পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ
বাংলাদেশে মোট ৬৪টি জেলার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩টি জেলার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের দেখভাল ও সমন্বয় সাধন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হয়। ১৯৯৮ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনানুসারে, ১৯৯৯ সালের ২৭শে মে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলার পুরো এলাকার স্থানীয় শাসনের কাজকর্ম তদারকি করার জন্য এই বিশেষ ধরনের আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হয়। ১ জন চেয়ারম্যান, ১২ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সদস্য, ৬ জন অ- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সদস্য, ২ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী সদস্য, ১ জন অ- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী সদস্য এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের ৩ চেয়ারম্যানসহ সর্বমোট ২৫ জন সদস্য সমন্বয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হবে। চেয়ারম্যান হবেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী থেকে। ১২ জন রুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সদস্য হবেন আইনানুসারে পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গোষ্ঠী থেকে। অ-ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী সদস্য হবেন তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের অ- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারীগণের মধ্য থেকে। তিন পার্বত্য জেলার চেয়ারম্যানগণ পদাধিকার বলে এর সদস্য হবেন এবং তাদের ভোটাধিকার থাকবে। আঞ্চলিক পরিষদে সরকারের যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা থাকবেন। আঞ্চলিক পরিষদের মেয়াদ হবে ৫ বছর।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কার্যাবলি:
- তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে পরিচালিত সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড আঞ্চলিক পরিষদের আওতাধীন এবং আইন দ্বারা এদের উপর অর্পিত সকল বিষয়াদির সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় সাধন করে থাকে আঞ্চলিক পরিষদ ।
- পরিষদ পৌরসভাসহ সকল স্থানীয় সরকারসমূহের তত্ত্বাবধান ও তাদের কর্মকান্ডের সমন্বয় সাধন করে থাকে ।
- পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কার্যাবলির সার্বিক তত্ত্বাবধান করে থাকে।
- পার্বত্য জেলাসমূহের সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় করে থাকে।
- জাতীয় শিল্পনীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পার্বত্য অঞ্চলে ভারী শিল্প স্থাপনে লাইসেন্স প্রদান করে থাকে ।
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা এবং এনজিওদের কার্যাবলির সমন্বয় সাধন করে থাকে ।
- এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এ অঞ্চলের সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগোষ্ঠীর রীতি-নীতি, প্রথা, সংস্কৃতি ও সামাজিক ন্যায় বিচার ইত্যাদি সমুন্নত রাখার জন্য সকল ধরনের তত্ত্বাবধান করে থাকে ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও আয়ের উৎস:
প্রতি অর্থবছর শুরু হওয়ার আগে আঞ্চলিক পরিষদ ঐ বছরের সম্ভাব্য আয়-ব্যয় সম্বলিত বিবরণী বা বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদন করে থাকে।
নিম্নোক্ত উৎস হতে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে আঞ্চলিক পরিষদ তার তহবিল গঠন করে।:
- আঞ্চলিক পরিষদের উপর ন্যস্ত এবং তৎকর্তৃক পরিচালিত সকল সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত অর্থ বা মুনাফা ।
- পার্বত্য জেলা পরিষদের তহবিল হতে প্রাপ্ত অর্থ এবং এ অর্থের পরিমাণ সময়-সময় সরকার নির্ধারণ করবে।
- সরকারের নির্দেশে পরিষদের উপর ন্যস্ত অন্যান্য আয়ের উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ ।
- পরিষদের অর্থ বিনিয়োগ থেকে অর্জিত মুনাফা।
- সরকার বা অন্যান্য কর্তৃপক্ষের অনুদান ও ঋণ।
- কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান । পরিষদ কর্তৃক প্রাপ্ত যে কোনো অর্থ ।
এখানে উল্লেখ্য যে, কেন্দ্রীয় সরকার যদি কখনো আঞ্চলিক পরিষদ বা পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত কোনো আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে তা নিয়ে আঞ্চলিক পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের সহিত আলোচনা করবে এবং পরিষদের পরামর্শ বিবেচনাক্রমে আইন প্রণয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions