সার্ক ও বাংলাদেশ
বাংলাদেশের সাথে সার্কের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ। কেননা সার্ক গঠনের উদ্যোক্তা ছিল বাংলাদেশ। ১৯৮৫ সালের ৭ ও ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় সার্ক এর প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ। সার্ক সদস্যভূক্ত ৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা এ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেন। রাষ্ট্রপ্রধানদের বক্তব্যে সহযোগিতা ও সমঝোতার গভীর আগ্রহ প্রকাশ পায়। উক্ত সম্মেলনে যোগদান করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক, ভূটানের রাজা জিগমে সিংগে ওয়াংচুক, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইয়ুম, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস রিচার্ড জয়বর্ধনে এবং নেপালের রাজা বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহদেব। ১৯৮৫ সালের প্রথম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে ১৪ দফা ‘সার্ক ঘোষণা' (ঢাকা ঘোষণা নামে অভিহিত) একটি ঐতিহাসিক ও দিক নির্দেশক। এ ঘোষণার মাধ্যমে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানগণ সার্ক প্রতিষ্ঠায় তাঁদের স্ব-স্ব সরকারের রাজনৈতিক সম্মতি জ্ঞাপন করেন। এ ঘোষণার প্রধান লক্ষ্যগুলো হল- (ক) দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের জনগণের জীবনমানের গুণগত উন্নয়নের নীতিকে কার্যকর এবং সামাজিকভাবে জনগণের জন্য কল্যাণকর কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ করা (খ) এ অঞ্চলের জনগণের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনকে সমৃদ্ধশালী করার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করা (গ) দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রগুলোর জন্য সমষ্টিগত স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা এবং (ঘ) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সকল সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘকেই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন বলে ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৩ সালের ১০-১১ নভেম্বর সার্কের সপ্তম শীর্ষ সম্মেলন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনের ঘোষণায় সার্ক তৎপরতা ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে সমন্বিত কর্মসূচিকে আরও সংহত ও জোরদার করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ ও অবক্ষয় রোধে জাতীয়, দ্বিপাক্ষিক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ার ওপর গুরুত্বরোপ করা হয়। এ শীর্ষ সম্মেলনে কয়েকটি মূল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এ উদ্দেশ্যে SAPTA (SAARC Preferential Trading Arrangement) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ১০ ভাগ শুল্ক হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়।
২০০৫ সালের ১২-১৩ নভেম্বর সার্কের ত্রয়োদশ শীর্ষ সম্মেলন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনের মাধ্যমে আফগানিস্তানকে সার্কের অষ্টম সদস্য এবং চীন ও জাপানকে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৬-২০১৫ সালকে ‘দারিদ্রমুক্ত সার্ক দশক' ঘোষণাসহ মোট ৫৩ দফা ঢাকা ঘোষণা গৃহীত হয়। এ ঢাকা ঘোষণার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দফা হল (ক) আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির অঙ্গীকার (খ) সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার (গ) নারী ও শিশু পাচার রোধে সহযোগিতা (ঘ) সার্ক দারিদ্র বিমোচন তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত ও (ঙ) স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আঞ্চলিক উদ্যোগ গ্রহণ।
পরিশেষে বলা যায়, সার্ক ও বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত বাংলাদেশ সার্কের সাফল্য ও ব্যর্থতার সকল ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত রয়েছে। তবে সার্কের সাফল্য, সমৃদ্ধি ও অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা অগ্রগণ্য ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions