Home » » ভার্সাই চুক্তি বা ভার্সাই সন্ধি কি

ভার্সাই চুক্তি বা ভার্সাই সন্ধি কি

ভার্সাই চুক্তি / ভার্সাই সন্ধি কি

প্যারিসের অদূরে অবস্থিত ভার্সাই নগরীতে ১৯১৯ সালের ২৮ জুন জার্মানির ওপর কিছু অনৈতিক শর্ত চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে শেষ হয় ভার্সাই চুক্তি। ফ্রান্সের কম্পেইনের বনাঞ্চলে ট্রেনের বগিতে বসে করা অস্ত্রবিরতি চুক্তির পরবর্তী ধাপ হিসেবে করা হয় এই চুক্তি । এর মাধ্যমে মিত্রবাহিনীর সাথে দীর্ঘ চার বছর ভয়াবহ যুদ্ধের কড়ায় গণ্ডায় জার্মানির কাছ থেকে উসুল করা হয়। অনেকগুলো ধারার এ চুক্তিতে উল্লিখিত ২৩১-২৪৭ ধারার আওতায় জার্মানিকে যুদ্ধ শুরু থেকে আনুষঙ্গিক সব দায়ভার গ্রহণ করতে হয়। তারা ক্ষতিপূরণের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে তাদের বিশাল ভূখণ্ড থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ মিত্রবাহিনীর অনুকূলে ছেড়ে দেয়। বিশেষ করে পশ্চিম রণাঙ্গনে নিজেদের ক্ষতি মিটিয়ে নিতে বন্ধপরিকর ছিলেন ফরাসি মন্ত্রী ক্লিমেনশঁ। তাঁর দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে ভার্সাই চুক্তির শর্ত হিসেবে নির্ধারণ করা হয় অনেকগুলো অবাস্তব ধারা। যার মধ্যে ছিল-

১. জার্মানির সব ধরনের সামরিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা।

২. ফরাসি সার্বভৌমত্ব ও আধিপত্য পুরোপুরি স্বীকার করে নেয়া।

৩. জার্মান নিয়ন্ত্রিত টনডার্ন শহরের পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলীয় স্লেসউইগ ডেনমার্কের অধীনে ছেড়ে দেয়া।

8. পোজেন ও পশ্চিম প্রুশিয়ার পোমেরানিয়া নবগঠিত পোল্যান্ডের কাছে ছেড়ে দিতে হবে।

৫. উচ্চ সাইলেশিয়ার হাল্টশিন হালসিজিন এলাকা চেকশ্লোভাকিয়ার কাছে হস্তান্তর।

৬. গণভোট সাপেক্ষে সাইলেশিয়ার পূর্বাংশকেও পোলান্ডের অনুকূলে ছেড়ে দিতে বাধ্য থাকা । 

৭. ইউপেন ও মালমেডির মত সমৃদ্ধ জার্মান শহরকে বেলজিয়ামের কাছে হস্তান্তর করা ।

৮. পূর্ব প্রুশিয়ার সোলডাউ এলাকা পোল্যান্ডকে ছেড়ে দেয়া।

৯. পূর্ব প্রুশিয়ার মামেলল্যান্ডকে লিথুয়ানিয়ার আনুকূল্যে ত্যাগ করা ।

১০. ওয়ার্মিয়াও মাসুরিয়ার নিয়ন্ত্রণ পোল্যান্ডকে ফিরিয়ে দেয়া।

১১. ডানজিগ বন্দরকে উন্মুক্ত নগরী ঘোষণা করা যা জাতিপুঞ্জের অধীনে থাকবে । 

১২. চীনের শানদং (Shandong) থেকে জার্মানির নিয়ন্ত্রণ উঠিয়ে নেয়া।


ফ্রান্সের দীর্ঘদিনের জমিয়ে রাখা ক্ষোভ প্রশমনে জার্মানিকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। পাশাপাশি রাজনৈতিক, ভৌগোলিক, ঔপনিবেশিক, সামরিক, অর্থনৈতিক, প্রতিটি ক্ষেত্রে এ চুক্তি জার্মানিকে হেয়প্রতিপন্ন করে। বিশেষ করে সম্পূর্ণভাবে চাপিয়ে দেয়া এ চুক্তির কিছু শর্ত এমন ছিল যা জার্মানির মধ্যে প্রতিশোধস্পৃহা জাগিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লিপ্ত হতে প্রণোদিত করেছিল। সন্ধি বলতে দু'পক্ষে মতামতের যে প্রতিফলন ঘটার কথা তার বিন্দু-বিসর্গও এখানে উপস্থিত ছিল না। উপরন্তু মিত্র শক্তির নানা দেশ থেকে জার্মানির ওপর তাদের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার একটি প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। চুক্তির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে-

১. রাজনৈতিক হেয়করন : ভার্সাই চুক্তি রাজনৈতিক দিক থেকে জার্মানিকে ছত্রখান করে দেয়। এ চুক্তির পর নতুন করে তৈরি খণ্ড-বিখণ্ড মানচিত্রে একত্রীভূত জার্মানির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দায়। তাদের পশ্চিম সীমান্তে ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা প্রাচীন নির্মাণে দখল করা হয়েছে বেশ খানিকটা ভূখণ্ড। উত্তর সীমান্ত থেকে অনেকটাই চলে গেছে ড্যানিশদের দখলে। পূর্ব সীমান্তের ভেতরে ঢুকে পড়েছে নবগঠিত পোল্যান্ড। ইউপেন, মরিসনেট ও ম্যালমেডি অঞ্চলের ওপর জার্মানির বদলে বেলজিয়ামের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। চুক্তির প্রথম দিকের শর্ত অনুযায়িই আলসেস ও লোরেনের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে ফরাসিরা। সবমিলিয়ে রাতারাতি বদলে দেয়া হয় ইউরোপের মানচিত্র ।


২. সামরিক অপদস্তকরণ : পরাজিত জার্মানির সামরিক শক্তিকেও মিত্রবাহিনী কতটা ভয় করত ভার্সাই চুক্তির শর্ত থেকে তা বোঝা যায়। এ চুক্তির আওতায় জার্মানির স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়। জার্মান বাহিনীর উচ্চপদস্থ ও গুরুত্বপূর্ণ সেনা কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। ভবিষ্যতে জার্মানির ভূখণ্ডে সব ধরনের অস্ত্র কারখানা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। জার্মানির সবগুলো উন্নত যুদ্ধজাহাজকে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর হাতে তুলে দিতে হয়।


৩. বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অবরোধ : রাজনৈতিকভাবে জার্মানিকে হেয় প্রতিপন্ন করার সাথে সাথে মিত্রবাহিনী তাদের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য খাতে ধ্বস নামাতে চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত জোরপূর্বক তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ব্যয়ভার বহন করতে জার্মানিকে বাধ্য করা হয়। বিশেষ কমিশন গঠন করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের পাশাপাশি জার্মানির রাইন নদীপথকে আন্তর্জাতিক জলপথ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জার্মানির বাজার উন্মুক্ত করে সেখানে মিত্রবাহিনীর দেশগুলোর পণ্যের অবাধ বিক্রি নিশ্চিত করা হয়। মিত্রবাহিনীর দেশগুলো জার্মানি থেকে জ্বালানি রপ্তানি শুরু করে। পরিকল্পিতভাবে জার্মানির সব ধরনের শিল্প ধ্বংস করা হয়। সেখানে উৎপাদিত কাঁচামাল দিয়ে সেখানে কারখানা প্রতিষ্ঠা না করে অন্য দেশে শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে জার্মানির অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবে রূপ দেয় মিত্রবাহিনী যা অনেক আগে থেকে পরিকল্পিত ছিল ।


৪. মিত্রবাহিনীর অধীনে জার্মানির উপনিবেশ : ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মত বিশ্বের নানা এলাকায় জার্মানিরও উপনিবেশ ছিল। এবারে চুক্তি করে মিত্রবাহিনীর দেশগুলো সেসব উপনিবেশ নিজেদের মধ্যে ভাগ-বটোয়ারা করে নেয়া। পাশাপাশি তারা নিয়ম বেঁধে দেয় এরপর আফ্রিকা, এশিয়া কিংবা আমেরিকার কোনো স্থানে জার্মান উপনিবেশ স্থাপনের সুযোগ নেই ।


৫. যাতায়াত ও পরিবহন : জার্মানির রেল ইঞ্জিন থেকে শুরু করে উন্নত ধরনের সব যানবাহনের ওপর ভাগ বসায় মিত্রবাহিনী। তারা শক্তিশালী ট্রাকের ইঞ্জিনগুলো পর্যন্ত জার্মান থেকে নিয়ে যায় নিজেদের দেশে। বিভিন্ন স্থানে নতুন করে রাস্তা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অনেকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও সেতু মেরামতের ওপর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় এক্ষেত্রে।


৬. বিচার আচার : মিত্রবাহিনী প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য পুরোপুরি দায়ী করে জার্মানিকে। এজন্য তারা জার্মান সম্রাট কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম ও তার সেনাপতিদের দোষী সাব্যস্ত করে বিচারের দাবি জানায়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ফ্রন্টে যুদ্ধরত শক্তিমান জেনারেলদের নামও বেশ ক্ষোভের সাথে উচ্চারণ করা হয়।


৭. জাতিপুঞ্জ : বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের ঘোষণার অনুরূপ শর্তসাপেক্ষে একটি জাতিপুঞ্জ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের যুদ্ধবাজ নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কথা জানানো হলেও মূলত জার্মানিতে আরো বড় রকমের চাপে রাখার কৌশল ছিল এটি।


৮. আন্তর্জাতিক আদালত : ভার্সাই সন্ধির মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক আদালত প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়। এ আদালতের মাধ্যমে গণহত্যার মত অপরাধের বিচার হওয়ার কথা দাবি করে মিত্রবাহিনীর বিভিন্ন দেশ। বলতে গেলে সবদিক থেকে জার্মানিকে চেপে ধরার অন্যতম চেষ্টা এটিও।


৯. ঐতিহাসিক প্রতিশোধ : ১৯১৯ সালে ভার্সাই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় মিরর হলে। এখানেই পরাজিত জার্মানদের ওপর জোরপূর্বক চুক্তির শর্ত চাপিয়ে দিয়ে ১৮৭০ সালের প্রতিশোধ নেয় ফরাসিরা। এই হলেই জার্মান নেতা বিসমার্ক বন্দি ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নকে চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করেছিলেন। অন্যদিকে হিংস্রতার সাথে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জার্মানির জনগণ বলছে তারা সই করবে না, তাদের পত্রিকাগুলোও বলছে সই না করতে, তাদের রাজনীতিবিদদের কণ্ঠেও একই সুর। তবে আমরা বলছি যদি ভদ্রলোকের সন্তান হয়ে থাকেন আসুন এবং সই করে যান, নাহলে আপনাদের ঘাড় ধরে সই করিয়ে নিতে আমাদেরই বার্লিন আসতে হবে।'


১০. প্রতিবাদের শুরু : জার্মান জাতীয়তাবাদী লেখকগণ শুরু থেকেই ভার্সাই চুক্তিকে ঘৃণ্য, বর্বর ও জবরদস্তিমূলক অনাচার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে ভুল করেননি। এ চুক্তিই হয়ত ভবিষ্যতে ক্ষুব্ধ জার্মানিকে তাদের অপমানের প্রতিশোধ নিতে প্রণোদিত করে আরেকটি যুদ্ধে জড়াতে।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *