৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
পঞ্চম সংসদের মেয়াদ শেষ হবার কিছুদিন পূর্বে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙ্গে দেবার পরামর্শ দেন। রাষ্ট্রপতির নির্দেশে নির্বাচন কমিশন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তারিখ হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু সিংহভাগ রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে এই নির্বাচন বয়কট করে। তবু বেগম খালেদা জিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে ভোটার ও প্রতিদ্বন্দীবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বনিম্ন ভোটার উপস্থিতির এ নির্বাচন জনগণ মেনে নেয় নি। তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। আন্দোলনের মুখে বিএনপি সরকার সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন পাস করে। বিচারপতি হাবিবুর রহমান এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মনোনয়ন পান। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান দায়িত্বই ছিল নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। সেজন্য তাঁরা নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের প্রতি দৃষ্টি দেন। ১৯৯৬ সালের ৮ এপ্রিল সাবেক আমলা মোহাম্মদ আবু হেনাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়। নির্বাচন কমিশন ১২ জুন নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেন ।
নির্বাচন:
১৯৯৬ সালের ১২ জুন একটি সর্বজন গ্রাহ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বমোট ৮১টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে প্রার্থী ছিল ২৫৭৪ জন। যার মধ্যে ২৭৯ জন ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী, নারী প্রার্থী ছিল ৩৬ জন। এই নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক ৭৩.৬১ ভাগ ভোটার ভোটাধিকার প্রদান করেন। মোট নির্বাচক ছিল ৫,৬৭,১৬,৯৩৫ জন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রায় ৪ লক্ষ পুলিশ, বিডিআর ও আনসার নিয়োজিত ছিল। ১৯৯৬ এর জুনের নির্বাচনে ভোটার যেমন বেশি ছিল তেমনি দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকও অতীতের যেকোন নির্বাচনের চেয়ে বেশি ছিল।
মূল্যায়ন :
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নানা কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্ববহ করে। ১৯৯১ সালের পঞ্চম নির্বাচনের মত এ নির্বাচটিও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হিসেবে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্যতা পায়। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর পুনরায় সরকার গঠন করে ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions