সালাত কাকে বলে
‘নামায' শব্দের আরবি পরিভাষা ‘সালাত’। এটি যখন আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত হয় তখন এর অর্থ হয় রহমত, অনুগ্রহ বা দয়া । যখন রাসূলুল্লাহ (স.)-এর সাথে সম্পর্কিত হয় তখন এর অর্থ হয় দরুদ। এর সাথে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক করা হলে এর অর্থ দাঁড়ায় দুআ, ক্ষমা প্রার্থনা, আবেদন বা চাওয়া। আর সালাত যখন ফেরেশতাদের সাথে সম্পৃক্ত হয় তখন এর অর্থ হয় ইসতিগফার বা ক্ষমা, তাসবীহ বা পবিত্রতা বর্ণনা করা। প্রতিদিন সূর্যোদয়ের আগে, মধ্যাহ্নে, অপরাহ্নে, সূর্যাস্তের পর ও রাতে আল্লাহ নির্ধারিত পদ্ধতিতে কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ, রুকু, সিজদা, তাশাহুদ, কিয়াম ও শেষ বৈঠকের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের জন্য যে আমল করা ফরয করেছেন, তাকে সালাত বলে। প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত সালাত হল ফজর, যুহর, আসর, মাগরিব ও ইশা। সালাত অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ আমল। যেমন, কুরআন মাজীদে বহু আয়াতে আল্লাহ তাআলা সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-“তোমরা সালাত কায়িম কর।” (সূরা বাকারা ২ : ৪৩)
সালাত ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিক বুনিয়াদ। একজন মানুষ মুসলিম নাকি অমুসলিম এর বাহ্যিক পরিচয় হলো সালাত। মুসলিম সালাত আদায় করে কিন্তু অমুসলিম সালাত আদায় করে না। মহানবি (স.) ইরশাদ করেন—“ইমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত।” (তিরমিযি)
সালাত ইমান ও ইসলামের নিদর্শন। কেউ ইসলাম গ্রহণ করেছে কিনা, ইমান এনেছে কিনা তা সালাতের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “প্রতিটি বস্তু বা বিষয়েরই নিদর্শন রয়েছে আর ইমানের নিদর্শন হলো সালাত।” সালাতের মাধ্যমে প্রতিদিন পাঁচবার মুমিন আল্লাহ তাআলার দীদার লাভের অভিজ্ঞতায় ধন্য হয়। সে আল্লাহ তাআলার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর সাথে বাক্যালাপের সুযোগ পায় প্রিয়নবি (স.)এ জন্যই বলেছেন, “সালাত মুমিনগণের মি'রাজস্বরূপ।” (সুনানে ইবন মাযাহ)
সালাতে একজন মুসলিম সরাসরি নিজের সকল আবেগ ও আনুগত্যের প্রকাশ করতে পারে। নিজের সকল চাওয়া আল্লাহ তাআলার নিকট পেশ করতে পারে। সালাতের কারণে ব্যক্তি কখনও নিজেকে আল্লাহর নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবতে পারে না।
মানুষের সকল বৈষয়িক কাজের মধ্যে তো বটেই এমনকি ইসলামের সকল ইবাদাতের মধ্যেও সালাত সর্বোত্তম। এ কারণেই এক সাহাবী (রা) যখন হযরত রাসূল (স.)কে জিজ্ঞেস করলেন, সর্বোত্তম ইবাদত কোনটি ? তখন রাসূল (স.) বললেন— সময় মতো সালাত আদায় করা। (সহিহ বুখারি)
কিয়ামাতের দিন ভয়ানক অন্ধকারময় হবে। সে সময় সালাত আদায়কারী সফল হবে। সালাতের আলো তাঁকে পথ দেখাবে। রাসূল (স.) বলেন-
مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهُ نُورًا وَبُرْهَانَّا وَنَجَاةً مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“যে ব্যক্তি যথাযথভাবে সালাত সংরক্ষণ করে, তা তার জন্য কিয়ামতে নূর দলিল ও মুক্তির উপায় হবে। ককূলকৃত সালাতের মাধ্যমে ব্যক্তি জান্নাত লাভ করবে। রাসূল (স.) বলেন, সালাত বেহেশতের চাবি। [মিশকাত] তাই যে ব্যক্তি সঠিকভাবে সালাত আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশের এই চাবি লাভ করবে। যে সালাত আদায় করবে না, জান্নাতের চাবি থেকে সে বঞ্চিত হবে। তাই সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হযরত রাসূলুল্লাহ (স) এর ঘোষণা থেকে জানা যায়, যথাযথভাবে সালাত আদায়ে পাঁচটি বিশেষ পুরস্কার লাভ হয়। যেমন— জীবিকার কষ্ট দূর, কবরে সহজ প্রশ্ন, কবর আযাব মাফ, বিদ্যুৎ গতিতে পুলসিরাত পার ও জান্নাত লাভ। (সহীহ বুখারী)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions