কার্য ডিজাইন কি
কার্য ডিজাইন কি ?
What is Job Design?
প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একগুচ্ছ কার্যাবলীই হচ্ছে কার্য। আর একটি কার্য বা কাজ কিভাবে সম্পাদন করতে হবে তা নির্ধারণ করাকেই কার্য ডিজাইন বলে। নিম্নে কার্য ডিজাইনের কয়েকটি জনপ্রিয় সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো :
Evert E. Adam এবং Ronald T. Ebert বলেন, “প্রতিটি কাজের বিষয়বস্তু সুনির্দিষ্টকরণ এবং কাজটি সংগঠনের মধ্যে কিভাবে বণ্টন করা হবে তা নির্ধারণ করাকে কার্য ডিজাইন বলে।”
William J. Stevenson বলেন, “কাজের বিষয়বস্তু এবং সম্পাদনের পদ্ধতি সুনির্দিষ্টকরণের কাজকেই কার্য ডিজাইন বলে।”
উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বল যায়, প্রতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্যে অর্জনের লক্ষ্যে কার্য সম্পাদনের পদ্ধতি, কাজের অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তু এবং কাজকে প্রভাবিত করে এমন উপাদানসমূহ সুনির্দিষ্টকরণের কার্যাবলীকেই কার্য ডিজাইন বলা হয়।
কার্য ডিজাইনের নীতিমালা
Principles of Job Design
কার্য ডিজাইন করার সময় কতকগুলো নীতিমালা অনুসরণ করা হয়। রবাটসন এবং স্মিথ কার্য ডিজাইনের ক্ষেত্রে পাঁচটি নীতিমালা অনুসরণের কথা বলেছেন যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
১. কর্মীদের ব্যক্তি বিশেষের কাজ এবং যৌথ কাজের জন্য সুযোগ তৈরি ও বিভিন্ন দক্ষতা প্রদর্শনে উৎসাহিত করতে হবে।
২. সাধারণ কার্য বিভাগে কার্যাবলী চিহ্নিতকরণ কার্যক্রমকে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
৩. সাধারণ কার্য বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিতে হবে ।
৪. কর্মীদের নিজস্ব কার্য পদ্ধতির জন্য তাদেরকে দায়-দায়িত্ব দিতে হবে এবং স্বায়ত্তশাসনকে উৎসাহিত করতে হবে।
৫. ফলাবর্তন, ভাল সম্পর্ক স্থাপন এবং বিভিন্ন পদ্ধতিতে মুক্ত জবাবদিহিতার ব্যবস্থা স্থাপনে গুরুত্ব দিতে হবে।
কার্য ডিজাইনের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান
Factors Influencing Job Design
কার্য ডিজাইনের ক্ষেত্রকে প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামোসহ বিভিন্ন বিষয় প্রভাবিত করে। যে সকল উপাদান দ্বারা কার্য ডিজাইন প্রভাবিত হয় সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. স্বকীয়/অন্তর্মুখী প্রেষণা প্রক্রিয়া : এটি কার্য ডিজাইনের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়ে থাকে। বস্তুত কর্মীদের কার্যকরী দক্ষতা প্রকাশের জন্য তাদের আত্ম-সন্তুষ্টি প্রয়োজন। তাই কার্য ডিজাইনের সময় বিবেচনা করা হয় কিসে কর্মীরা সর্বোচ্চ আত্মসন্তুষ্টি পাবে ।
২. কার্য কাঠামোর বৈশিষ্ট্যসমূহ : কার্য ডিজাইনের ক্ষেত্রে শুধু একটি কার্য বৈশিষ্ট্যকে বিবেচনা করা হয় না, গ্রুপভিত্তিক কার্য বৈশিষ্ট্যগুলোকে বিবেচনা করা হয়। কেননা, প্রতিটি কাজের মধ্যে অনেকগুলো উপাদান রয়েছে। কার্য ডিজাইনের ক্ষেত্রে কার্য কাঠামোর বৈশিষ্ট্যগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।
৩. কার্যসমূহের প্রেষণাভিত্তিক বৈশিষ্ট্যসমূহ : কার্য ডিজাইনের ক্ষেত্রে আন্তপ্রেষণা জাগ্রত করার জন্য কার্যসমূহ এমনভাবে সাজানো হয় যাতে কর্মীরা প্রেষিত হয়। কার্য ডিজাইনের সময় সর্মীদেরকে কার্য সম্পাদনের ক্ষমতা দেয়া হয়। এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, নির্দেশনা এবং সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়।
৪. কার্য বৈশিষ্ট্যের মডেল : কার্য ডিজাইনের সময় কার্য বৈশিষ্ট্যের বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়। হ্যাকম্যান এবং গুল্ডহাম ১৯৭৪ সালে এবং রবার্টসন ১৯৯২ সালে প্রেষণাভিত্তিক কতকগুলো কার্য বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন যেগুলো কার্য বৈশিষ্ট্যর মডেলে অন্তর্ভুক্ত সেগুলোকে বিবেচনা করা হয়।
৫. স্বকীয়/অন্তর্মুখী প্রেষণা প্রদান : কার্য ডিজাইনের ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখতে হয় কিভাবে কর্মীরা অন্তর্মুখী বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রেষিত হবে। সেক্ষেত্রে তিনটি বিষয়, যেমন-ফলাবর্তন, সামর্থ্যের ব্যবহার আত্মনিয়ন্ত্রণ বিবেচনায় রাখতে হয়।
পরিশেষে বলা যায়, সুষ্ঠু কার্য ডিজাইনের উপর কর্মীদের সাফল্য এবং প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অনেকাংশ নির্ভরশীল। তাই কোন প্রতিষ্ঠানের কার্য ডিজাইনের ক্ষেত্রে উপরোক্ত বিষয় বা উপাদানগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হয়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions