৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০০১ সালের ১৫ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সাবেক বিচারপতি লতিফুর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়। লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০১ সালের ১ অক্টোবর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ হিসেবে ঘোষণা করে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসনিক বিভিন্ন রদবদল ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলতে থাকে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
নির্বাচন অনুষ্ঠান :
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদ ২০০১ সালের ১৯ আগস্ট নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষণা মোতাবেক, ২৯ আগস্ট মনোনয়নপত্র দাখিল, ৩০-৩১ আগস্ট মনোনয়নপত্র বাছাই, ৬ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং ভোট গ্রহণের তারিখ ১ অক্টোবর। নির্ধারিত তারিখেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ৫৪টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে । আওয়ামী লীগ এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। অন্যদিকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি (নাজিউর) এবং ইসলামী ঐক্যজোট এই ৪ দল জোট হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে। ৩০০ আসনে সর্বমোট প্রার্থী ছিল ১৯০৩ জন যার মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪৯৪ জন।
নির্বাচনে ৭৫.৫৯ শতাংশ ভোট পড়ে। মোট ২৯,৯৭৮টি ভোট কেন্দ্রে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, আনসার, বিডিআর এবং সামরিক বাহিনীর ৫৫,০০০ সদস্য মোতায়েন ছিল।
নির্বাচনের ফলাফল :
নির্বাচন কমিশন প্রাপ্ত তথ্য মতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সর্বাধিক ২১৬টি আসন লাভ করে। এর মধ্যে বিএনপি পায় ১৯৩টি, জামায়াতে ইসলামী ১৭টি, জাতীয় পার্টি (নাজিউর) ৪টি এবং ইসলামী ঐক্যজোট ২টি আসন। নির্বাচনের প্রধান অপর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ মাত্র ৬২টি আসন লাভ করে ।
নির্বাচন মূল্যায়ন:
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত তৃতীয় এ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনে কারচুপি ও দলীয় কর্মীদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়ার অভিযোগ ওঠে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদেরকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়ার অভিযোগও আসে। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের তুলনায় ২০০১ সালের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা নিয়ে বেশ বিতর্ক দেখা দেয়। এছাড়াও নির্বাচন পরবর্তী কয়েক দিন দেশের নানা স্থানে নির্বাচনে বিজয়ী চারদলীয় জোটের লোকজন পরজিত দলের নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘুদের উপর নজির বিহীন হামলা চালায়। এসব সহিংসতার বিরুদ্ধে লক্ষণীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয় সরকার।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions