জরিপ গবেষণা কাকে বলে
জরিপ গবেষণা কি?
জরিপ গবেষণা পদ্ধতির দুই একটি নমুনা আজকাল দৈনিক পত্রিকা খুললেই আমরা দেখতে পাই। কোন দেশের সাধারণ নির্বাচন, রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তা, কোন নতুন উপাদানের ব্যবসায়িক সাফল্য ইত্যাদি কাজে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা নিজস্ব উদ্যোগে বা মূল প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্তির কারণে পরিচালনা করে।
জরিপ কথাটির সাথে সাধারণ জনগণ জনসংখ্যা জরিপ বা ভূমি জরিপ ধারণা দু'টো মিলিয়ে দেখতে অভ্যস্থ। উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বে ইদানীং শিক্ষাক্ষেত্রে গবেষণা বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ছোট নমুনা নিয়ে কাজ করার মত পরিস্থিতিতে জরিপ গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করা চলে। যে কোন গবেষণা কাজের মত জরিপ পদ্ধতিতে লক্ষ্য স্থির করতে হয় প্রথমে।
জরিপ গবেষণায় দুইটি মূল প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। এই দুইটি হচ্ছে নিবিড় সাক্ষাৎকার বা intensive interview এবং ক্রমবর্ধিত পরিমার্জন বা progressive modification দ্বিতীয় প্রক্রিয়া ব্যবহার করলে একই সময়ে প্রথমটিও ব্যবহার করা সম্ভব।
জরিপ গবেষণায় প্রশ্নমালা প্রস্তুতকরণ পর্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা এবার দেখি জরিপ গবেষণা কাজে কিভাবে অগ্রসর হতে হয়। প্রথমে জরিপ কাজটির মূল লক্ষ্য স্থির করতে হয়, এরপর লক্ষ্যদল নির্ধারণ করতে হয়। লক্ষ্যদলের কোন প্রতিনিধিত্বশীল অংশ নমুনা হিসেবে চিহ্নিত করা আবশ্যক তা নির্ধারণ করতে হয়। এরপর প্রশ্নমালার মাধ্যমে গবেষণার উপাত্ত সংগ্রহ করতে চাইলে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে প্রশ্নমালা প্রস্তুত করতে হবে। প্রশ্নমালা প্রস্তুত করার পর এর ত্রুটি বিচ্যুতি খুঁজে বের করতে হয় । এরপর প্রশ্নমালা যারা মাঠ পর্যায়ে ব্যবহার করবেন সেইসব মাঠ কর্মীদের নির্বাচন কাজ সম্পন্ন করে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হয়। মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হলে কেন্দ্রবিন্দুতে যে গবেষক দল অবস্থান করেন তাদের কাজ হল মাঠ কর্মীদের কাজ অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে অবিরত প্রক্রিয়ায় পর্যবেক্ষণ করা। মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ করে কর্মীদল ফিরে আসলে raw data বা প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত উপাত্ত শ্রেণীবদ্ধ করার মাধ্যমে ফলাফল বের করার পর্ব শুরু হয়।
জরিপ গবেষণা কাজের জন্য প্রশ্নমালা তৈরি করার সময় কি ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় তা দেখব এবার।
- উত্তরদাতার কাছে যে সমস্ত শব্দ অপরিচিত মনে হতে পারে সেগুলো ব্যবহার না করা।
- নেতিবাচক শব্দ বা ধারণা উপস্থাপন না করা।
- একটি প্রশ্নে অত্যধিক তথ্য বহনকারী শব্দের সমাবেশ না ঘটানো।
- মানবাচক শব্দের ব্যবহার এড়িয়ে চলা।
- “একই রকম”, “আগের মত” জাতীয় উত্তর আসতে পারে এ ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস না করা।
- পরামর্শ বা উপদেশমূলক প্রশ্ন জিজ্ঞেস না করা।
- উত্তরদাতার স্মৃতি শক্তির প্রয়োজন হবে এমন প্রশ্নের সংযোজন না করা।
মনে রাখতে হবে প্রশ্ন যেন ছোট, সহজবোধ্য এবং মূর্ত হয়। গবেষণা কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ থাকলে প্রতিটি প্রশ্নের জন্য একটি করে “উত্তরের পছন্দ” বা choice of answer কার্ড তৈরি করা উচিত। কারণ সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী একাকী প্রশ্ন উত্থাপন করা এবং সম্ভাব্য উত্তরগুলো পড়ে শোনানো দুইটি কাজ করে গেলে উত্তর প্রদানকারী বিরক্তবোধ করতে পারেন। কার্ড প্রস্তুতকরা সম্ভব হলে কার্ডের লেখাগুলো যেন স্পষ্ট হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
লক্ষ্য রাখতে হবে যেন উত্তর দাতা প্রশ্নটির অর্থ ঠিকমত বুঝতে পারেন। “প্রশ্ন যাচাইকরণ বা question testing” প্রক্রিয়া ব্যবহার করে এ সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন প্রণয়নকারী নিজেই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর লিখে নেন। এরপর তিনি একজন সম্ভাব্য উত্তরদাতার সাথে আলাপের মাধ্যমে কোন প্রশ্নের কোন দুর্বলতা আছে কিনা তা সনাক্ত করার চেষ্টা করেন। এরজন্য প্রয়োজনবোধে তিনি সম্ভাব্য উত্তরদাতাকে পারিশ্রমিকও দিয়ে থাকেন । এই আলাপচারিতা অডিও, টেপরেকর্ডিং এর মাধ্যমে রেকর্ড করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় একজন উত্তরদাতাকে সর্বোচ্চ তিনটি প্রশ্নের উত্তরের সত্যতা যাচাই করতে বলা হয়।
এবার আমরা একটি দেশীয় এবং একটি বিদেশী জরিপ গবেষণার উদাহরণ দেখে পাঠটি শেষ করব।
সম্প্রতি (১৯৯৯ সালে) CFSD (Centre For Sustainable Development) এর আওতায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক বুড়িগঙ্গা নদীর গুরুত্ব সম্পর্কে একটি জরিপ গবেষণা করেছেন। ঢাকা শহরের বিভিন্ন পেশাজীবিদের মধ্য থেকে এরা মোট ৮৩৮ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৯৪.৫ শতাংশ বলেছেন টেমস্ নদী যেমন লনের জন্য পরিচয় বহন করে, নীল নদ যেমন কায়রোর পরিচয় প্রদান করে ঠিক বুড়িগঙ্গা ও ঢাকা শহরের ঐতিহ্য সমার্থক, ইত্যাদি। [উৎস: ১৭ অক্টেবর ‘৯৯ এর The Daily Star
আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের Scarborough Research Unit of New York ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারি হতে এক বৎসর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ৬৪টি মুখ্য বাজার বা market এ ১৭০,০০০ জন প্রাপ্ত বয়স্ককে প্রশ্ন করে একটি জরিপ গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। গবেষণার লক্ষ্য ছিল প্রধান শহরগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা বের করা। দেখা গেল, রাজধানীর ৬০ শতাংশ লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। এরপর রয়েছে পর্যায়ক্রমে সানফ্রান্সিসকো, অস্টিন, সিয়াটল এবং লেক সিটি। [উৎস: ১৮ অক্টেবর ‘৯৯ এর The Daily Star]
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions