মাক্কী ও মাদানী সূরা
১. মাক্কী সূরা
হযরত মুহাম্মাদ (স)-এর নবী জীবনে মক্কায় অবস্থানকালে তাঁর মদীনায় হিজরতের পূর্ব পর্যন্ত ১৩ বছরে যে সকল সূরা বা আয়াত নাযিল হয়, সেগুলোকে মাক্কী সূরা বা মাক্কী আয়াত বলা হয় ।
২. মাদানী সূরা
হযরত মুহাম্মাদ (স)-এর মদীনায় হিজরত করার পর জীবনের শেষ ১০ বছরে মদীনায় কিংবা অন্য যে কোন স্থানে যে সকল সূরা ও আয়াত নাযিল হয় সেগুলোকে মাদানী সূরা ও মাদানী আয়াত বলা হয় ।
মাক্কী ও মাদানী সূরাসমূহের বৈশিষ্ট্য
হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবী জীবনের দু'টি অধ্যায়। প্রথম অধ্যায় হচ্ছে নবুওয়াত পাওয়ার পর মদীনায় হিজরত করে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তের বছরের জীবন। তাঁর হিজরত করার পর মদীনার দশ বছরের জীবন হচ্ছে দ্বিতীয় অধ্যায়। এ দু'অধ্যায় মহানবী (স)-কে দুধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এ পরিবেশ পরিস্থিতিকে সামনে রেখেই কুরআনের আয়াত ও সূরাসমূহ নাযিল হয়। তাই এ দু অধ্যায়ের সূরাসমূহের দু'ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
নিচে মাক্কী ও মাদানী সূরাসমূহের বৈশিষ্ট্য ও বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা হলো-
মাক্কী সূরার বৈশিষ্ট্য ও বিষয়বস্তু-
১. মাক্কী সূরাগুলো আকারে ছোট।
২. এতে আল্লাহর একত্ববাদ বা তাওহীদের বর্ণনা রয়েছে।
৩. এতে রিসালাত ও নবুওয়াতের বর্ণনা রয়েছে।
৪. এতে আখিরাত বা পরকালীন জীবন সম্পর্কে আলোচনা স্থান পেয়েছে।
৫. মাক্কী সূরায় কুরআনের সত্যতার প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে।
৬. এতে শিরক ও কুফরের যুক্তি ও উপমা ভিত্তিক বিরোধিতা করা হয়েছে।
৭. এতে জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনা বেশি এসেছে।
৮. এতে পারলৌকিক বিচার ও হিসাব নিকাশের বর্ণনা উপস্থাপিত হয়েছে।
৯. এ সকল সূরায় আকাইদ ও ইমান সম্পর্কিত ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের আলোচনা করা হয়েছে।
১০. মাক্কী সূরায় চরিত্র গঠন ও পরিশুদ্ধির নির্দেশনা স্থান পেয়েছে।
১১. এতে নৈতিকতাবোধ, চিন্তাশক্তি ও বিবেকবোধ জাগ্রত করে সত্য গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
১২. নুবুওয়াতী দায়িত্ব পালনের উপযোগী উপদেশ প্রদান করা হয়েছে।
১৩. এ পর্বের সূরাগুলোর ভাষা স্বচ্ছ ও ঝরণাধারার মতো ঝরঝরে, হৃদয়গ্রাহী, সহজে মুখস্থ হওয়ার যোগ্য।
১৪. মাক্কী পর্যায়ের সূরার প্রারম্ভ শপথ বাক্য দ্বারা উপস্থাপন করা হয়েছে।
১৫. মাক্কী সূরা ৯২টি ।
মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্য ও বিষয়বস্তু-
১. মাদানী পর্বের সূরাগুলো আকারে দীর্ঘ।
২. এতে ইবাদাতের বর্ণনা এসেছে।
৩. এতে আহকামে শরীআতের বর্ণনা ব্যাপকভাবে করা হয়েছে।
8. এতে হালাল ও হারামের বিস্তৃত বর্ণনা এসেছে।
৫ . মাদানী পর্বের সূরায় ইসলামী রীতি-নীতির বিশদ বর্ণনা উপস্থাপিত হয়েছে।
৬. এতে অর্থনৈতিক আইন যথা- যাকাত, উশর, ক্রয়-বিক্রয়, লেনদেন ও উত্তরাধিকার আইন ইত্যাদি বিষয়ের বিবরণ রয়েছে।
৭. ইসলামের ব্যবহারিক জীবন তথা আচার-ব্যবহার, বিয়ে-শাদী, তালাক ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে।
৮. সামরিক আইন ও জিহাদ ইত্যাদি বর্ণনা করা হয়েছে।
৯. পররাষ্ট্রনীতি, সন্ধি, চুক্তি ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে।
১০. সামাজিক-রাষ্ট্রীয় এবং জাতীয়-আন্তর্জাতিক বিষয়াদির বিবরণ উপস্থাপিত হয়েছে।
১১. মুনাফিক, কাফির, জিম্মি, আহলে কিতাব, শত্রু, মিত্র, তথা অমুসলিম জনগোষ্ঠীর সাথে আচরণ বিধির বিবরণ রয়েছে।
১২. এ পর্বের সূরায় ঐতিহাসিক বিবরণ এনে সত্য গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
১৩. এ পর্বের সূরাগুলোর সুদীর্ঘ-বর্ণনা ধারা ও ছন্দময় আয়াত অত্যন্ত আকষর্ণীয় ও প্রলম্বিত।
১৪. এ পর্বের সূরায় শপথের বাক্য কম।
১৫. মাদানী সূরা ২২টি।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions