তাকওয়া কি বা তাকওয়া কাকে বলে
ইসলামে মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হল সুন্দর চরিত্র। আর সুন্দর চরিত্র অর্জনের বিষয়টি একান্তভাবে যে বিষয়ের উপর নির্ভর করে, তা হল তাকওয়া। মানুষের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনে তাকওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ ভূমিকা পালন করে। এখানে তাকওয়ার পরিচয় এবং গুরুত্ব ও প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হল ।
তাকওয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো বিরত থাকা বা সতর্ক থাকা। আত্মশুদ্ধি, বেঁচে থাকা, আত্মরক্ষা, সংযত হওয়া, ভয় করা প্রভৃতি। তবে সাধারণভাবে তাকওয়া ব্যবহৃত হয় ‘আল্লাহভীতি' অর্থে ।
ইমাম গাযালি বলেন, “আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে যাবতীয় অসৎকর্ম বর্জন করে সৎকর্ম সম্পাদনই হলো তাকওয়া।” সুফিগণ বলেন, “পরকালীন জীবনে ক্ষতিকর বিবেচিত হতে পারে এমন সবরকমের বস্তু ও বিষয় থেকে বিরত থাকাই তাকওয়া।” মোটকথা, তাকওয়া হলো প্রথমত, শিরক থেকে বিরত থেকে স্থায়ী শাস্তি থেকে আত্মরক্ষা করা। দ্বিতীয়ত, গুনাহে লিপ্ত করে বা গুনাহের জন্যে উদ্বুদ্ধ করে এমন কাজ থেকে বিরত থাকা এবং চূড়ান্তভাবে যে সকল বস্তু ও বিষয় মানুষকে আল্লাহ্র ব্যাপারে গাফিল করে দেয়-তা বর্জন করা।
তাকওয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য :
সৎকর্মের প্রেরণা
ইসলামি জীবনদর্শনে তাকওয়াই সব সদগুণের মূল। অন্তরে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি থাকলেই মানুষ কেবল সৎকর্ম সম্পাদনে উৎসাহী হয়।
চরিত্র গঠন
মানুষের চরিত্র গঠন ও সুরক্ষায় তাকওয়া এক সুদৃঢ় দুর্গ স্বরূপ। যে ব্যক্তি আল্লাহর অসন্তুষ্টির ভয় করে তার পক্ষে খারাপ কাজ করা সম্ভব নয়। তাকওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা লাভ সম্ভব হয়।
আল্লাহর ভালোবাসা ও নৈকট্য লাভ
আল্লাহর ভালোবাসা ও নৈকট্য লাভ করতে হলে তাকওয়া অর্জন করতে হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ
“নিশ্চয় আল্লাহ তাকওয়াবানদের ভালোবাসেন।” ( সূরা আলে ইমরান ৩: ৭৬)
তাকওয়াবিহীন ইবাদত মূল্যহীন ও কবুলের অযোগ্য। আল্লাহ বলেন— “আল্লাহর কাছে পৌঁছে শুধু তোমাদের তাকওয়া।”
( সূরা হাজ্জ ২২: ৩৭) কাজেই ইবাদতের মূল বিষয় হলো তাকওয়া।
তাকওয়া ছাড়া ইমান পূর্ণ হয় না । ইমানের পূর্ণতার জন্য প্রয়োজন পরিপূর্ণ তাকওয়া । আল্লাহ বলেন- “আল্লাহকে ভয় কর। যেমন ভয় তাঁকে করা উচিত।” আল্লাহ তায়ালা বলেন-
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَنقَكُمْ
‘তোমাদের মধ্যে যে বেশি তাকওয়াবান, সুনিশ্চিতভাবেই আল্লাহর নিকট সে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি।” (সূরা হুজুরাত ৪৯:১৩)
কাজেই তাকওয়ার মাধ্যমে মানুষ শ্রেষ্ঠত্বের আসীনে সমাসীন হয়।
নৈতিক লাভ
তাকওয়া ব্যক্তিকে তার সকল দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠাবান ও আন্তরিক করে তোলে । তাকওয়া মানুষকে সুশীল, শোভন ও চরিত্রবান করে গড়ে তোলে । যা তাকে সবার ভালোবাসার পাত্রে পরিণত করে।
তাকওয়াবান মানুষ অন্যায়, অবিচার, পাপাচারমুক্ত জীবনযাপন করে বলে তাদের সমন্বয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজ গড়ে ওঠে তাকওয়া ব্যক্তিকে কর্তব্যে নিষ্ঠাবান ও আন্তরিক করে তোলে বলে সমাজের উন্নতি সাধিত হয়।
তাকওয়া ব্যক্তিকে ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করে। আল্লাহ বলেন- “তোমরা ন্যায়বিচার কর, এটি তাকওয়ার অতি নিকটবর্তী।” (সূরা মায়িদা ৫:৮)
বস্তুত তাকওয়া হলো একটি মহৎ গুণ। মানুষ যখন নিঃসঙ্গ অবস্থায় থাকে বা ভাবনা চিন্তায় পাপাচারী হয়ে ওঠে, তখন তাকে অন্যায় থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে তাকওয়া। এভাবে প্রতিজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত পবিত্রতা তার পরিবার ও সমাজকে ও পবিত্র করে তোলে ।
জান্নাত লাভ
তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে মানুষের জান্নাত লাভের পথ সুগম হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন
وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى . فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِي الْمَأْوَى
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এব প্রবৃত্তি হতে নিজেকে বিরত রাখে তার স্থান হবে জান্নাত।” (সূরা নাযিআত ৭৯: ৪০-৪১) সুতরাং তাকওয়া জান্নাত লাভের নিশ্চয়তা দেয় ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions