অর্থায়ন কি
অর্থায়নের ধারনা সাধারণভাবে যেকোনো কাজ করার লক্ষ্যে অর্থ সংগ্রহ করা এবং যথাযথ ব্যবহারকে অর্থায়ন বলে। যেকোনো কাজ করতে হলে অর্থের প্রয়োজন। যেমন- ব্যক্তির নিজস্ব কার্যাবলি পরিচালনা, ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহন, ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসায় বাণিজ্য পরিচালনা, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান স্থাপন-স্কুল কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা প্রভৃতি বিভিন্ন খাতে জনকল্যাণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। তাই অর্থায়ন শব্দটি দ্বারা অর্থের সংস্থান, যোগান বা সংগ্রহকরণকে বোঝায়। অর্থায়ন ধারণাটি সংকীর্ণ বা বেষ্টিক এবং প্রসারিত বা সমষ্টিক অর্থেও প্রদান করা হয়। ব্যষ্টিক অর্থে অর্থায়ন বলতে কোনো ব্যবসায় বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক পরিকল্পনা, তহবিল সংগ্রহ ও সম্পদের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবস্থাপনাকে বোঝায়। পক্ষান্তরে, সামষ্টিক অর্থে অর্থায়ন বলতে দেশের অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বের সাথে সামগ্রিক লাভজনক উপায়ে ব্যবহার, সংরক্ষণ, সমন্বয়করণ ও নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়াই হলো অর্থায়ন। দক্ষ অর্থায়নের ওপর উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভরশীল অর্থায়ন সম্পর্কে সাম্যক ধারনা পেতে হলে অর্থায়নের কার্যাবলি সম্পর্কেও জানা প্রয়োজন। কোনো প্রকল্পে অর্থায়ন করতে গেলে প্রথমে আর্থিক পরিকল্পনা তথা কোন খাতে কী পরিমান অর্থ সময়ের জন্য প্রয়োজন তার বিস্তারিত বিবরণী প্রস্তুত করতে হয়। এর পর অর্থের উৎস সমূহ সনাক্ত করে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় অর্থসংগ্রহ করতে হয়। সংগৃহীত অর্থ প্রত্যার্পন করতে হয় বলে প্রকল্পের ঝুঁকির সাথে আয়ের সমন্বয়সাধন করে তহবিল সংরক্ষণ করতে হয়। পরে গৃহীত প্রকল্প থেকে অর্জিত মুনাফার কত অংশ ব্যবসায়ে পুনঃবিনিয়োগ ও কত অংশ মালিক বা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বন্টন করা হবেতা নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে হয়। এসব ছাড়াও প্রকল্পের জন্য বাজেট প্রণয়ন, হিসাবরক্ষণ, আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুতকরন, কর পরিকল্পনা, বীমাকরন ইত্যাদি কাজও সম্পন্ন করতে হয়।
অর্থায়নের শ্রেনিবিভাগ:
নিম্নে অর্থায়নের শ্রেনিবিভাগ আলোচনা করা হলো:
ক. সরকারি অর্থায়ন(Govt. Financing):
রাষ্ট্র বা কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকারের অর্থায়নকে সরকারি অর্থায়ন বলা হয়। শিক্ষা প্রসার,সামাজিক কল্যাণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সম্পদের সুষম বন্টন, পল্লী উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, জাতীয় আয় বৃদ্ধি, মূল্যস্তরকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পরিচালিত করাই সরকারি অর্থায়নের উদ্দেশ্য। একে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—
(i)অভ্যন্তরীণ উৎস(Internal source ) : কোন দেশের সরকার তার প্রয়োজনীয় অর্থের একটি অংশ অভ্যন্তরীণ উৎস হতে কর,শুল্ক, অ-কর রাজস্ব ইত্যাদির মাধ্যমে সংগ্রহ করে ।
(ii) বাহ্যিক উৎস (External Source): সরকার তার প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যায়ের একটি অংশ বিভিন্ন দেশ, সাহায্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন- বিশ্বব্যাংক,আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক, ব্রিকস ব্যাংক, ইইউ প্রভৃতির কাছ থেকে ঋণ, অনুদান, দান ইত্যাদির মাধ্যমে অর্থায়ন করে ।
খ. বেসরকারী অর্থায়ন:
সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য সকল ব্যক্তি বা অব্যক্তিক অর্থায়নকে বেসরকারি অর্থায়ন বলে। এ ধরনের অর্থায়ন আবার তিন প্রকার । যথা:
১। ব্যক্তিগত অর্থায়ন:
সাধারণত ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন ধরনের অর্থায়নকে ব্যক্তিগত অর্থায়ন বলে । ব্যক্তি নিজস্ব আয়,পারিবারিক আয়, আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রয়োজনে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে ঋণগ্রহন করে এরূপ অর্থায়ন করে।
২। ব্যাবসায় অর্থায়ন:
মুনাফা অর্জনের উদ্দশ্যে পরিচালিত ব্যবসায় কার্যাবলি পরিচলনার জন্য অর্থায়নকে ব্যবসায় অর্থায়ন বলে।
ব্যবসায় অর্থায়ন চার প্রকার:
ক. মালিকানাভিত্তিতে অর্থায়ন:
মালিকানার ভিত্তিতে অর্থায়ন তিন প্রকার। যথা;
* এক মালিকানা :
এক মালিকানা কারবারে অর্থায়ন যেখানে, সেখানে সীমাহীন দায়িত্ব ও ঝুঁকি বেশি।
* অংশীদারি কারবারের অর্থায়ন: এধরনের কারবারের অর্থায়ন তুলনামূলকভাবে সহজ হলেও অংশীদারদের সমান দায় থাকে ।
* যৌথমূলধনী কারবার: যৌথমূলধনী কারবারের অর্থায়ন তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও ঝুঁকি সর্বনিম্ন থকে।
খ. মেয়াদ ভিত্তিতে:
মেয়াদি ভিত্তিতে অর্থায়ন তিন প্রকার । যথা:
* স্বল্প মেয়াদি: ১ বছর বা তার কম সময়ের জন্য যে অর্থায়ন হয়।
* মধ্যমেয়াদি ১ বছর হতে ৫ বছর সময়ের জন্য এরূপ অর্থায়ন হয়।
* দীর্ঘমেয়াদি : ৫ বছর হতে ২০ বছর সময়ের জন্য এরূপ অর্থায়ন হয়।
গ. উৎসের ভিত্তিতে:
উৎসের ভিত্তিতে অর্থায়ন দুই প্রকার। যথাঃ
১। অভ্যন্তরীণ উৎস: উদ্যোক্তাগণ কর্তৃক সরবরাহকৃত মূলধন, শেয়ার, অবন্টিত মুনাফা ও সঞ্চিত তহবিল অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয় ।
২। বাহ্যিক উৎস: মালিকাণা বা উদ্যোক্তার নিজস্ব মূলধন এবং অবন্টিত মুনাফা ছাড়া ঋণ হিসেবে যে সমস্ত উৎস হতে অর্থ সংগ্রহ করা হয় তাকে বাহ্যিক উৎস বলে । এটি আবার দুই প্রকার । যথা:
দেশীয়: প্রাপ্য বিল, বাট্টাকরণ, প্রদেয়বিল, বাণিজ্যিকপত্র, ক্রেতা হতে অগ্রীম গ্রহণ, মজুদ মাল বন্ধকীকরণ, বানিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংক ও গ্রামীণ মহাজন, সুদের কারবারি 1
আন্তর্জাতিক: দাতা দেশ ও সংস্থা কর্তৃক সাহায্য, ঋণ, দান, অনুদান প্রভৃতি।
ঘ. উৎসের কাঠামোর ভিত্তিতে:
উৎসের কাঠামো ভিত্তিতে অর্থায়ন দুই প্রকার । যথা:
* প্রাতিষ্ঠানিক উৎস: যখন কোন স্বীকৃত বা রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈধ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থায়ন করা হয়, তখন তাকে প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়ন বলে ।
* অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়ন: আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, গ্রাম্য মহাজন, স্বর্ণকার প্রভৃতি অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়নের উৎস হিসেবে বিবেচিত।
৩। অ-ব্যবসায় অর্থায়ন:
মুনাফার উদ্দেশ্য ব্যতীত দেশের জনগনের কল্যানের লক্ষ্যে সমাজের বিত্তবান ও মানব দরদীদের অনুদান ও সাহায্যে এরূপ অর্থায়ন হয় ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions