Home » » মুদ্রাস্ফীতির কারণ কি

মুদ্রাস্ফীতির কারণ কি

মুদ্রাস্ফীতির কারণ কি

মূল্যস্ফীতির কারণসমূহ-

একটি দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি একটি জটিল সমস্যা। মূল্যস্ফীতি বিভিন্ন কারনে ঘটতে পারে। যেসব কারণে মূল্যস্ফীতি হয়ে থাকে তা নিম্নে আলোচনা করা হল-

১। অর্থের যোগান বৃদ্ধি: মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারন হল অর্থের যোগান বৃদ্ধি। অর্থের যোগান বৃদ্ধি পেলে জনগনের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। অর্থের যোগান বৃদ্ধির সাথে যদি দ্রব্য ও সেবার উৎপাদন সামঞ্জস্য হারে বৃদ্ধি পায় তাহলে মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা কম থাকে। তবে অর্থের যোগান বৃদ্ধির সাথে যদি সামঞ্জস্যহারে দ্রব্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি পায় না, তাহলে মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়।


২। সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় : অনেক সময় সরকারকে আয় অপেক্ষা অধিক ব্যয় করতে হয়। এ ব্যয়ের অর্থ সরকার যদি জনসাধারনের নিকট হতে ঋণের মাধ্যমে গ্রহণ করে তাহলে মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা থাকে না; কিন্তু সরকার যদি কেন্দ্ৰীয় ব্যাংকের নিকট হতে ঋণ গ্রহণ করেন অথবা বিদেশ হতে ঋণ গ্রহণ করে এবং দেশের অভ্যন্তরে তা খরচ করে তবে তার ফলেও মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিবে।


৩। বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক অধিক ঋণদান: দেশে অর্থের যোগান বৃদ্ধি পেলে তাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মজুদও বৃদ্ধি পায় এবং তারা ব্যবসায়ী, শিল্পপতিগণকে সহজ শর্তে অধিক ঋণ দান করে। ফলে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শেষ পর্যন্ত মুদ্রাস্ফীতি ঘটে ।


৪। উৎপাদন হ্রাস: কৃষিজাত ও শিল্পজাত পণ্যের উৎপাদনের স্বল্পতা মুদ্রাস্ফীতির জন্য দায়ী। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা প্রভৃতির ফলে অনেক সময় কৃষির উৎপাদন ব্যাহত হয়। অর্থের যোগান ঠিক থেকে যদি দ্রব্যাদির উৎপাদন কমে যায় তাহলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় ।


৫। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উদ্বৃত্ত: আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে যখন একটা দেশের অবস্থা অনুকুল হয়, তখন সেই দেশের লোকের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় দ্রব্য উৎপাদন যদি অপরিবর্তিত থাকে তবে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে ।


৬। ভোগ ও বিনিময় ব্যয় বৃদ্ধি : সমাজে ভোগব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যয় বৃদ্ধি পেলে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধি ঘটে। কারণ, ভোগব্যায় ও বিনিয়োগ ব্যয় বৃদ্ধির ফলে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু স্বল্পকালীন সময়ে সে হারে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় না। এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।


৭। মজুরি বৃদ্ধি: মুদ্রাস্ফীতির অন্যতম কারণ হলো শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি । বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমিক সংঘ অত্যন্ত শক্তিশালী । তারা সংঘবদ্ধভাবে আন্দোলন করে মালিকদেরকে মজুরি বৃদ্ধি করতে বাধ্য করে। এভাবে মজুরি বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদনকারীরাও দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় ।


৮। অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বৃদ্ধি: মুদ্রাস্ফীতির অন্যতম কারণ হল অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বৃদ্ধি। সরকার অনুৎপাদনশীল খাতে যেমন - শিশুপার্ক, স্টেডিয়াম নির্মান প্রভৃতি খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করলে জনগনের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে; কিন্তু উৎপাদন বাড়ে না । এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় ।


৯। প্রাকৃতিক দুর্যোগ: মুদ্রাস্ফীতির অন্যতম কারণ হল প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দেশে বন্যা, খরা, ঝড়, ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে উৎপাদন বিশেষ করে কৃষি উৎপাদন ব্যহত হয়। এর ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় এবং মুদ্রাস্ফীতির সৃষ্টি হয়।


১০। চোরাকারবারি ও মজুতদারী: মুদ্রাস্ফীতির অন্যতম কারণ হল চোরাকারবারি ও মজুতদারী। চোরাকারবারিরা অধিক লাভের আশায় দেশীয় উৎপাদিত পণ্য দেশের বাইরে পাচার করে দ্রব্যসামগ্রীর ঘাটতি সৃষ্টি করে। একইভাবে মজুতদাররা অবৈধভাবে দ্রব্যসামগ্রী মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। এর ফলে দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পায় এবং দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।


১১। ঘাটতি ব্যয়: উন্নয়নশীল দেশে মুদ্রাস্ফীতির অন্যতম প্রধান কারণ হলো ঘাটতি ব্যয়। উন্নয়ন পরিকল্পনার অর্থসংস্থানের জন্য সরকারকে ঘাটতি ব্যয় নীতি অনুসরণ করতে হয়। এক্ষেত্রে সরকার দেশের ভেতর থেকে অথবা বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করে। এর ফলে দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় ।


১২। যুদ্ধজনিত ব্যয় নির্বাহ: মুদ্রাস্ফীতির আর একটি প্রধান কারণ হল যুদ্ধজনিত ব্যয়। কোন দেশ যখন যুদ্ধাবস্থার সম্মুখীন হয় তখন সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। কিন্তু এ বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ গ্রহণ বা কর ধার্য করে সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় সরকার অতিরিক্ত কাগজী নোট ছাপিয়ে যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহ করে থাকে। এর ফলে দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় এবং মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *