ওহী কি
হযরত আদম (আ) থেকে আরম্ভ করে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (স) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলই ওহীর মাধ্যমে হিদায়াত লাভ করে মানব জাতিকে সত্য পথের সন্ধান দিয়েছেন। মহানবী (স) ওহী ছাড়া কোন কথা বলতেন না। কুরআনে বলা হয়েছে-
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى اِنْ هُوَ الَّا وَحْيٌ يُوحَى
“আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না। এতো ওহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়” (সূরা নাজম ৫৩:৩)
মূলত ওহী থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান অধিক নির্ভুল ও বিশ্বাসযোগ্য।
‘ওহী'র অর্থ
ওহী'র শাব্দিক অর্থ ইঙ্গিত করা, লেখা, সংবাদ দেওয়া, ইলহাম হওয়া ইত্যাদি।
শরীআতের পরিভাষায় আল্লাহ তা'আলা তাঁর নবীগণকে কথার মাধ্যমে বা ফেরেশতা পাঠিয়ে কিংবা স্বপ্নযোগে অথবা ইলহামের সাহায্যে কোন বিষয় জানিয়ে দেওয়াকে ওহী বলা হয়।”
ওহীর প্রকারভেদ
ওহী প্রধানত দু'প্রকার-
১. ওহীয়ে মাঞ্জু (পঠিতব্য ওহী) : যে ওহীর ভাব, শব্দ ও ভাষা, অর্থ, বিন্যাস সবকিছুই মহান আল্লাহ প্রত্যক্ষ ওহীর মাধ্যমে নাযিল করেছেন এবং যা সংরক্ষণ ব্যবস্থাও করেছেন। এ প্রকারের ওহীকে ওহীয়ে মাত্রু (পঠিতব্য ওহী) ও ‘ওহীয়ে জলী' (প্রত্যক্ষ ওহী) বলা হয়। এটাই পবিত্র কুরআন মাজীদ।
২. ওহীয়ে গাইরে মাতলু (অপঠিতব্য ওহী) : যে ওহীর ভাব আল্লাহর পক্ষ থেকে; কিন্তু এর ভাষা ও শব্দ স্বয়ং রাসূল (স)- এর তাকে ওহীয়ে গাইরে মালু (অপঠিতব্য ওহী) ও ওহীয়ে খফী (প্রচ্ছন্ন ওহী) বলা হয়। এ প্রকারের ওহী হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (স)-এর হাদীস। এ উভয় ওহী একই উৎস থেকে উৎসারিত।
ওহী নাযিলের অবস্থা
নবীদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনভাবে ওহী এসেছে। যথা- ১. ওহীয়ে কালবী, ২. ওহীয়ে কালামে ইলাহী এবং ৩. ওহীয়ে মালাকী ।
১. ওহীয়ে ক্বালবী : কারো মাধ্যম ছাড়াই আল্লাহ তা'আলা সরাসরি নবীর হৃদয়ে কোন কথা বা বিষয় ওহী হিসেবে পাঠাতেন। এ প্রকার ওহীকে ওহীয়ে ক্বালবী বলা হয়। নবীদের স্বপ্ন এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
২. ওহীয় কালামে ইলাহী : ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়াই স্বয়ং আল্লাহ নবীর কাছে যে ওহী প্রেরণ করেন, তাকে ওহীয়ে কালামে-ইলাহী' বলা হয়। এ পদ্ধতিতে আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা হয় ও তাঁর সান্নিধ্য লাভ হয়। যেমন মি'রাজের সময় রাসূলুল্লাহ (স)-এর সাথে আল্লাহর বাক্যালাপ এবং হযরত মূসা (আ)-এর সাথে কথোপকথন হয়েছিল।
৩. ওহীয়ে মালাকী : আল্লাহ তা'আলা তাঁর পবিত্র বাণী কোন ফেরেশতার মাধ্যমে নবীর নিকট পৌঁছিয়ে দেন। পবিত্র কুরআন মাজীদ এ পদ্ধতিতে নাযিল হয়েছিল।
মহানবী (স)-এর প্রতি ওহী নাযিলের পদ্ধতি
পবিত্র কুরআন-হাদিসের বর্ণনা থেকে মহানবী (স)-এর প্রতি ওহী নাযিলের যে পদ্ধতিসমূহ জানা যায় তা হল-
১. সত্য স্বপ্ন : হযরত আয়িশা (রা) বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায়- নুবুওয়াত লাভের প্রাথমিক পর্যায়ে মহানবী (স)-এর উপর ওহী নাযিলের শুভ সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। এ ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়েছে-
لَقَدْ صَدَقَ اللَّهُ رَسُوْلَهُ الرُّؤْيَا بِالْحِقِّ
“আল্লাহ তাঁর রাসূল (স)-এর স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছেন।” (সূরা ফাত্হ- ৪৮ : ২৭)
হযরত ইবরাহীম (আ) পুত্র ইসমাঈল (আ)-কে কুরবানী করার জন্য স্বপ্নে আদিষ্ট হন। সুতরাং নবীদের স্বপ্ন ওহীর অন্তর্ভুক্ত।
২. অন্তর্লোকে ফুঁকে দেওয়া : এ পদ্ধতিতে জিবরাঈল (আ) মহানবী (স)-কে দেখা না দিয়ে তাঁর হৃদয়পটে কোন কথা ফুঁকে দিতেন কিংবা আল্লাহ তা'আলা স্বয়ং নবীর অন্তর্লোকে কোন কথা উদ্রেক করতেন।
৩. ঘণ্টাধ্বনির মাধ্যম : ওহী নাযিলের পূর্ব মুহূর্তে মহানবী (স)-এর কানে ঘণ্টাধ্বনির মত আওয়াজ অবিরাম বাজতে থাকতো। আর এর সঙ্গে সঙ্গেই ফেরেশতাও কথা বলতে থাকতেন। এ পদ্ধতিকে সালসালাতুল জারাস বলা হয়েছে। এটা ছিল কঠিনতম পদ্ধতি । প্রচণ্ড শীতেও এ সময় মহানবীর (স) শরীর থেকে তীব্র বেগে ঘাম ঝরে পড়তো।
৪. ফেরেশতার মানবাকৃতিতে আগমন : কখনো ফেরেশতা মানবাকৃতি ধারণ করে মহানবী (স)-এর নিকট এসে ওহী পৌঁছে দিতেন। এ পদ্ধতি ছিল সহজতর। হাদিসে জিবরাঈল নামে অভিহিত হাদীসখানা এ পদ্ধতির ওহীর উদাহরণ।
৫. ফেরেশতা নিজের আকৃতিতে আগমন : হযরত জিবরাঈল (আ)-কে মহান আল্লাহ যে আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, ঠিক সেই আকৃতিতে রাসূল (স)-এর নিকট ওহী নিয়ে আসতেন। মহানবী (স) ৩ বার হযরত জিবরাঈল (আ)-কে স্বরূপে দেখেছিলেন ।
৬. পর্দার অন্তরাল থেকে সরাসরি : মহান আল্লাহ মহানবী (স)-এর সাথে কোন মাধ্যম ছাড়াই পর্দার অন্তরাল থেকে সরাসরি কথা বলতেন। মি'রাজের সময় আল্লাহর সাথে এভাবেই কথা হয়। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এ পদ্ধতিতে ফরয হয় ।
৭. তন্দ্রাবস্থায় সরাসরি ওহী : মহানবী (স) তন্দ্রাবস্থায় আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি ওহী পেতেন। এ পদ্ধতিতে মহানবী (স) সাতবার ওহী পেয়েছেন বলে হাদিস থেকে জানা যায় ।
৮. অন্তরাল ছাড়া ওহী : এ পদ্ধতিতে আল্লাহ তা'আলা কোন অন্তরাল ছাড়াই সরাসরি রাসূল (স)-এর সাথে কথা বলেছেন।
৯. ইসরাফীল (আ)-এর মাধ্যমে ওহী : কোন কোন সময় মহানবী (স)-এর কাছে হযরত ইসরাফীল (আ)-এর মাধ্যমেও ওহী নাযিল হতো।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions