কুরআন শিক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত
মহাগ্রন্থ আল-কুরআন মানবজাতির হিদায়াতের জন্য নাযিল হয়েছে। মানুষের সার্বিক জীবন পরিচালনা করার জন্য আল-কুরআনে পরিপূর্ণ নির্দেশিকা রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা মহানবি (স) কে প্রেরণের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো কুরআন শিক্ষা দেওয়া। আল-কুরআন আছে-
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةِ وَيُزَكِّيهِمْ
হে আমাদের প্রভূ ! আপনি তাদের মধ্য হতে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করেন, যিনি তাদের নিকট আপনার আয়াত পাঠ করবেন, আপনার কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন।” (সূরা বাকারা)
কুরআন অনুযায়ী জীবনযাপনের জন্য কুরআন শিক্ষা করা অপরিহার্য। হাদিস শরিফে কুরআনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে সর্বোত্তম বলা হয়েছে।
خَيْرِكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنِ وَعَلَّمَهُ
“তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।” (সহীহ্ বুখারি)
কুরআন শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে মহানবী (স) বলেন-
إِنَّ الَّذِي لَيْسَ فِي جَوْفِهِ شَيْءٌ مِنَ القُرْآنِ مَا لبَيْتِ الخَرِب
“যার মধ্যে কুরআনের কিছু নেই সে যেন উজাড় ঘর”
নামাযে কুরআন পাঠ করা ফরয বিধায় প্রয়োজন পরিমাণ কুরআন মজীদ প্রত্যেক নামাযীর জন্য শিক্ষা করা ফরযে আইন। কুরআন শিক্ষার ফযিলত অনেক। যেমন হাদিসে বলা হয়েছে-
الَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآن وَ هُوَمَاهِرٌ بِهِ مَعَ السَّفَرَ ةِ الْكِرَ امِ الْبَرَرَةِ وَالَّذِى يَقْرَؤُهُ وَهُوَ يَشْتَدُّ عَلَيْهِ فَلَهُ
أَجْرَانِ
“যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং তাতে সে অভিজ্ঞ, সে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেশতার সংগী হবে আর যে ব্যক্তি কুরআন পাঠের সময় আটকে যায় এবং কষ্ট করে পড়ে তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সাওয়াব।” (আবু দাউদ)
হাদিসে আরো আছ-
إِنَّ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ أَهْلِينَ مِنْ النَّاسِ قَالَ قِيلَ مَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ أَهْلُ الْقُرْآنِ هُمْ أَهْلُ اللَّهِ وَخَاصَتُهُ
“নিশ্চয় মানুষের মধ্য হতে আল্লাহর একদল আহল আছে। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল (স) ! তারা কারা ? তিনি বললেন, যারা কুরআনের আহল, তারাই আল্লাহর আহল ও বিশেষ লোক।” (মুনাদে আহমাদ) কুরআন শিখলে এবং তা তিলাওয়াত করলে অনেক সাওয়াব পাওয়া যায়। হাদিস শরিফে আছে-
مَنْ قَرَأَ حَرْفاً مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ حَسَنَةً ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أمْثَالِهَا ، لا أقول : ألم حَرفٌ ، وَلكِنْ :
أَلِفٌ حَرْفٌ ، وَلَامٌ حَرْفٌ ، وَمِيمٌ حَرْفٌ
যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব হতে ১টি হরফ পাঠ করবে সে ১টি নেকি লাভ করবে এবং একটি নেকিকে দশগুণ বৃদ্ধি করে
দেওয়া হবে । আমি বলি না আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।” (তিরমিযী)
মানব জাতির সকল সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান উপস্থাপনের লক্ষ্যেই আল্লাহ তা'আলা আল-কুরআন নাযিল করেছেন। সুতরাং কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত ও অধ্যয়নের মাধ্যমেই এর মর্ম বাস্তব জীবনে আমল করা সম্ভব। এ কারণেই কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের ফযীলত অফুরন্ত । মহানবী (স) কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের ব্যাপারে খুবই তাকিদ দিয়েছেন। নফল ইবাদাতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদাত হচ্ছে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত। মহানবী (স) বলেন-
أَفْضَلُ الْعِبَادَةِ تِلَاوَةُ الْقُرْآنُ
“কুরআন তিলাওয়াত সর্বোত্তম ইবাদাত।”
হযরত উসমান (রা) থেকে বর্ণিত তিনি (স) বলেছেন: আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন নিয়ে ব্যস্ত থাকার দরুন আমার যিকির করা এবং আমার সমীপে প্রার্থনা করার অবসর পায় না, তাকে ঐ সকল লোকের চেয়ে বেশি কিছু দান করে থাকি, যারা প্রার্থনা করে থাকে।” (জামিউত তিরমিযী)
কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের মাধ্যমে অফুরন্ত সাওয়াব হাসিল হয়। মহানবী (স) বলেন- “যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ তিলাওয়াত করবে সে দশটি সাওয়াব লাভ করবে।”
কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের মাধ্যমে করুণাময় আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী হওয়া যায়। মহানবী (স) বলেন-
خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ
“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী যে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।” (সহীহ বুখারী) মহানবী (স) আরো বলেন-
اقْرَأُوا الْقُرْآنَ، فَإِنَّهُ يَأْتِي شَافِعًا لَأَصْحَابِهِ
“তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর, কেন না তা তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।” (তাবারানী) কুরআনে যে দক্ষ তার জন্য তো পুরস্কার আছেই, এমনকি কুরআন যে পাঠ করতে পারে না বরং পাঠের জন্য চেষ্টা-সাধনা করে, তার জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে। মহানবী (স) বলেছেন- “কুরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি সম্মানিত পুণ্য লেখক ফেরেশতাদের সঙ্গী। আর যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াতে দক্ষ নয়, অথচ পাঠ করতে গিয়ে বার বার আটকে যায় এবং তোতলায়, আর তার জন্য তা কষ্টসাধ্য হয়- তবে এমন ব্যক্তির জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার রয়েছে।” (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ পাবার মাধ্যম
কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনুগ্রহ পাওয়া যায়।
মহানবী (স) বলেন- “কোন জাতি যখন কোন ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করতে থাকে এবং পরস্পরকে শিক্ষাদান করতে থাকে, তখন আল্লাহর রহমত ও করুণাধারা তাদেরকে আবৃত করে রাখে। রহমতের ফেরেশতারা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখে। এমনকি স্বয়ং আল্লাহ তাঁর নিকটস্থদের সাথে তাদের সম্পর্কে আলোচনা (গর্ব) করে থাকেন।”
মহানবী (স) আরো বলেন-
“যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করে, সে ব্যক্তি যেন কুরআন তিলাওয়াত করে।” (মুসলিম)
কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে ইহকালীন জীবনে শত্রুর হাত হতে নিরাপত্তা লাভ করা যায়।
কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের মাধ্যমে পরকালীন মুক্তির পথ সুগম হয়। হযরত আলী (রা) বর্ণনা করেছেন-
“যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে ও তা কণ্ঠস্থ করে আর তাতে বর্ণিত হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম হিসেবে মেনে চলে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে স্থান দেবেন। তদুপরি তাঁর স্বজনদের মধ্য হতে দশজন লোকের জন্য তার সুপারিশ মঞ্জুর করা হবে, যাদের জন্য দোযখের ফয়সালা হয়ে গিয়েছিল।” (মিশকাত)
যে ব্যক্তি নিষ্ঠার সাথে কুরআন তিলাওয়াত করবে, করুণাময় আল্লাহ তাঁর সার্বিক উন্নতির যাবতীয় পথ সুগম করে দেবেন। মহানবী (স) বলেন- “কুরআন তিলাওয়াতের বরকতে বহু লোক উন্নতি লাভ করবে এবং কুরআনকে অবহেলার কারণে বহু লোক অপমানিত হবে।” (মিশকাত)
কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মানুষের অন্তরের মরিচা দূর হয় এবং হৃদয়ে প্রশান্তি আসে। মহানবীর (স) হাদীস- “অন্তরসমূহে মরিচা ধরে, যেভাবে লোহায় পানি লাগলে মরিচা ধরে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, হে রাসূল! (স) এর প্রতিষেধক কী ? মহানবী (স) বললেন, বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ এবং কুরআন তিলাওয়াত করা।” (মিশকাত)
মহানবী (স) বলেন- “যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং তদনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে, কিয়ামতের দিনে তার পিতা- মাতাকে সূর্যের চেয়েও অধিকতর আলোকিত মুকুট পরানো হবে।” (মিশকাত)
মহানবী (স) আরো বলেন, “কিয়ামতের দিন কুরআন তিলাওয়াতকারীকে বলা হবে কুরআন তিলাওয়াত করতে থাক আর বেহেশতের উপরে উঠতে থাক।” (মিশকাত)
হৃদয়ে প্রশান্তি লাভের উপায়:
কুরআন তিলাওয়াত মনে প্রশান্তি আনয়ন করে। এর ফলে আল্লাহর রহমত নাযিল হয় এবং আল্লাহর স্মরণ মনে জাগরূক থাকে ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions