেখযোগ্য। আল-ফারবী (৮৭৩-৯৪০ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন এরিস্টটলীয় যুক্তিবিদ্যার একজন প্রধান সমর্থক। তিনি ধারণা (concepts), অবধারণ (judgements), যুক্তি, যুক্তিবিদ্যা ও ব্যাকরণের সম্পর্ক, অএরিস্টটলীয় অনুমান, শৰ্তমূলক সহানুমান ও সাদৃশ্যানুমান নিয়ে বিস্তারিত আলোচানা করেন। ইবনে সিনা (৯৮০-১০৭৩ খ্রিস্টাব্দ) এরিস্টটলীয় যুক্তিবিদ্যার পরিবর্তে আবেসিনীয় যুক্তিবিদ্যার প্রচলন করেন। তিনি শৰ্তমূলক সহানুমান, বাচনিক ক্যালকুলাস ও আরোহ যুক্তি পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ব্রিটিশ দার্শনিক জে.এস.মিল মুসলিম যুক্তিবিদ ফখর আল-দ্বীন আল-রাজী দ্বারা বিশেষ ভাবে প্রভাবিত ছিলেন। 

মধ্যযুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক হলেন পিটার আবেলার্ড (১০৭৯-১১৪২ খ্রি:)। আবেলার্ড এরিস্টটলীয় যুক্তিবিদ্যা পুর্নগঠন ও পুন:ব্যাখ্যা করেন। আবেলার্ড বস্তুগতভাবে বৈধ যুক্তি ও আকারগতভাবে বৈধ যুক্তির মধ্যে পার্থক্য করেন এবং বলেন যে, শেষ পর্যন্ত আকারগতভাবে বৈধ যুক্তিই গ্রহণযোগ্য। মধ্যযুগের যুক্তিবিদ্যায় সবচেয়ে মৌলিক অবদান রাখেন উইলিয়াম অব ওকাম (১২৮৫-১৩৪৭)। তিনি প্রকরণ যুক্তিবিদ্যার উন্নতি ঘটান; শব্দ, পদ ও বচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। 

আধুনিক যুগের দার্শনিক লাইবনিজের আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় চারশত বছর যুক্তিবিদ্যার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, চার্চের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা পায় । লাইবনিজ (১৬৪৬-১৭১৬) যুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত চিন্তার ক্যালকুলাস সম্পর্কিত ধারণার অবতারণা করেন । লাইবনিজ মনে করেন যে, মানুষের প্রচলিত সাধারণ ভাষায় দ্ব্যর্থকতার সুযোগ রয়েছে; তাই মানব চিন্তনের বিশ্বজনীন বর্ণমালা (alphabet of human thought) প্রণয়ন করা প্রয়োজন। তিনি প্রতীকী ভাষা প্রণয়ন করনে যা ধর্মতত্ত্ব, দর্শন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। এজন্য লাইবনিজকে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার জনক বলা হয় । লাইবনিজের প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার প্রসার ঘটান বার্নার্ড বলজানো (১৭৮১-১৮৪৮)। বলজানো আধুনিক প্রমাণ তত্ত্বের মৌলিক ধারণা প্রণয়ন করেন। 

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যুক্তিবিদ্যার অকল্প অগ্রগতি সাধিত হয়। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন কতিপয় দার্শনিক ও গণিতবিদ। প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার বিকাশে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন অগাস্টাস ডি মরগ্যান (১৮০৬-১৮৭১), জর্ডবুল (১৮১০-১৮৬৪), উইলিয়াম স্ট্যানলি জেভন্স (১৮৩৫-১৮৮২), জন ভেন (১৮৩৪-১৯২৩) প্রমুখ যুক্তিবিদ। একই সময়ে ব্রিটিশ দার্শনিক জে. এস. মিল (১৮০৬-১৮৭৩) আরোহ পদ্ধতির বিকাশ ঘটান। 

আটলান্টিকের অপর তীরে আমেরিকান দার্শনিক সি.এস.পার্স, (১৮৩৯-১৯১৪) সম্বন্ধ যুক্তিবিদ্যার বিকাশ ঘটান, প্রতীকী মানক আবিষ্কার করেন এবং বাচনিক যুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে সত্য সারণি পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। সত্য-সারণি পদ্ধতির পরিপূর্ণতা দান করেন এমিল লিওন পোস্ট (১৮৯৭-১৯৫৪) এবং লুডভিগ ভিটগেনস্টাইন (১৮৮৯-১৯৫১)। আমরা ইউনিট-১২ এ সত্য সারণি নিয়ে আলোচনা করবো।

উনিশ শতকের শেষ দিকে আধুনিক গাণিতিক যুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠা করেন জার্মান দার্শনিক গটলব ফ্রেগে (১৮৪৮-১৯২৫)। এরিস্টটলীয় পরবর্তী সময়ে ফ্রেগেকে বলা হয় শ্রেষ্ঠ যুক্তিবিদ। বাট্রান্ড রাসেল (১৮৭২-১৯৭০) ও এ.এন. হােয়াইট হেড (১৮৬১-১৯৪৭) তাঁদের Principia Mathematica গ্রন্থে দেখান যে, গণিতকে যুক্তিবিদ্যায় রূপান্তর করা যায়। 

বিশ শতকের যুক্তিবিদগণ যুক্তিবিদ্যার ভাষাকে আকারগত ভাষা হিসেবে বিবেচনা করেন। এদের মধ্যে কুর্ট গোডেল, আলফ্রেড টার্সকি, রুডলফ কারনাপ, এলেঞ্জো চার্চ প্রমুখ যুক্তিবিদ উল্লেখযোগ্য। সমকালীন যুক্তিবিদগণ কিভাবে কম্পিউটার প্রোগামিং তৈরী করা যায় এবং কিভাবে কম্পিউটারের জন্য নতুন নতুন ভাষা তৈরী করা যায় তা নিয়ে কাজ করছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (artificial intelligence) সমকালীন যুক্তিবিদদের গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

0মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Basic Computer Course

MS Word
MS Excel
MS PowerPoint
Bangla Typing, English Typing
Email and Internet

Duration: 2 months (4 days a week)
Sun+Mon+Tue+Wed

Course Fee: 4,500/-

Graphic Design Course

Adobe Photoshop
Adobe Illustrator

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 9,000/-

Web Design Course

HTML 5
CSS 3

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 8,500/-

Video Editing Course

Adobe Premiere Pro

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 12,000/-

Digital Marketing Course

Facebook, YouTube, Instagram, SEO, Google Ads, Email Marketing

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 15,000/-

Advanced Excel

VLOOKUP, HLOOKUP, Advanced Functions and many more...

Duration: 2 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 6,500/-

Class Time

Morning to Noon

1st Batch: 08:00-09:30 AM

2nd Batch: 09:30-11:00 AM

3rd Batch: 11:00-12:30 PM

4th Batch: 12:30-02:00 PM

Afternoon to Night

5th Batch: 04:00-05:30 PM

6th Batch: 05:30-07:00 PM

7th Batch: 07:00-08:30 PM

8th Batch: 08:30-10:00 PM

Contact:

Alamin Computer Training Center

796, West Kazipara Bus Stand,

West side of Metro Rail Pillar No. 288

Kazipara, Mirpur, Dhaka-1216

Mobile: 01785 474 006

Email: alamincomputer1216@gmail.com

Facebook: www.facebook.com/ac01785474006

Blog: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল*

বার্তা*