সুষ্ঠু নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা
সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হল নির্বাচন কমিশন। উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নির্বাচনী সংস্থা সর্বেসবা। বাংলাদেশের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ এর বিকল্প নেই। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন স্থানীয় ও জাতীয় উভয় ধরনের নির্বাচনই করে থাকে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও হালনাগাদ, জনসচেতনতা তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম করে থাকে । নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার এ জন্য নির্বাচন কমিশন নিম্নরূপ ভূমিকা পালন করতে পারে-
সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন
ভোটার হল নির্বাচনের প্রাণ। ভোটার তালিকাতে সঠিকভাবে জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকের অন্তর্ভূক্তি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে ইতোপূর্বে সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। ২০০৭ সালে ড. এ টি এম শামসূল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন এ যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে সঠিক একটি তালিকা প্রণয়ন করেছিল। ফলে ২০০৮ সালে একটি শান্তিপূর্ণ ও সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতির একটি নির্বাচন হয় ।
রাজনৈতিক দলের সাথে মত বিনিময়:
রাজনৈতিক দলের সাথে মত বিনিময় করে সুষ্ঠু নির্বাচনের আবহ তৈরি করা নির্বাচন কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সকল মত ও পথের দলগুলির আস্থাভাজন হতে পারার মধ্যেই সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা অনেকাংশে নিহিত থাকে ।
দক্ষ কর্মী তৈরি:
নির্বাচন কমিশনের পরিসর অনেক বৃহৎ। কিন্তু প্রায়শই দক্ষ জনবলের অভাবে নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ সঠিক সময়ে যথাযথভাবে হয় না। ভোটাররা নানাভাবে হয়রানির স্বীকার হয়। তাছাড়া নির্বাচনী আচরণবিধি, আইন-কানুন সম্পর্কেও হালনাগাদ তথ্য অনেকের জানা থাকে না ।
স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যথাযথ সমন্বয়:
সাংবিধানিকভাবেই শাসন বিভাগ নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা করবে বলে লিপিবদ্ধ রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের সময় অনেক ক্ষেত্রেই নানা কারণে স্থানীয় প্রশাসন অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ কোনঠাসা হয়ে পড়ে। ফলে নির্বাচনের সময় একটি সমন্বয়হীনতার অভাব দেখা দেয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় নির্বাচন কার্যালয়কে ক্ষমতা অর্পণ করা হলে সমন্বয় সুষ্ঠু হবে বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন।
ভোটাদের সাথে মত বিনিময় :
সচেতন ভোটার নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। নির্বাচন কমিশন নিয়মিতভাবে সভা, সেমিনার, শোভাযাত্রা করে ভোটারদেরকে সচেতন করতে পারে । এর ফলে সৎ, যোগ্য, দেশপ্রেমিক প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে ভোটাররা উৎসাহিত হয়।
নির্বাচনে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ
নির্বাচন সংক্রান্ত কাজে প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নির্বাচনকে স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। বাংলাদেশে ২০০৭ সালে ভোটার তালিকা প্রণয়নে প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সঠিকভাবে একটি ভোটার তালিকা প্রণয়ন সম্ভব হয়েছে। নির্বাচনের সময়ও নির্বাচন কমিশন আধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারে। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই অন লাইনে ভোটিং ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন এর ব্যবহার হচ্ছে।
তাই বলা যায়, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সরকার অনেক সময়ই নির্বাচন প্রভাবিত করে। তবে নির্বাচন কমিশন তাকে প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে নির্বাচন অনেকটাই সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করতে পারে ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions