চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি
কর্নওয়ালিস যখন এদেশের শাসনভার গ্রহণ করেন, তখন বাংলার ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থায় দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার অন্ত ছিল না। এর আগের গভর্নর হেস্টিংস রাজস্ব আদায়ের জন্য পাঁচসনা বন্দোবস্ত (১৭৭২ খ্রি:) চালু করেছিলেন। এতে ভূমি রাজস্ব নিলাম করা হতো। শেষ পর্যন্ত যিনি সর্বোচ্চ দরদাতা হতেন তিনিই জমির মালিক হতেন। এ ব্যবস্থায় উচ্চহারে নিলাম ডাক নিয়ে জমির বন্দোবস্ত নিলেও সে অনুপাতে রাজস্ব আদায় না হওয়ার পাশাপাশি সময়সীমা থাকায় জমিদারগণ প্রজাপীড়ন করলেও ভূমির উন্নয়ন করেনি। ফলে বছরের পর বছর কৃষকগণ জমি চাষ থেকে বিরত থাকে। এই সব জমি বছর ধরে অনাবাদী অবস্থায় পড়ে থাকে। সময়ের আবর্তে এসব জমির দাম কমে যেত। এই কুফল দূর করতে হেস্টিংস জমিদারগণের সাথে ‘একসনা' ব্যবস্থা চালু করেন, কিন্তু তাতেও বিশেষ সুফল হয়নি। এখানেও সরকার, জমিদার ও প্রজাদের অসুবিধা দেখা দেয়। ফলে কর্নওয়ালিস দশসনা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন (১৭৮৯ খ্রি.)। সাথে সাথে কর্নওয়ালিস এ বন্দোবস্ত চিরস্থায়ী হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে স্যার জন শোরের সাথে কর্নওয়ালিসের নানা তর্ক বিতর্ক হয়েছিল । অবশেষে কোম্পানি বোর্ড অব ডিরেক্টর্স এর অনুমোদন লাভের পর কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ সালে দশসালা বন্দোবস্তকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত অনুসারে রাজস্বের পরিমাণ চিরদিনের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে জমির উপর জমিদারদের মালিকানা, ক্ষমতা এবং আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। জমি হস্তান্তর বা দান করার ক্ষমতাও লাভ করেছিলেন তারা। অন্যদিকে জমিদারগণ নিজ খুশী মত শর্ত সাপেক্ষে জমি পত্তন বা ইজারা দেয়ার ক্ষমতাও লাভ করেছিলেন। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র শুল্ক আদায়ের ক্ষমতা, বিচার ও পুলিশী ক্ষমতা বাদে প্রায় সব ক্ষমতাই চলে যায় জমিদারদের হাতে। নামে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হলেও এই ব্যবস্থায় জমির রাজস্ব কিস্তি নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের পূর্বে দিতে সক্ষম না হলে জমি নিলামে বিক্রি করার বিধান ছিল। ইতিহাসে এ অনৈতিক নিয়ম ‘সূর্যাস্ত আইন' নামে পরিচিতি পায়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল ও কুফল নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এক্ষেত্রে সুফলের পাশাপাশি কুফলও ছিল চোখে পড়ার মত । বলতে গেলে এর নামমাত্র সুফলগুলো কুফলের নিচে চাপা পড়ে গিয়েছিল।
0মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions