মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন
পটভূমি
ভারতবর্ষের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে ১৯০৯ সালের ভারত শাসন আইন বা মর্লি-মিন্টো সংস্কার আইন এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পূর্ববর্তী আইনসমূহ ভারতীয়দের প্রতিনিধিত্বের ব্যাপারে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ক্রমাগত ভারতীয়দের প্রতিনিধিত্ব বিধানের দাবি উত্থাপন করতে থাকে। কংগ্রেসের নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার উম্মেষ ঘটায়। অন্যদিকে, ভারতের মুসলমান সম্প্রদায়ও রাজনৈতিকভাবে নিজেদের সংগঠিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করে ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ'। এমনই এক পটভূমিতে ব্রিটিশ সরকারের ভারত সচিব লর্ড মর্লি এবং ভাইসরয় লর্ড মিন্টোর উদ্যোগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো আইন পাশ হয়।
মর্লে মিন্টো সংস্কার আইনের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ
১৯০৯ সালের মর্লি-মিন্টো আইন এর মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ ছিল নিম্নরূপ :
১. এ আইন দ্বারা কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। গভর্ণর জেনারেল ও তাঁর নির্বাহী পরিষদের ৭ জন সদস্য ছাড়াও সর্বাধিক ৬০ জন অতিরিক্ত সদস্য এতে অন্তর্ভুক্ত হন।
২. প্রাদেশিক আইনসভাসমূহেরও সম্প্রসারণ করা হয়। বড় প্রদেশের ক্ষেত্রে সর্বাধিক ৫০ জন এবং ছোট প্রদেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ জন সদস্য থাকার বিধান করা হয়।
৩. এ আইন দ্বারা কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক উভয় আইনসভার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। সদস্যরা বাজেট বা অর্থ বিল নিয়ে আলোচনা করার অধিকার লাভ করে।
৪. এ আইনে মুসলমান সম্প্রদায়ের দাবী অনুযায়ী তাদের জন্য ‘পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা' প্রবর্তন করা হয় ।
৫. কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন সভাগুলোতে নির্বাচনের মাধ্যমে ভারতীয় বেসরকারি সদস্যগণ নির্বাচনের বিধান করা হয়। তবে অধিকাংশ সদস্যই নির্বাচিত হতেন পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে।
৬. এই প্রথমবার প্রাদেশিক আইনসভাসমূহে সরকারি সদস্যদের স্থলে বেসরকারি সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করা হয়।
৭. এ আইনের মাধ্যমে প্রথমবারের মত গভর্ণর জেনারেল ও গভর্ণরের নির্বাহী পরিষদে ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্ত করার বিধান করা হয়।
মূল্যায়ন
১৯০৯ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইন পূর্ববর্তী সংস্কার আইনের তুলনায় অগ্রবর্তী পদক্ষেপ ছিল। যেমন- কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভাসমূহের সম্প্রসারণ ও ক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রাদেশিক আইনসভার বেসরকারি সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন, গভর্ণর জেনারেল ও গভর্ণরের নির্বাহী পরিষদে ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্তি ইত্যাদি। তবে ভারতীয়দের ক্রমবর্ধমান স্বরাজ বা স্বশাসনের দাবি পূরণে তা ব্যর্থ হয়। এ আইনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার স্বীকৃতি যা ভারতীয় রাজনীতিতে সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলে ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions