নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
বেগম খালেদা জিয়া ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত প্রধামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। নিয়মানুযায়ী পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন তা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। তৎকালীন বিরোধীদলগুলো অভিযোগ করে যে বিএনপির পছন্দসই বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করার জন্য সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের অবসরের বয়স ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ করা হয়। এর ফলে বিচারপতি কে এম হাসানকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়। তাছাড়া হাইকোর্টের বিতর্কিত বিচারপতি এম এ আজিজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়। এ দুটি বিষয়ে আওয়ামী লীগসহ সিংহভাগ রাজনৈতিক দলের আপত্তি ছিল। বিচারপতি কে এম হাসানকে নিয়ে আপত্তির মুখে রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজেকে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেন। ৩১ অক্টোবর তিনি ১০ জন উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ বিএনপির নির্দেশে একতরফাভাবে কাজ করছিলেন এমন অভিযোগে ৪ জন উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন। ভোটার তালিকা প্রণয়নে এম এ আজিজের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটসহ বিরোধী দলের হরতাল অবরোধের মুখে এম এ আজিজ পদত্যাগ করেন। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাহফুজুর রহমান ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন ধার্য করেন। কিন্তু মহাজোটসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এই দাবির সাথে বিদেশি কূটনীতিকগণও সব দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে তাগিদ দিতে থাকে। ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপর চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিএনপিও ২২ জানুয়ারি তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অনড় অবস্থান নেয়। ৪ দলীয় জোট ও মহাজোটের এই মুখোমুখি অবস্থায় দেশ সঙ্কটময় পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হয়। সমগ্র দেশে একটা থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১২ জানুয়ারি এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমেদকে নতুন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন ।
নির্বাচন অনুষ্ঠান:
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ৩৮ টি রাজনৈতিক দল অংশ গ্রহণ করে এবং ভোট প্রদানের হার ছিল ৮৭.১৬ ভাগ। এ নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী ছিল ১৫৬৭ জন। যার মধ্যে ৫৯ জন মহিলা প্রার্থী ছিলেন।
নির্বাচন মূল্যায়ন:
২০০৮ সালের নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুন:প্রতিষ্ঠায় খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেই সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিকল্প উদ্ভাবনের বিষয়টিও রাজনৈতিক দলের চিন্তার বিষয় হয়ে ওঠে।
পরিশেষে বলা যায়, অনেক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কেননা এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাংবিধানিকভাবে নির্ধারিত ৯০ দিনের জায়গায় নানা কৌশল অবলম্বন করে প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় থাকে। এই আমলেই দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করার লক্ষ্যে কথিত ‘মাইনাস টু ফর্মূলা’ বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions