ইমাম মালেক রহ এর জীবনী
ইমাম মালিক (র)-এর মূল নাম হচ্ছে মালিক, কুনিয়াত আবু আব্দুল্লাহ, উপাধি হলো ইমাম দারিল হিজরাহ। তাঁর পিতার নাম হলো- আনাস। ইমাম মালিক (র)-এর জন্ম হয়েছে হিজরি ৯৩ সালে ।
তিনি তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন নিজের পরিবার থেকেই। তাঁর পিতা আনাস (র) পিতামহ মালিক ইবন আবু আমর মদীনায় হাদিস বিশারদ ছিলেন। তিনি তাঁর কাছে হাদিস বিষয়ে জ্ঞান অর্জন শুরু করেন ।
ইমাম মালিক (র) প্রখ্যাত ফকিহ রাবিয়াতুর রায় এর নিকট ফিক্হ শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তিনি প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আব্দুর রহমান ইবনে হরমুযসহ যুহরী ও নাফে (র) প্রমুখের নিকট হাদিস শিক্ষা লাভ করেন । তিনি ইমামুল কুরা নাফে বিন আব্দুর রহমান থেকে ইলমে কিরাত শিক্ষাগ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষকদের সংখ্যা প্রায় ৯০০ বলে জানা যায়।
তাঁর শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইবনে শিহাব আয-যুহরী, ইবনে উমায়ের আবুয্ যিনাদ, হাশেম ইবনে ওরওয়া, ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ, আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার, মুহাম্মাদ আল-মুনকাদির । ইমাম সুয়ুতী (র) তাঁর ৯৫ জন উস্তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছেন।
এই জগদ্বিখ্যাত হাদিস সংকলকের নিকট থেকে সমসাময়িক কালের সেরা সেরা জ্ঞানপিপাসুগণ জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক, আওজায়ী, ইবনে সা'দ, শু'বা, সাওরী ও ইবনে উয়াইনা অন্যতম।
ইমাম মালেক রহ এর গবেষণা ও ইসলামি আইন প্রণয়ন
ইমাম মালিক (র) ইসলামি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদিসের ওপর ব্যাপক গবেষণা করেন। তিনি হানাফি মাযহাব থেকে ভিন্নভাবে তাঁর গবেষণা শুরু করেন এবং কিয়াস পরিত্যাগ করেন। তিনি মানবজীবনে প্রয়োজনীয় নানা আইন কানুন প্রণয়ন করে তা পরবর্তীতে নিজস্ব মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত করেন।
ইমাম মালিক (র) হাদিস সংকলনে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেন। তিনি সংগৃহীত হাদিসগুলো সঠিক ও সুন্দরভাবে যাচাই করে নিতেন। যে সকল হাদিস তাঁর নিকট সন্দেহজনক মনে হতো সেগুলো তিনি বাদ দিয়ে দিতেন।
তিনি ইসলামি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে মদীনার প্রচলিত রীতি-নীতির ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করতেন। ফলে তাঁর উদ্ভাবিত আইন-কানুন সকলের নিকট সহজবোধ্য। তাঁর উদ্ভাবিত সকল আইন-কানুনই সহজ, সরল ও স্বাভাবিক।
জীবনের অধিকাংশ সময়ই তিনি মদীনায় অতিবাহিত করেন। সে সময় তাঁকে হযরত আলী (রা)-এর বংশধরের পরিচয়ে খিলাফতের দাবিদার মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ বিদ্রোহের সাথে জড়িত করা হয়। ইমাম মালিক জনগণের শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে খলিফা আল-মনসুরের বিরোধী ছিলেন। ৭৬২ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুহাম্মদ মদীনার অধিপতি হয়ে ইমাম বলে ফতোয়া জারি করলেন যে, আল-মনসুরের আনুগত্য বাধ্যতামূলক নয়। কারণ তিনি আনুগত্য জোর করে আদায় করেছেন। মুহাম্মদের অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে গেলে ইমাম মালিক (র) মদীনার গভর্নর জাফর ইবনে সুলায়মান-এর বেত্রাঘাতে দণ্ডিত হন।
ইমাম মালিক (র)-এর মৃত্যু
ইমাম মালিক (র) ৮৪ মতান্তরে ৯৩ বছর বয়সে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৭৯ হিঃ সনে রবিউল আউয়াল মাসে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন । জান্নাতুল বাকীতে তাঁকে দাফন করা হয়।
হাদিস সংকলন
ইমাম মালিক (র)-এর যুগ পর্যন্ত হাদিসশাস্ত্র ততটা সুবিন্যস্ত আকারে প্রকাশিত হয়নি। বিভিন্ন হাদিস বিভিন্ন জনের কাছে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছিল। তিনি আব্বাসীয় খলীফা আল-মনসুরের অনুরোধে জনগণের জন্য সহজ সরল করে মুয়াত্তা রচনা করেন। হাদিসশাস্ত্রে মুয়াত্তার স্থান নির্ণয় করতে গিয়ে ইমাম শাফিঈ (র) বলেন-
مَا عَلَى ظَهْرِ الْأَرْضِ كِتَابٌ بَعْدَ كِتَابِ اللَّهِ أَصَحٌ مِنْ كِتَابِ مَالِكِ
“আল্লাহর কিতাবের পর মালিক (র) সংকলিত হাদিসের কিতাব অপেক্ষা অধিক বিশুদ্ধ গ্রন্থ দুনিয়ার বুকে আর নেই।” (রিওয়াত ইবনে হাসান, আল-মুআত্তা-১/২৫)
মালিকি মাযহাবের বৈশিষ্ট্য
১. ইমাম মালিক (র) সকল যুক্তিতর্কের ওপর কুরআন ও হাদিসের ভাষ্যকে প্রাধান্য দিতেন।
২. তাঁর ফিক্হ মদীনাবাসীদের আমলের ওপর ভিত্তি করে রচিত।
৩. মালিকি মাযহাবে অমুসলিমদেরকে পূর্ণ স্বাধীনতা ও অধিকার দেওয়া হয়নি।
৪. তিনি সংস্কারমূলক আইন প্রণয়ন করেছেন।
৫. মাসআলার ক্ষেত্রে তাঁর নিজস্ব ইজতিহাদ তাঁর ফিকহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ।
৬. এই মাযহাব প্রকাশ্য রিওয়াত অনুযায়ী রচিত। বিচার-বিশ্লেষণের অবকাশ তেমন নেই। এজন্য এ মাযহাব অত্যন্ত কঠোর।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions