Home » » নব্য প্রস্তর যুগ

নব্য প্রস্তর যুগ

নব্য প্রস্তর যুগ

নব্য প্রস্তর যুগ (Neolithic Age):

‘নব্যপ্রস্তর' শব্দটি এসেছে ইংরেজি Neolithic প্রতিশব্দ থেকে। গ্রিক শব্দ Neo (নব > নতুন) এবং Lithos (পাথর) এর সমন্বয়ে Neolithic শব্দটির উদ্ভব। বিখ্যাত ইংরেজ প্রত্নতত্ত্ববিদ Sir John Lubbock ১৮৬৫ সালে প্রথম Neolithic শব্দটি ব্যবহার করেন। আনুমানিক ৮০০০-৩৫০০ খ্রিস্টপূর্ব অব্দের মধ্যে ও নিকট প্রাচ্যে নব্য প্রস্তরযুগের প্রথম বিকাশ ঘটে। অতঃপর ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল এবং অবশেষে খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দে ইংল্যান্ডে এ যুগের সূচনা হয়। সমাজ ও সভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাসে নব্য প্রস্তরযুগ একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। বিখ্যাত ইংরেজ ঐতিহাসিক গর্ডন চাইল্ড (Gordon Childe) খাদ্য-আহরণ পর্যায় থেকে খাদ্য উৎপাদনের জন্য কৃষিকাজে উত্তরণকে নব্য প্রস্তরযুগের বিপ্লব হিসেবে চিহ্নিত করেছেন । 

নিম্নে নব্য প্রস্তরযুগের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

ক) খাদ্য উৎপাদনের সূচনাঃ কৃষিকাজের মাধ্যমে নব্য প্রস্তরযুগের মানুষেরা খাদ্য-উৎপাদনমুখী এক সৃজনশীল যুগের সূচনা করে। প্রকৃতপক্ষে কৃষিকাজের সূচনা করাই ছিল প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানব সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উদ্ভাবন। এ সময়ের উৎপাদিত ফসল হল গম, যব, মটরশুঁটি, ডাল, কাউন, জোয়ার, মিষ্টি আলু, ভুট্টা, সীম, বরবটি, লাউ, নারকেল, খেজুর, জলপাই, ডুমুর, আঙ্গুর, এবং অসংখ্য লতা-পাতা, শাক-সবজি ইত্যাদি।

খ) পশু পালন: মানুষের শিকারের সঙ্গী হয়েছিল কুকুর। একপর্যায়ে কুকুর গৃহপালিত পশুতে পরিণত হয়। পশুর দুধ, মাংস এবং পাখির ডিম তাদের খাদ্যের অনিশ্চয়তা দূর করে এবং চামড়া বস্ত্রের চাহিদা মেটায়। এছাড়াও পরিবহন, ভূমিকর্ষণ, পশু-সংগ্রহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে পশুর ব্যবহার ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পশু-পাখির গৃহপালিতকরণ নবোপলীয় যুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য।

গ) গৃহ নির্মাণ: নব্য প্রস্তরযুগের শেষদিকে এসে গুহাবাসী মানুষ কৃত্রিম আবাসস্থল গড়ে তোলে। প্রথমে তারা বনের গাছপালা ও তৃণ দিয়ে কুড়েঘর নির্মাণ করতো। রোদ-বৃষ্টি, ঝড়সহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আত্মরক্ষার জন্য গৃহ ছিল নিরাপদ আশ্রয়স্থল। কালক্রমে মানুষ গৃহের বহুবিধ উন্নতি সাধন করেছিল ।

ঘ) হাতিয়ার: নব্য প্রস্তরযুগের হাতিয়ার অধিক মসৃণ, ধারালো, হালকা ও কার্যকরী করে তৈরি করা হত। হাতিয়ারের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্যই এ যুগকে নয়া পাথরের যুগ বলে অভিহিত করা হয়। এ যুগের শেষদিকে কৃষিকাজে লাঙলের ব্যবহারও শুরু হয় ।

ঙ) আবিষ্কার: নব্য প্রস্তরযুগের গুরুত্বপূর্ণ একটি কীর্তি হল চাকার আবিষ্কার। চাকার আবিষ্কার, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, পরিবহন এবং যুদ্ধকৌশলে (যুদ্ধে পাথর ব্যবহার) পরিবর্তন ঘটায়। কৃত্রিম পদ্ধতিতে আগুন জ্বালানোর কৌশল আয়ত্ত্ব এবং এর ব্যাপক ব্যবহার নব্য প্রস্তর যুগের অর্জন। মূলত চকমকি পাথর ছিল এ সময়ের মানুষের দিয়াশলাই। উদ্বৃত্ত ফসল সংরক্ষণ, রন্ধনকার্য, খাদ্য ও পানীয় সংরক্ষণ কাজে মৃৎপাত্র ব্যবহার করা শুরু হয়। নব্য প্রস্তরযুগের শেষপর্যায়ে এসে সীমিত আকারে তামার ব্যবহার শুরু হয়।

চ) বস্ত্রশিল্প: এ যুগে তাঁত বা বয়ন শিল্পের বিকাশ ঘটে। বয়নশিল্পে প্রথম শণ, পরে ভেড়া ও ছাগলের লোম, তুলা এবং শেষে রেশমগুটি কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ যুগে এশিয়াতে তুলা উৎপাদন শুরু হলে তাঁতশিল্পের অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয় ।

ছ) শ্রমবিভাজনঃ নব্য প্রস্তরযুগে শ্রমবিভাজন সংহত রূপ লাভ করে। এ সময় পুরুষেরা হাতিয়ার তৈরি, পশুপালন, শিকার, ঘরবাড়ি তৈরি ও কৃষিকাজ করত। নারীরা ফসল সংরক্ষণ, বস্ত্রবয়ন, মৃৎপাত্র তৈরি, সন্তান প্রতিপালন ও ঘরকন্যার কাজে ব্যস্ত থাকত।

জ) সামাজিক অবস্থা: নব্য প্রস্তরযুগে বিবাহ ও পরিবার ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এ সময়ে সংঘবদ্ধভাবে বসবাস অনিবার্য হওয়ায় মানুষ ক্ল্যান, পরিবার ও ট্রাইব গঠন করে। পরিবার নবোপলীয় যুগের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। নবোপলীয় যুগে মানুষের মধ্যে সত্যিকার অর্থে-সামাজিক শ্রেণিভেদ বা স্তরভেদ দেখা দেয়। দলপতির আবির্ভাব, যুদ্ধে পরাজিতদের দাসে পরিণতকরণ, ধর্মগুরু ও অভিজাত শ্রেণি সৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে সমাজে শোষক-শোষিত বা প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। ক্ষমতা, ধন-সম্পত্তি এবং মর্যাদাকে কেন্দ্র করেও সামাজিক স্তরভেদ প্রকট হয়ে ওঠে। নব্য প্রস্তরযুগে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার ব্যবস্থার প্রচলন ঘটে। ।

ঝ) ভাষা ও শিল্পকলার বিকাশ: নব্য প্রস্তরযুগে কথ্যভাষার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। মনের ভাব প্রকাশের জন্য কথা বা ভাষার ব্যবহার শুরু হয়। স্থাপত্য, ভাস্কর্য, চিত্রকলা, অঙ্কন, প্রভৃতি শাখায়ও বিকাশ লাভ করে ।

ঞ) ধর্ম ও যাদুবিদ্যাঃ নবোপলীয় যুগে রোগ-শোক, মৃত্যু, মৃত্যু-পরবর্তী জীবন, বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কীট- পতঙ্গ ও জীবজন্তুর হাত থেকে নিজেদের জীবন ও ফসল রক্ষা, শিকার, যুদ্ধজয়, শুভ-অশুভ ধারণা, আত্মা-প্রেতাত্মায় বিশ্বাস ইত্যাদি বিষয় থেকে যাদুবিদ্যা ও ধর্মবিশ্বাস প্রবল হয়ে ওঠে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *