সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কি বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কাকে বলে?
পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই বিভিন্ন ধর্মীয় জাতি, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করে। প্রতিটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় রীতি-নীতি, আচার-আচরণ, সংস্কৃতি ভিন্ন ভিন্ন হলেও এক সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায়ের সাথে বিরোধ করে না, সমাজের লোকদের মাঝে এমন ভাবনাই হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি।
ইসলাম অন্য সব ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি উদার। পারস্পরিক সম্প্রীতি রক্ষায় ইসলাম শান্তিময় আন্তঃধর্মীয় নীতিমালা নির্ধারণ করেছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ইসলামের ভূমিকা অনুপম।
সামাজিক সাম্য
ইসলামি রাষ্ট্রে যে কোন ধর্মীয় বা জাতিগত সম্প্রদায়ের লোকেরা মানুষ হিসেবে মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত মর্যাদায় সমান । মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সম্মানিত করেছেন এবং তাঁর অন্যান্য অনেক সৃষ্টির ওপরে মানুষকে স্থান দিয়েছেন। ধর্মীয়, গোত্র, বর্ণ ইত্যাদি বিবেচনায় কারো মানবিক মর্যাদা বিনষ্ট করা নিষিদ্ধ। সবার সাথে সম্প্রীতির সাথে বসবাস করতে হবে। কুরআনের ঘোষণা,
يَأَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَكُمْ شُعُوْبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا
“হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার।” (সূরা হুজুরাত ৪৯ : ১৩)
মানবতার মাঝে ঐক্য স্থাপন
ইসলাম মানবতার মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমাদের সমাজে অমুসলিম সম্প্রদায়ের বহু লোকজন বসবাস করেন। এদের কেউ আমাদের সহপাঠী, কেউ সহকর্মী, কেউ খেলার সাথী, কেউবা প্রতিবেশি আবার কেউ শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজন। তাদের সকলের সাথেই ভালো ব্যবহার করতে হবে। ইসলাম সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায় না। তাই ধর্মীয়, গোত্র, বর্ণ ইত্যাদি বিবেচনায় কারো সাথে বিভেদ করা যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন- " সমস্ত মানুষ এক জাতি।” (সূরা বাকারা ২ : ২১৩)
ধর্মীয় সম্প্রীতি
ইসলাম সবার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দিয়ে থাকে। তাই তাদের ধর্মগ্রন্থ, উপাসনালয়, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে ঠাট্টা- বিদ্রূপ করা যাবে না। ধর্ম পালনে তাদের বাধা দেওয়া যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন- “দীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই।” (সূরা বাকারা ২ : ২৫৬)
ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার ঘটনা লক্ষ করা যায়। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আসে এমন কোনো মন্তব্য না করা এবং সবার ধর্মীয় উপাসনালয়সমূহের রক্ষণাবেক্ষণ করা ইসলামের শিক্ষা । সুবিচার প্রতিষ্ঠা বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সব সম্প্রদায়ের লোক সমান সুযোগ প্রাপ্ত হবে। ধর্মীয়, গোত্র, বর্ণ বিবেচনায় কারো উপর কোনো ধরনের অবিচার করা যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَانُ قَوْمٍ عَلَى إِلَّا تَعْدِلُوا اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى
“কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে কখনও সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে, সুবিচার করবে, এটি তাকওয়ার অধিক নিকটবর্তী।” (সূরা মায়িদা ৫ : ৮)
জীবন-সম্পদ ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তা প্রদান
ইসলাম সব মানুষের জীবন, রক্ত, সম্পদ ও সম্মানের নিরাপত্তা প্রদান করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে কারো প্রতি কোনোরূপ অত্যাচার করা যাবে না। অন্য ধর্মাবলম্বীর সম্পদ দখল করা যাবে না। সকলের জান-মাল-ইজ্জত আবরু সংরক্ষণ করতে হবে। রাসূলূল্লাহ (স.) এ বিষয়ে মুসলিমগণকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যে ব্যক্তি কোনো চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমকে হত্যা করল সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।” (বুখারি)
উত্তম আচরণ
কথায় বলে, ব্যবহার বা আচরণে বংশের পরিচয়। ধর্মের পরিচয়ও অনেকটা নির্ভর করে আচরণের ওপর। ইসলামের অনিন্দ্য সুন্দর আচরণে অভিভূত হয়ে যুগে যুগে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে। ইসলাম সবার সাথে উত্তম আচরণ করতে নির্দেশ দেয় । অমুসলিমদের সাথেও উত্তম আচরণ করতে নিষেধ করে না। তাদের পক্ষ থেকে স্পষ্ট শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ডের নিদর্শন না পাওয়া পর্যন্ত তাদের সাথে উত্তম আচরণ করা আল-কুরআনের ঘোষিত ইসলামের অন্যতম মূলনীতি ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions