নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু
ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশদেরকে বিতাড়িত করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামপন্থী রাজনীতিকদের মধ্যে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু অন্যতম। রাজনৈতিকভাবে নেতাজির পরিবার ছিল খুবই সচেতন। পারিবারিক কারণে অথবা তৎকালীন ভারতের উত্তপ্ত রাজনৈতিক আবহাওয়ার কারণে সুভাষ বসু ছোটবেলা থেকেই বিদ্রোহী ভাবাপন্ন হয়ে বড় হতে থাকে । কলেজ জীবন থেকেই তিনি ইংরেজ শাসিত ভারতের বিপন্নদশা দেখে মর্মযাতনায় ভূগতে থাকেন। বিশেষ করে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের পরে তিনি শোকে ম্যূহমান হয়ে যান এবং ভাবতে থাকেন যে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম ছাড়া আর কোনভাবেই ভারতের স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব না। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই সুভাষ বসু ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পদ্ধতির প্রশ্নে, কঠোর আন্দোলনের পক্ষে থেকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার অবিসংবাদিত নেতা মহাত্মা গান্ধীর সাথে দ্বিমত পোষণ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত উভয়ের রাজনৈতিক চিন্তাধারা দুটি স্বতন্ত্র ধারায় প্রবাহিত হতে থাকে। সুভাষ বসু ভারতের স্বাধীনতার জন্য কংগ্রেসের অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের বিরোধিতা করেন এবং স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সামরিক বাহিনীর ন্যায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেঙ্গল ভলান্টিয়ার কোর গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিনি খুব শক্তভাবে বিশ্বাস করতেন যে, ভারতবাসীর মধ্যে অফুরন্ত চিত্তশক্তি আছে; আর এ কারণেই ভারত এক দিন স্বাধীন হবে।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন বৃত্তান্ত
১৮৯৭ সনের ২৩ জানুয়ারি ভারত উপমহাদেশের অন্যতম বীর সন্তান স্বাধীনতাকামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু উড়িষ্যার কটক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। নেতাজির বাবার নাম জানকীনাথ বসু। তাঁর পিতা পেশায় ছিলেন একজন বিশিষ্ট আইনজীবী ও বঙ্গীয় বিধানসভার সদস্য। রাজনৈতিকভাবে নেতাজীর পরিবার ছিল খুবই সচেতন। পারিবারিক প্রভাবের কারণে হোক বা তৎকালীন ভারতে বিরাজমান উত্তপ্ত রাজনীতিক আবহাওয়ার কারণেই হোক, সুভাষ বসু কৈশোর থেকেই বিদ্রোহী ভাবাপন্ন ছিলেন। তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান লাভ করার পরও দেশসেবার ও স্বদেশের মুক্তির আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সরকারি চাকুরি গ্রহণ করেননি। সুভাষ চন্দ্র বসু ১৯৪৫ সনের ১৮ আগস্ট রহস্যজনক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন বলে সরকারিভাবে জানানো হয় ।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক চিন্তা
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক চিন্তা ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডের পুরোটা জুড়ে ছিল ভারতবাসীর মুক্তি। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে প্রত্যক্ষ সংগ্রামের মাধ্যমে ভারত একদিন স্বাধীন হবে। সামাজিক বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা, পরধর্ম- অসহিঞ্চুতার অবসান হবে। নিম্নে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কয়েকটি পদক্ষেপ তুলে ধরা হল-
- ১৯৩৮ সালে মহাত্না গান্ধীর বিরোধীতার মধ্যেই সুভাষ বসু কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন, গান্ধীর সাথে মতদ্বৈততার কারণে কংগ্রেস ত্যাগ করে অল ইন্ডিয়া ফরোয়ার্ড ব্লক নামে দল গঠন করেন ।
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪১ সালে সুভাষচন্দ্র বসু গোপনে ভারত ছেড়ে রাশিয়া চলে যান। রাশিয়া থেকে তিনি বার্লিন যান। সেখানে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের লক্ষ্যে জার্মানির সমর্থন লাভ করেন। সুভাষ বসু ভারতের জন্য একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করেন ।
- ১৯৪৩ সালে তিনি 'আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্ব নেন এবং আজাদ হিন্দ সরকার গঠন করেন।
- ১৯৪৪ এর মার্চ মাসে তাঁর বাহিনী বার্মা পৌঁছে যায় ।
- সুভাষ বসুর লক্ষ্য ছিল সামারিক অভিযানের মাধ্যমে ভারত থেকে ব্রিটিশদের বিতাড়িত করা।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions