তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দেশে নেতৃত্বের চরম সংকট তৈরি হয়। ১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এক সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হন। এই ঘটনার এক বছরের কম সময়ের মধ্যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন। অন্যান্য সামরিক শাসনের মত এরশাদও বৈধতার সঙ্কট অতিক্রমের জন্য বেসমারিককরণের বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন। কিন্তু তিনি নানাবিধ আন্দোলন সংগ্রামের সম্মুখীন হন। প্রথমে তিনি বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচন করেন। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বরে ইউনিয়ন পরিষদ এবং ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পৌরসভা ও মিউনিসিপ্যাল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য ১৯৮৪ সালের এপ্রিলে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিচালনার অনুমতি দেন এরশাদ। ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি নামে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু সাধারণ জনগণ সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিজ অবস্থানের ম্যান্ডেড নেবার জন্য ১৯৮৫ সালের ২১ মার্চ গণভোটের আয়োজন করেন। এই গণভোটে সব ধরনের কারচুপি করে ৯৪.১৪ ভাগ আস্থা ভোট লাভ করেন এরশাদ।
তাঁর পূর্বসূরী জিয়ার মতই দল গঠন ও নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন। সিংহ ভাগ রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের মুখে পূর্বঘোষিত সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারেননি। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে একটা আবহ তৈরি করায় উদ্যোগী হন। ১৯৮৫ সালের মে মাসে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচন অনুষ্ঠান
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের মুখে তিন দফা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন হয়। নির্বাচনের তারিখ প্রথমে ঘোষিত হয় ১৯৮৪ সালের ২৬ এপ্রিল। অবশেষে ১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮ দলীয় জোট, জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগসহ ছোট-বড় ২৮টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে ৩০০ আসনের জন্য ২১৫৪ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করে কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৫২৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪৫৩ জন। নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৪ কোটি ৭৮ লক্ষ ৭৬ হাজার ৯৭৯ জন । এ নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোটের নির্বাচন বর্জন।
নির্বাচনের ফলাফল:
নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩ আসন পেয়ে সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, কারচুপি, মিডিয়া ক্যুসহ বিভিন্ন রকমের অভিযোগ তোলে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২৬.১৫ ভাগ ভোট পেয়ে ৭৬ টি আসন লাভ করে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮৬ এর নির্বাচনকে প্রহসন ও ভোট ডাকাতির নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করেন।
নির্বাচন মূল্যায়ন :
অবৈধভাবে ক্ষমতার দখলদার এরশাদের পক্ষে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। বৈধতার সঙ্কট অতিক্রম এবং দেশজুড়ে অনুগ্রহভোগী তৈরি করার লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠান করেন এরশাদ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions