প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য কি?
প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য (Objectives of Training)
মানব সম্পদ প্রতিষ্ঠানের প্রান এবং প্রধান চালিকা শক্তি। মানব সম্পদ দ্বারা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত আরোপের সম্পদ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাই একদিকে তাকে প্রতিষ্ঠানের নীতি, কার্য-পদ্ধতি, উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিচিত হতে হয়, অপর দিকে পেশাগত দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও সামর্থ্য থাকতে হয়। প্রশিক্ষণের এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপুর্ণ হাতিয়ার। যার মাধ্যমে কর্মীর সকল প্রয়োজন পরিপূরণ করে তাকে সর্বোচ্চ মাত্রায় সাফল্যের সুযোগ করে দেয়।
প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যকে আমরা নিম্নরুপে আলোচনা করতে পারি:
১. নতুন কর্মীও প্রতিষ্ঠান পরিচিতি : প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত নতুন কর্মীদের কার্যের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পরিচিত করা হয এবং সাথে সাথে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেও ধারণা দেয়া হয়।
২, প্রতিষ্ঠানের নীতি, পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানদান : প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের আদর্শ-দর্শন, নীতি- পদ্ধতি, কার্যধারা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে জ্ঞান দান করা হয়। ফলে তারা এসকল বিষয়ের প্রতি সর্বদা যত্নবান থাকে ।
৩. ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জ্ঞানদান : প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা প্রকৃত ও প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। ফলে কর্মী-ব্যবস্থাপনার মধ্যে দূরত্ব হ্রাস পায় এবং সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।
৪. প্রতিষ্ঠান ও ক্রেতা সম্পর্কে জ্ঞানদান : বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ ব্যবসায়ে ক্রেতাই হলো রাজা। তাই ক্রেতার সন্তুষ্টির উপরই প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নির্ভর করে। এজন্য ক্রেতাদের সাথে ভালো সম্পর্ক সৃষ্টি, সংরক্ষণ ও উন্নয়নের উদ্যোগ নিতে হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এটি সহজেই করা যায়। ফলে কর্মীদের সাথে, প্রতিষ্ঠানের সাথে ক্রেতাদের সম্পর্ক সুমধুর হয়।
৫. আইন-কানুন সম্পর্কে জ্ঞানদান : প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় বিভিন্ন আইন কানুন জানা দরকার। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের শ্রম ও শিল্প আইন, মজুরি আইন, শ্রম নীতি, ক্রেতা অধিকার সংরক্ষণ আইন, বেতন ও মজুরী আইন ইত্যাদি সম্পর্কে কর্মীদের প্রয়োজনীয় জ্ঞানদান করা যায়।
৬. আচরণ ও মনোভাবের উন্নয়ন : কর্মীরা যেন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীন পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে নিজেদেরকে তৈরি করতে পারেন। প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যদের সাথে আচার-আচরণ করতে পারেন। সহযোগীতামূলক মনোভাব প্রকাশ করতে পারেন এজন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। ফলে কর্মীদের মনোভাব ও মানসিকতার পরিবর্তন হয়।
৭. দক্ষতা বৃদ্ধি : কর্মীদের কার্য সম্পাদন জ্ঞান, দক্ষতা, কৌশল বৃদ্ধির জন্যই মূলত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রশিক্ষণের ফলে কর্মি আরো দক্ষ ও পারদর্শী হয়ে উঠে।
৮. দুর্ঘটনা রোধ : প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের কার্যসম্পাদন সম্পর্কে আধুনিক ও বাস্তব জ্ঞান অর্জনের সুযোগ দেয়া হয়। ফলে সে কার্য সম্পাদন সম্পর্কে দক্ষ হয় এবং দুর্ঘটনা সম্পর্কে সতর্ক ও সজাগ হয়। ফলে কার্য সম্পাদন সম্পর্কিত দুর্ঘটনা ও ঝুঁকির মাত্রা হ্রাস পায় ।
৯. আত্মবিশ্বাস উন্নয়ন : প্রশিক্ষণের ফলে স্বীয় কার্য দক্ষতার সাথে সম্পাদন বিষয়ে কর্মীর মনে আত্মবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়। সে স্বেচ্ছায় স্বীয় উদ্যোগ স্বীয় কার্য দক্ষতার সাথে সম্পদের চেষ্টা করে। এতে তত্ববধান এর প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পায়।
১০. সামাজিক দক্ষতা উন্নয়ন : প্রশিক্ষণের দ্বারা কর্মীদের মনোভাব এবং আচার-আচরণের পরিবর্তন হয়। ফলে প্রত্যেকের মধ্যে ব্যক্তিস্রাতন্ত্র্যতা, ভাব প্রকাশের ধরণ, বক্তব্য উপস্থাপনের ক্ষমতা, প্রতিনিধত্ব করার যোগ্যতা বৃদ্দি পায়। এ সকল কারণে সমষ্টিগতভাবে তার সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
১১. মানবিক সম্পর্ক উন্নয়ন : প্রশিক্ষণ কর্মীদের মধ্যে মানবিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে শিক্ষা দেয়া প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কিরুপে দলগতভাবে কাজ করতে হবে, থাকতে হবে, পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। ফলে সামগ্রিকভাবে কর্মীদের মানবিক সম্পর্কের উন্নয়ন হয়।
১২. পরিবর্তন সম্পর্কে জ্ঞানদান : প্রয়োজন, পরিবেশ, পরিস্থিতি, ক্রেতাদের রুচি এবং অভ্যাস সবই পরিবর্তনশীণ । এই পরিবর্তন সব কিছুর সাথে খাপ খাওয়ানের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ অতি ফলপ্রসু হাতিয়ার। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরিবর্তিত পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য কর্মীদের অবহিত করা হয়। ফলে পরিবর্তিত অবস্থার সাথে খাপ খাওয়া সংক্রান্ত তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় ।
১৩. সম্পদের সদ্ব্যবহার ও অপচয় হ্রাস : প্রশিক্ষণের ফলে কর্মীদের মধ্যে সম্পদের সর্বোচ্চ এবং কাম্য সদ্ব্যবহার সম্পর্কে ধারনা দেয়া হয়। ফলে তারা সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে এবং ফলশ্রুতিতে অপচয় ব্যাপক মাত্রায় হ্রাস পায়।
১৪. নিরাপত্তা বিধান : প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কার্যসম্পাদন সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক, ঝুঁকি, অনিশ্চয়তা, সুবিধা, জটিল উৎপাদন প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে কর্মীদের অবহিত করানো হয়। ফলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মি অত্যন্ত আস্থা ও নিরাপত্তার সাথে তার কার্য সমাধা করত পারে।
১৫. বহুমূখি দক্ষতা বৃদ্ধি : কার্য সম্পাদনের উপযোগী বিভিন্ন দিক সম্পর্কে কর্মীদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে তাদের মধ্যে বহুমখি জ্ঞান-দক্ষতা বৃদ্ধি পায় ।
১৬. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি : প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের কার্যসম্পাদন যোগ্যতা, দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, কার্যের গুণ ও মান বৃদ্ধি পায়। ফল স্বরুপ কর্মিদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
১৭. অকেজো অবস্থা থেকে রক্ষা : প্রশিক্ষণ কর্মীদের কার্য সম্পাদন দক্ষতা, পদ্ধতি, প্রক্রিয়া বিষয়ে, পরিবর্তিত পরিবেশ, পরিস্থিতি বিষয়ে সতর্ক করে তোলে, ফলে কর্মীরা অকেজো হয় না- সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারনা রাখে।
১৮. শ্রম অসন্তোষ ও কর্ম পরিবর্তন হ্রাস : প্রশিক্ষণের ফলে প্রতিষ্ঠানের কর্মিদের সম্পর্ক ভালো এবং উন্নত হয়। ফলে তাদের মধ্যে দ্বন্দ, অসন্তোষ হ্রাস পায় এবং তারা কর্মস্থল পরিবর্তন করতে চায় না ।
১৯. ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি : প্রশিক্ষণের ফলে কর্মীরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কার্যএলাকায় অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ হয়ে উঠে । ফলে তাদের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির সুযোগ বৃদ্ধি পায়।
উপরের আলোচনা থেকে আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারবেন যে, প্রতিষ্ঠান কর্মীদের প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য অনেক। মূলত এসকল উদ্দেশ্য নিশ্চিতের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়ে থাকে ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions