Home » » ত্রিপুরা উপজাতি

ত্রিপুরা উপজাতি

ত্রিপুরা উপজাতি

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দু'টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হচ্ছে ত্রিপুরা এবং গারো। লোক সংখ্যার দিক থেকে ত্রিপুরারা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। ত্রিপুরারা বাংলাদেশের পাহাড়ি ও সমতল উভয় অঞ্চলেই বসবাস করে। তবে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে তাদের বসতি বেশি। ভাষা-সাহিত্য, শিল্প-সংস্কৃতি এবং ইতিহাস-ঐতিহ্যের দিক থেকে ত্রিপুরারা সমৃদ্ধ। ভারতীয় উপমহাদেশের ত্রিপুরা জাতি একটি আদি ও ঐতিহ্যবাহী জনগোষ্ঠী। এদের একটি অংশ বাংলাদেশে বসবাস করে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে এরা বাংলাদেশে আগত বলে জানা যায়। 


ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের নৃতাত্ত্বিক ও জাতিগত পরিচয়: ত্রিপুরা জাতি ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের একটি শক্তিশালী নৃগোষ্ঠীরূপে পরিচিত ছিল। ত্রিপুরারা মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত। ‘টিপরা' নামেও এদের পরিচিতি রয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর পূর্বসুরীগণ মঙ্গোলিয়া থেকে মধ্য এশিয়ার তিব্বত ও সাইবেরিয়ার পথ পরিক্রমণ করে ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলে আগমন করে। বাংলাদেশে বসবাসরত ত্রিপুরাদের আদি বাসস্থান ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। সেখান থেকে তারা এদেশে আগমন করেছে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় ত্রিপুরা বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভারতের সাথে যুক্ত হয়। ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠী অনার্য। এরা মাঝারি গড়নের অধিকারী। এদের গায়ের রং উজ্জ্বল, নাক বোঁচা, চোখ ছোট এবং চুল খাড়া হয়ে থাকে ।


বাসস্থান, ভাষা: বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, ফরিদপুর, শ্রীমঙ্গল, মৌলভিবাজার, কুমিল্লা, কক্সবাজার প্রভৃতি জেলাসমূহে ত্রিপুরারা বসবাস করে। তবে ত্রিপুরাদের প্রায় ৮০ শতাংশের বসবাস পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিশেষ করে রামগড় এবং খাগড়াছড়িতে। ত্রিপুরাদের ভাষার নাম ককবরক `kok-borok'। এ ভাষাটি ‘বোডো’ দলের ('bodo group') অন্তর্ভূক্ত। সিনো-টিবেটান (Sino-Tibetan) পরিবার ভুক্ত টিবেটো-বার্মা (Tibeto-Burma) ভাষার আসাম শাখা থেকে ককবরক ভাষাটির উৎপত্তি। ককবরক ভাষার নিজস্ব অক্ষর-লিপি রয়েছে।


পরিবার, বিবাহ ও ধর্ম: ত্রিপুরাদের পিতৃতান্ত্রিক পরিবার ব্যবস্থায় পিতাই পরিবারের প্রধান। পিতার অবর্তমানে পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক পুত্র পরিবারের প্রধান হয়। সন্তান পৈতৃক সূত্রে বংশ পরিচয় লাভ করে থাকে। তবে তাদের কিছু গোত্রে মেয়েরা মাতৃবংশ পরিচয় লাভ করে থাকে। সম্পত্তির উত্তরাধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরিবারের জ্যেষ্ঠ পুত্র অগ্রাধিকার পায়। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীদের মধ্যে পিতা-মাতা বা অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। প্রথাগতভাবে ত্রিপুরাদের নিজ গোত্রের মধ্যে বিবাহ অনুমোদিত নয়। যৌতুক প্রথা এ সমাজে নিষিদ্ধ। বরের পিতাকে কনের পোষাক-পরিচ্ছদ, অলংকারের খরচ বহন করতে হয়। ত্রিপুরাদের মধ্যে বিধবা বিবাহ প্রচলিত। বহুবিবাহ এ সমাজে দেখা যায়। তবে তা প্রথাগতভাবে নিন্দনীয়। ত্রিপুরারা সনাতন হিন্দু ধর্মের অনুসারী। সনাতন ধর্মালম্বী হলেও বেদে বর্ণিত সকল দেব-দেবীর পূজা এ সমাজে হয় না। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী শিব এবং কালীসহ ১৪ জন দেব-দেবীর পূজা অর্চনা করে থাকে ।


সমাজ ব্যবস্থা, পোশাক, অর্থনীতি: ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠীর ‘সমাজ’কে দফা (দল) বলা হয়। ত্রিপুরারা মোট ৩৬টি দফায় বিভক্ত। এর মধ্যে ১৬টি দফা বাংলাদেশে বসবাস করে। প্রত্যোকটি দফার নিজস্ব পোশাক-পরিচ্ছদ, ভাষা, আচার- অনুষ্ঠান, রীতি-প্রথা ও অলংকার রয়েছে। ত্রিপুরা পুরুষেরা ধূতি পরে থাকে। তারা মাথায় পাগড়ি/টুপি পরিধান করে। ত্রিপুরা নারীরা শীরের উর্ধ্বাংশে ব্লাউজ এবং নিম্নাংশে সায়া পরিধান করে। ত্রিপুরা নারী-পুরুষ উভয়েই রূপা নির্মিত বক্স চন্দ্রাকৃতির কানের দুল পরে থাকে। ত্রিপুরা সমাজের অবিবাহিত মেয়েরা রঙিন জামা-কাপড় পরে থাকে। ত্রিপুরা নারীরা বেংকি, বালা, কুনচি, আঁচলী, রাংবাতার, সুরমা, ওয়াকুম ইত্যাদি অলংকার পরিধান করে থাকে ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ত্রিপুরাদের অর্থনীতি জুমচাষ, পশু পালন ও হালচাষের উপর নির্ভরশীল। খুব অল্পসংখ্যক শিক্ষিত ত্রিপুরা চাকুরি ও অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত। ত্রিপুরাদের মধ্যে বাগান চাষও প্রচলিত। এদের মধ্যে ব্যবসায়ীর সংখ্যা খুবই কম। জুমের উপর ভিত্তি করেই ত্রিপুরা সমাজের অর্থনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। তাদের মূল্যবোধ, বাদ্য-গীত, পোষাক-পরিচ্ছদ, গান, ছড়া, গল্প ইত্যাদির উপর জুম চাষের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে অনগ্রসরতা, জুম ও কৃষি কাজের জন্য পর্যাপ্ত জমির অভাব ইত্যাদি কারণে ত্রিপুরাদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার বেশি।


সংস্কৃতি: ত্রিপুরা লোকসাহিত্য বেশ সমৃদ্ধ। ত্রিপুরাদের জীবন-জীবিকা এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, পূজা-পার্বণে, বিবাহ ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে নৃত্য, গীত এবং বাদ্যযন্ত্র অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাদের ঐতিহ্যবাহী কতিপয় নৃত্য হচ্ছে, গড়িয়া নৃত্য এবং বোরপূজা নৃত্য। ত্রিপুরাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠান হল বৈসুকি বা বৈস, যা মূলত বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। এই উৎসব তিন দিন ধরে উদযাপন করা হয়। এ দিনে বাড়ি ঘর ফুল দিয়ে সাজানো হয়।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *