ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ সম্পর্ক
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ও বাংলাদেশ সম্পর্কের সূত্রপাত হয় ১৯৭৩ সালে। এ সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে সুদৃঢ় হয়। ২২ মে, ২০০১ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদর দপ্তর ব্রাসেলসে ইইউ ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ হল বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার। বাংলাদেশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহে তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাতদ্রব্য, চা, চামড়া ও চামড়াজাতদ্রব্য, কাগজ ও নিউজপ্রিন্ট, হিমায়িত খাদ্য এবং হস্তশিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানি করে থাকে। আবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ হতে বাংলাদেশ খাদ্য শস্য, যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা, পরিবহন ও যানবাহনের যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্য, ঔষধপত্র এবং লৌহ ও ইস্পাতজাত দ্রব্য আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের একটি বিশাল অংশ সম্পন্ন হয় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে ।
১৯৯৯-২০০০ অর্থ বছরে বাংলাদেশ থেকে মোট ৫৭৫ কোটি ২২ লাখ মার্কিন ডলার সমমূল্যের ২৮ হাজার ৮১৮ কোটি ৫২ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ৪৬ শতাংশ পণ্য রপ্তানি করা হয় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত সদস্য রাষ্ট্রে। সম্প্রতি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত ৪৮টি দেশকে তাদের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সার্কভুক্ত দেশসমূহের জন্য একটি বিশেষ সুবিধা ‘সার্ক কিমিউলেশন’ প্রদান করেছে। বাংলাদেশ সার্কের সদস্য হওয়ায় উক্ত সুবিধাটি পাওয়ার অধিকার রাখে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ বাংলাদেশকে জিএসপি (Generalised Preference System) সুবিধা প্রদান করেছে। এর ফলে বাংলাদেশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহে পণ্য রপ্তানিতে জিএসপি'র আওতায় শতকরা ১২.৫% শুল্ক রেয়াত সুবিধা পাচ্ছে। বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধার আওতায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে তৈরি পোশাক রপ্তানি করছে। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ৯.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশে ৪ জানুয়ারি, ১৯৯৯ সালে প্রথম ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একক মুদ্রা ‘ইউরো' লেনদেন শুরু করে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মূলত অর্থনৈতিক জোট এবং বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কই বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ইইউ'র বলিষ্ঠ ভূমিকা রয়েছে। অর্থাৎ ইউরোপিয়ান ইউনিয় এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions