মিশর সম্পর্কে জানতে চাই
মিশর
আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব অংশে মিশরের অবস্থান। এটি ১৯২২ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। এর রাষ্ট্রীয় নাম ‘রিপাবলিকান অব ইজিপ্ট’ যা মিশর নামে পরিচিত। মিশরের রাজধানী কায়রো। এদেশের সাথে চারটি দেশের স্থল সীমানা রয়েছে। দেশসমূহ হলো-ইসরাইল, লিবিয়া, সুদান এবং ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। অবশিষ্ট এলাকা ভূ-মধ্যসাগর ও লোহিত সাগর দ্বারা বেষ্টিত। এদেশের আয়তন ১০,০১,৪৪৯ বর্গকিলোমিটার। মোট স্থল সীমানা ২,৬১২ কিলোমিটার এবং উপকূলীয় সীমারেখা ২,৪৫০ কিলোমিটার। মিশর নীলনদের উপর খুব বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল হওয়ায় একে ‘নীলনদের দান’ বলে অভিহিত করা হয়। বৃহত্তম শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে আলেকজান্দ্রিয়া, গিজা, পোর্ট সৈয়দ, সুয়েজ, আসওয়ান প্রভৃতি। এখানকার প্রায় ৯৫% মানুষ নীলনদ পস্নাবিত অববাহিকায় বসবাস করে। মিশরের প্রাচীন সভ্যতার তীর্থভূমি হিসেবে সুপরিচিত। ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম ফারাও সম্রাটদের নির্মিত পিরামিড।
ভূ-প্রকৃতি ও জলবায়ু : মিশরের ভূ-প্রকৃতিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-নীলনদের উপত্যকা, ত্রিভুজাকৃতির উর্বর ব-দ্বীপ অঞ্চল এবং মরু অঞ্চল। মরু অঞ্চলটি আবার তিন ভাগে বিভক্ত। যথা-পশ্চিমাঞ্চল বা লিবিয়ান মরুভূমি, পূর্বাঞ্চল বা আরবীয় মরুভূমি এবং সিনাই উপত্যকা। মিশরের অধিকাংশ স্থান মরু জলবায়ুর অন্তর্ভুক্ত। কিছু অংশে ভূ-মধ্যসাগরীয় জলবায়ু বিরাজমান। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবহাওয়া শীতল থাকে এবং এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করে। মে মাসে তাপমাত্রা ৪২° সেলসিয়াসে পৌঁছে। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০ মিলিমিটার। জুলাই মাসে নীলনদে বন্যা হতে দেখা যায় এবং এসময় তাপমাত্রা কমে যায়।
খনিজ সম্পদ ও শিল্প : মিশরের খনিজ সম্পদসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো প্রাকৃতিক গ্যাস, পেট্রোলিয়াম, তেল, লৌহ- আকরিক, ম্যাঙ্গানিজ, চুনাপাথর, জিপসাম, সীসা, দসত্মা, হাইড্রোকার্বন, দুর্লভ মৌল উপাদান প্রভৃতি। শিল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে টেক্সটাইল, ফার্মাসিটিউক্যাল, সিমেন্ট, নির্মাণ, পর্যটন প্রভৃতি।
কৃষি : মিশরের অধিকাংশ স্থান মরুভূমি হওয়ায় কৃষিজমির পরিমাণ খুবই কম। দেশটির মোট ভূমির মাত্র ৩.৬ শতাংশ কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে আবাদী জমির পরিমাণ ২.৮ শতাংশ এবং স্থায়ী ফসল ০.৮ শতাংশ (সিআইএ, ২০১৭)। এখানে কোনো স্থায়ী চারণভূমি নেই। এদেশে কৃষি এলাকা বলতে নীলনদ অববাহিকাকেই বুঝায়। এসব কৃষিজমিতে নীলনদ থেকে পানিসেচ দেওয়া হয়। দেশটির কৃষিভিত্তিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে তুলা, ভুট্টা, ধান, গম, ফল, সবজি, গবাদি পশু, জলমহিষ, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি।
সুয়েজ খাল : মিশরের অর্থনীতিতে সুয়েজ খালের গুরুত্ব অপরিসীম। ১৮৬৯ একজন ফরাসি ব্যক্তিত্ব ফার্দিন্যান্ড ডি লেসসেপস এর নির্দেশনায় সুয়েজ খাল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। ১৯৫৬ সালে মিশর এটি জাতীয়করণ করে। ভূ-মধ্যসাগর এবং লোহিত সাগরকে সংযুক্ত করেছে সুয়েজ খাল। এই জলপথের একপ্রান্তে রয়েছে পোর্ট সৈয়দ বন্দর এবং অপরপ্রান্তে সুয়েজ বন্দর। এ খাল দিয়ে পরিবাহিত পণ্যদ্রব্যের মধ্যে অন্যতম খনিজ তেল এবং তেলজাত পণ্যসমূহ।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions