সার্কের গঠন ও উদ্দেশ্য
‘সার্ক’ একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা। SAARC এর পূর্ণরূপ হল South Asian Association for Regional Co-operation (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা)। কোন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে হস্তক্ষেপ না করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সব বিরোধের নিষ্পত্তি করা এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে সার্বিক উন্নতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে সার্ক গঠিত হয়। সার্কের প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৮৫। সার্কের প্রাথমিক সদস্য সংখ্যা ৭টি হলেও বর্তমান সদস্য ৮। বর্তমানে সার্কভুক্ত দেশগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভারত, ভূটান, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। ৩ এপ্রিল, ২০০৭ সালে আফগানিস্তান সার্কের সদস্য হয়। সার্কের পর্যবেক্ষক দেশ ও সংস্থা হল চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, মরিশাস, মিয়ানমার, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। সার্ক সচিবালয় নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে অবস্থিত। সার্কের প্রধানকে বলা হয়, সেক্রেটারি জেনারেল । প্রতি বছর সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সার্কের গঠন :
১৯৭৯ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এশিয়া অঞ্চলে একটি আঞ্চলিক সহযোগিতামূলক সংস্থা গঠনের উদ্যোগ নেন। ১৯৮০ সালের মে মাসে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে একটি আঞ্চলিক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করেন। ১৯৮১ সালের ২১-২৩ এপ্রিল শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ অঞ্চলের ৭টি দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৮৩ সালের আগস্ট মাসে এ অঞ্চলের ৭টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ দিল্লিতে তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হন। এ বৈঠকে মন্ত্রিবর্গ একীভূত বা যৌথ কর্মসূচি নামে একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এ কর্মসূচির আওতায় সার্কভূক্ত রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মকান্ড সম্পাদনের জন্য মোট নয়টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়। অত:পর ১৯৮৫ সালের ৭-৮ ডিসেম্বর ঢাকা শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে সার্কের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
সার্কের উদ্দেশ্য :
বর্তমান বিশ্ব সমৃদ্ধি ও আঞ্চলিক সহযোগিতার বিশ্ব। প্রত্যেক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সাথে পারষ্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে এক সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থান তৈরিতে দৃঢ়সংকল্প। পাশাপাশি জনকল্যাণের স্বার্থে বিভিন্ন রাষ্ট্র জোটবদ্ধ হয়ে উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সার্কের উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ :
(ক) দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন।
(খ) এ অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতির ধারা ত্বরান্বিত করা।
(গ) দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের জাতীয় আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা ।
(ঘ) এ অঞ্চলের রাষ্ট্রসমূহের সাধারণ স্বার্থে সহানুভূতি ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা ।
(ঙ) অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার সাথে সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন।
সার্ক অনেকগুলো বাস্তবভিত্তিক উদ্দেশ্য নির্ধারণ করলেও বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রে মতানৈক্যের কারণে এখন অবধি দক্ষিণ এশিয়ার পৌনে দুইশত কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয় নি। নানামুখী টানাপোড়েন পরিহার করে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও উন্নতির দিকে নজর দিলে উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions