Home » » ইমাম আবু হানিফা জীবনী

ইমাম আবু হানিফা জীবনী

ইমাম আবু হানিফা জীবনী

ইসলামি আইন শাস্ত্রের জগতে যে ক'জন মনীষী অসামান্য অবদান রেখে গেছেন ইমাম আবু হানিফা (র) তাদের অন্যতম। ইসলামি আইন শাস্ত্রের প্রদীপকে দুনিয়ার একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে প্রজ্বলিত করার কারণে মুসলিম মনীষীগণ তাকে ইমাম-ই-আযম বা শ্রেষ্ঠ ইমাম উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি ছিলেন প্রখর প্রজ্ঞা ও তুখোড় যুক্তিবাদী। পৃথিবীর ইতিহাসে তাঁর মত চৌকস ব্যক্তিত্ব বিরল।

ইমাম আবু হানিফা (র)-এর প্রকৃত নাম নুমান ইবনে সাবিত। উপনাম আবু হানিফা। পিতার নাম সাবিত। ইমাম আবু হানিফার উপনাম দ্বারাই হানাফি মাযহাবের নামকরণ করা হয়। তিনিই হানাফি মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা।

ইমাম আবু হানিফা (র) মুসলিম জ্ঞান-বিজ্ঞানের পুণ্যভূমি বর্তমান ইরাকের কুফা নগরীতে ৮০ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত আলিম এবং ফিক্হশাস্ত্রের বিশ্ববরেণ্য পণ্ডিত ।

ইমাম আবূ হানিফা (র) বাল্যকাল হতেই অসাধারণ মেধার অধিকারী ছিলেন। প্রথম জীবনে তিনি তৎকালীন ইসলামি বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র কুফা নগরীতে জ্ঞান অর্জন করেন। ১২ বছর বয়সে তিনি হযরত মুহাম্মদ (স) এর খাদেম হযরত আনাস (রা.)-এর খিদমতে উপস্থিত হন।

ইমাম আবু হানিফা (র) প্রথমে কুরআন, হাদিস এবং আরবি ভাষায় গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। তারপর তিনি দীর্ঘকাল দর্শন ও কালাম শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। এরপর ফিক্হ শাস্ত্রে গভীরভাবে মনোনিবেশ করেন। তিনি কুফার বিখ্যাত ফকিহ মুহাম্মদ ইবনে সুলাইমান এর প্রতিষ্ঠিত “মাদরাসাতুর রায়”-এ পড়াশুনা করেন ।

ইমাম আবূ হানিফার প্রাথমিক কর্মজীবন একজন কাপড় ব্যবসায়ী হিসেবে আরম্ভ হয়। সততা ও কর্মনিষ্ঠা দ্বারা তিনি অতি অল্প সময়েই ব্যবসায়িক সাফল্য লাভ করেন। সমসাময়িককালে তিনি অন্যতম ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হন। পরবর্তীতে তিনি মুহাম্মাদ ইবনে সুলাইমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাতুর রায়-এ শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১২০ হিজরিতে ইমাম হাম্মাদের ইন্তিকালের পর আবু হানিফা তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।

খলিফা উমর ইবন আব্দুল আযীযের ইন্তিকালের পর তিনি উমাইয়া খলিফাদের বিরাগভাজনে পরিণত হন। খলিফাগণ ইমামকে নিজ নিজ দলে আনতে চাইলেন। এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ইমাম আবূ হানিফা (র) কে কারারুদ্ধ করা হয় এবং সৈন্যরা প্রতিদিন তাঁকে বেত্রাঘাত করতো ।


ইসলামি আইন শাস্ত্রে ইমাম আবু হানিফার অবদান

ইসলামি আইন শাস্ত্রে আবু হানিফার ভূমিকা সুবিশাল। ইমাম আবূ হানিফা (র)-এর শ্রেষ্ঠ অবদান- তিনি হানাফি মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি মানবজীবনের নানা জিজ্ঞাসা এবং উদ্ভূত সমস্যার কুরআন, সুন্নাহ এবং গবেষণাপ্রসূত যৌক্তিক সমাধান প্রদান করেন।

ইমাম আবূ হানিফা (র) ফিক্হ শাস্ত্রের শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ছিলেন। এটা সর্বজন বিদিত যে, তিনিই সর্বপ্রথম কুরআন ও হাদিসের ওপর গবেষণা করে ইসলামি আইন কানুন প্রণয়ন করেন। তিনি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কুরআন মাজীদকেই অধিকতর গুরুত্বারোপ করতেন। তিনি যে কোন জটিল প্রশ্নের সমাধান কুরআনের আলোকে প্রদান করতেন। কুরআনের পর তিনি হাদিসের ওপর নির্ভর করতেন ।

ইমাম আবূ হানিফা (র) এর অন্যতম অবদান হলো উসূলে ফিক্হ'র উদ্ভাবন। তিনি বিষয়টির যুক্তিনিষ্ঠ আলোচনা ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

ফিক্হ সংকলনের পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি নিজে বলেছেন, “আমি সর্বাগ্রে কুরআনের সুস্পষ্ট বিধির অনুসরণ করি। সেখানে না পেলে হাদিসের অনুসরণ করি। আর সেখানে না পেলে সাহাবীদের যুক্তিযুক্ত অভিমত গ্রহণ করি। তাদের সকলের অভিমত পরিত্যাগ করে আমি নতুন কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না।”


হানাফি মাযহাবের বৈশিষ্ট্য

ইসলামি শরীআতের চিন্তার সীমাহীন নীলিমায় বিশাল এক আলোকপথ হানাফি ফিক্‌হ শাস্ত্র। সাবলীলতা ও সহজতার জন্যে এই মাযহাবের অনুসারীর সংখ্যা সর্বাধিক। হানাফি ফিক্‌হের কতিপয় বৈশিষ্ট্য এখানে তুলে ধরা হল :

(১) আল-কুরআন ও হাদিসের গুরুত্ব

হানাফি ফিকহের মূলভিত্তি হলো আল-কুরআন। আল-কুরআনের উপস্থিতিতে হাদিসের আশ্রয় খুব কম নিতেন।

(২) হিকমত ভিত্তিক ফিক্‌হ

ইমাম আবূ হানিফার (র) ফিক্হ -এর প্রত্যেকটা মাস'আলা, তত্ত্ব, তথ্য, হিকমত ও মানুষের কল্যাণকারিতার ওপর পর্যালোচনার ভিত্তিতে গৃহীত হতো। যেমন অন্যান্য ইমামগণ যখন সালাত বা অন্যান্য ফরয বিষয়কে এজন্য ফরয মনে করতেন যে, শরীআত প্রবর্তকের নির্দেশ। কিন্তু ইমাম আবূ হানিফা (র) সালাত বা অন্যান্য ফরযসমূহের কল্যাণকারিতার দৃষ্টিকোণ যাচাই করতেন। যেমন সালাত সম্বন্ধে বলা হয়েছে-

إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ

“সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সূরা আনকাবুত-২৯ : ৪৫)

এমনিভাবে সাওমের উপকারিতা হলো তাকওয়া অর্জন।

(৩) সরল-সহজ ফিক্‌হ

হানাফি ফিক্হ্ অন্যান্য মাযহাব অপেক্ষা খুবই সহজ-সরল, যা সাধারণত মানুষের জন্য কল্যাণকর। মানুষের সাধ্য ও সামর্থ্যের প্রতি লক্ষ রেখেই এ মাযহাব প্রণীত হয়েছে। চোরের হাত কাটার হুকুম প্রসঙ্গে-

• হানাফি ফিক্‌হ মতে ন্যূনতম এক আশরাফী বা স্বর্ণমুদ্রা বা ঐ পরিমাণ অর্থ চুরি না করলে হাত কাটা যাবে না।

অন্যান্য ইমামের মতে ন্যূনতম ১/৪ স্বর্ণমুদ্রা চুরি করলেই হাত কাটা যাবে। এই মতামত বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, হানাফি ফিক্হ মানুষের জন্য অধিক কল্যাণকর এবং সহজ-সরল।

(৪) মানবিক আবেদন

সাধারণ মানুষের পার্থিব প্রয়োজনাদি তথা লেনদেন ও আচার আচরণের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফা (র) মানবিক আবেদনে সাড়া দিয়ে অন্তর্দৃষ্টি ও উপলব্ধির সাথে সমাধান দিয়েছেন। পক্ষান্তরে অন্যান্য ইমামগণ তার বিপরীতে বাহ্যিক নস ও প্রকাশ্য কিয়াস দ্বারা মাস'আলা ও সমস্যার সমাধান করেছেন। যেমন বিবাহের ক্ষেত্রে ইমাম আবূ হানিফা (র)-এর মতে কনে তার বিয়ের ব্যাপারে মত প্রকাশে পুরুষের ন্যায় স্বাধীন।

(৫) অমুসলিমদের স্বাধীনতা দানকারী

হানাফি ফিক্হ ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলিম জিম্মিদেরকে উদার দৃষ্টিতে গ্রহণ করে তাদের অধিকার নিশ্চিত করে। যেমন- 

* হানাফি ফিক্হ্ মতে যিম্মির রক্ত মুসলমানদের ন্যায় নিরাপদ। অর্থাৎ যিম্মিকে হত্যার অপরাধে কিসাস তথা মৃত্যু দণ্ডাদেশ দেওয়া যাবে।

* ইমাম শাফি'ঈ (র)-এর মতে যিম্মিকে হত্যা করার অপরাধে দিয়াত বা রক্তমূল্য ওয়াজিব হবে, মৃত্যুদণ্ড নয়। আবার ইমাম মালিকের (র) মতে দিয়াতের অর্ধেক ওয়াজিব।

(৬) শক্তিশালী মত গ্রহণ

হানাফি ফিক্‌হের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো কুরআন ও হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত বিষয়ে মতামত গ্রহণের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফা (রা) শক্তিশালী মত গ্রহণ করেন। যেমন- উযূর ক্ষেত্রে।

ইমাম আবূ হানিফার (র) মতে উযূর ফরয ৪টি, যা কুরআনে উল্লিখিত হয়েছে।

(৭) কিয়াসের ওপর গুরুত্ব আরোপ

ইমাম আবূ হানিফা (র) ফিহের ক্ষেত্রে কিয়াসের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কিয়াসভিত্তিক রায় প্রদানে ইমাম আবূ হানিফা (র) যুক্তিগ্রাহ্য ও শক্তিশালী মতামত গ্রহণ করতেন ।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

অফিস/বেসিক কম্পিউটার কোর্স

এম.এস. ওয়ার্ড
এম.এস. এক্সেল
এম.এস. পাওয়ার পয়েন্ট
বাংলা টাইপিং, ইংরেজি টাইপিং
ই-মেইল ও ইন্টারনেট

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ৪দিন)
রবি+সোম+মঙ্গল+বুধবার

কোর্স ফি: ৪,০০০/-

গ্রাফিক ডিজাইন কোর্স

এডোব ফটোশপ
এডোব ইলাস্ট্রেটর

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ওয়েব ডিজাইন কোর্স

এইচটিএমএল ৫
সিএসএস ৩

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৮,৫০০/-

ভিডিও এডিটিং কোর্স

এডোব প্রিমিয়ার প্রো

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৯,৫০০/-

ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স

ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এসইও, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং

মেয়াদ: ৩ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ১২,৫০০/-

অ্যাডভান্সড এক্সেল

ভি-লুকআপ, এইচ-লুকআপ, অ্যাডভান্সড ফাংশনসহ অনেক কিছু...

মেয়াদ: ২ মাস (সপ্তাহে ২দিন)
শুক্র+শনিবার

কোর্স ফি: ৬,৫০০/-

ক্লাস টাইম

সকাল থেকে দুপুর

১ম ব্যাচ: সকাল ০৮:০০-০৯:৩০

২য় ব্যাচ: সকাল ০৯:৩০-১১:০০

৩য় ব্যাচ: সকাল ১১:০০-১২:৩০

৪র্থ ব্যাচ: দুপুর ১২:৩০-০২:০০

বিকাল থেকে রাত

৫ম ব্যাচ: বিকাল ০৪:০০-০৫:৩০

৬ষ্ঠ ব্যাচ: বিকাল ০৫:৩০-০৭:০০

৭ম ব্যাচ: সন্ধ্যা ০৭:০০-০৮:৩০

৮ম ব্যাচ: রাত ০৮:৩০-১০:০০

যোগাযোগ:

আলআমিন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

৭৯৬, পশ্চিম কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড,

[মেট্রোরেলের ২৮৮ নং পিলারের পশ্চিম পাশে]

কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬

মোবাইল: 01785 474 006

ইমেইল: alamincomputer1216@gmail.com

ফেসবুক: facebook.com/ac01785474006

ব্লগ: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল *

বার্তা *