Home » » পানি

পানি

পানি

খাদ্যের অন্যতম উপাদান পানি মানবদেহের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। দেহের অভ্যমত্মরীণ কোনো কাজই পানির উপস্থিতি বা সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না। পানির মাধ্যমে শরীর গঠনের প্রয়োজনীয় সব উপাদান দেহের সর্বত্র প্রবাহিত হয়। আমাদের দেহের ওজনের ৬০-৭০% ভাগই পানি।

পানি জাতীয় খাবার

খাবার পানি, চা, দুধ, সরবত, রসাল ফল, শাক-সবজি ইত্যাদি পানির উৎস।

মানব দেহে পানির ভূমিকা

পানি মূলত তিন ধরনের কাজে অংশ নেয়-
১। দেহ গঠন- নবজাতকের দেহের প্রায় ৭৭% এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রায় ৭০% পানি, রক্ত, মাংস, মস্তিষ্ক, যকৃত, ত্বক, কোষ ইত্যাদি প্রতিটি অঙ্গ গঠনের জন্য পানি প্রয়োজন।
২। দেহ অভ্যন্তরীণ কাজ- হজম, বিপাক, পরিপাক, শোষণ ইত্যাদি কাজে পানি প্রয়োজন।
৩। দেহ হতে দূষিত পদার্থ নির্গত করা- মূত্র, ঘাম, মল পানির মাধ্যমে নির্গত হয়।

পানির অভাবে কি রোগ হয়

অতিরিক্ত কঠোর পরিশ্রম, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অতিরিক্ত ঘাম, ডায়াবেটিস, বমি, কলেরা ইত্যাদি কারণে দেহে পানির অভাব দেখা দিতে পারে। এ অবস্থাকে পানিশূন্যতা বলে। এ অবস্থায় পিপাসা তীব্র হয়, ত্বক কুচকে যায়। এতে দেহকোষ শুকিয়ে যায়। আবার দেহে পানির আধিক্য হলে শরীর ফুলে যায়, একে এডিমা বলে।

দৈনিক পানি খাওয়ার পরিমাণ

একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির ২-৩ লিটার পানি বা তরল পান করা উচিত। কারণ, প্রতিদিন ঘাম, মল-মূত্রের মাধ্যমে ঐ পরিমাণ পানি আমাদের দেহ হতে বের হয়ে যায়।

 

পানি সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

পানি একটি তরল পদার্থ যা আমাদের সকলের কাছেই পরিচিত। আমাদের জীবনে পানি অত্যন্তগুরুত বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়। সাধারণ তাপমাত্রায় পানি তরল হলেও অত্যন্তশীতল অবস্থায় কঠিন বরফে পরিণত হয়। আবার উচ্চ তাপমাত্রায় গ্যাসীয় বাষ্পে পরিণত হয়। জীবজগতের সকল উদি ভদ ও প্রাণির দেহ গঠনের জন্য পানি একটি অপরিহার্য উপাদান। আমরা পানি ছাড়া বেঁচে থাকতে পারি না। তাই পানির অপর নাম জীবন।

পানির ধর্ম : বিশুদ্ধ পানি স্বচ্ছ, স্বাদহীন, গন্ধহীন ও বর্ণহীন হয়ে থাকে। পানির কিছু সাধারণ ধর্ম নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

• গলনাংক : আমরা জানি শীতল অবস্থায় পানি কঠিন বরফ হিসেবে থাকে। প্রমাণ চাপে বরফ ০ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গলে যায়। অর্থাৎ পানির গলনাংক ০ডিগ্রি সেলসিয়াস।

• স্ফূটনাংক : প্রমাণ চাপে অর্থাৎ ৭৬০ মি মি পারদ চাপে পানি ১০০ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানি বাষ্পে পরিণত হয়। অর্থাৎ পানির স্ফুটনাংক ১০০ডিগ্রি সেলসিয়াস।

• তড়িৎ পরিবাহিতা : বিশুদ্ধ পানি বিদ্যুৎ অপরিবাহী। তবে পানিতে আয়নিক লবণ দ্রবীভূত থাকলে তা তড়িৎ পরিবহন করে। তাই নদী পুকুর, ডোবা ইত্যাদির পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী।

• দ্রবক : পানি একটি ভাল দ্রাবক। এটি বেশিরভাগ অজৈব লবণ এবং কিছু কিছু জৈব যৌগ দ্রবীভূত করতে পারে। এজন্য পানিকে সর্বজনীন দ্রাবক বলা হয়।

• ঘনত ব : ৪ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানির ঘনত ব সবচেয়ে বেশি হয়। ৪ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে কম ও বেশি তাপমাত্রায় পানির ঘনত ব কমতে থাতে। ৪ডিগ্রি সেলসিয়াসে পানির ঘনত ব ১ গ্রাম/কিউবিক সেন্টিমিটার বা ১০০০ কেজি/ঘনমিটার অর্থাৎ ১ সি সি পানির ভর ১ গ্রাম এবং ১ ঘন মিটিার পানির ভর ১০০০ কেজি।

• অম্লত্ব ও ক্ষারকত্ব : বিশুদ্ধ পানি নিরপেক্ষ। অর্থাৎ বিশুদ্ধ অবস্থায় এটি অ্যাসিড বা ক্ষার কোন ধর্মই প্রদর্শন করে না। তবে এসিডের উপস্থিতিতে এটি ক্ষার হিসেবে আবার ক্ষারের উপস্থিতিতে এটি অ্যাসিড হিসেবে কাজ করে। বিশুদ্ধ অবস্থায় ২০ডিগ্রি-২৭ডিগ্রি C তাপমাত্রায় পানির pH হলো ৭, তবে উচ্চ তাপমাত্রার পানির pH ৭ এর নিচে।

• পানির রাসায়নিক গঠন : পানি দুই পরমাণু হাইড্রোজেন ও এক পরমাণু অক্সিজেন দিয়ে গঠিত। এর আনবিক সংকেত H2O এবং আণবিক ভর ১৮।

পানির প্রয়োজনীয়তা
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য উপযুক্ত পরিবেশের অন্যতম প্রধান দুটি উপাদান হচ্ছে উদ্ভিদ ও প্রাণি। আবার সকল উদ্ভিদ ও প্রাণি বেঁচে থাকার জন্য পানি একটি অপরিহার্য উপাদান। বিভিন্ন প্রকৃতির উদ্ভিদ ও প্রাণির জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:

জলজ উদ্ভিদ: কতগুলো উদ্ভিদ আছে যারা জলে ভাসমান অবস্থায় বাঁচে যেমন- কচুরিপানা, ক্ষুদিপানা, শ্যাওলা, ইত্যাদি। এসব উদ্ভিদ পানি থেকে তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে থাকে। এসকল উদ্ভিদ মাটিতে জনমাতে পারে না। আবার কতগুলো উদ্ভিদ আছে যাদের জলভূমির তলদেশে শেকড় মাটিতে থাকে এবং কান্ডসহ কিছু অংশ পানিতে ডুবন্তও কিছু অংশ পানির উপর ভাসমান অবস্থায় থাকে। যেমন- শাপলা, পদ্ম, হেলেঞ্চা, কলমি, কেশরদাম ইত্যাদি। এরা মাটি ও পানি থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে থাকে। কিছু কিছু উদ্ভিদ আছে যারা মাটি ও পানি উভয় স্থানে বাঁচতে পারে যেমন- কলমি, হেলেঞ্চা ও কেশরদাম ইত্যাদি। এসকল জলজ উদ্ভিদ সালোক সংশেস্নষনের মাধ্যমে যে অক্সিজেন উৎপন্ন করে তা পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখে। ফলে এইরূপ জলজ উদ্ভিদ যে সকল জলজ প্রাণি পানি থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন যোগান দেয়। তাছাড়া শ্যাওলাসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ অনেক জলজ প্রাণির খাদ্য হিসেবেও কাজ করে।

জলজ উদ্ভিদসমূহ সাধারণত অঙ্গজ উপায়ে বংশবৃদ্ধি করে থাকে। তাছাড়া জলজ উদ্ভিদসমূহ সারা দেহের মাধ্যমে পানিসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করে থাকে। তাই এদের সমস্ত দেহ পানির সংস্পর্শে না থাকলে এগুলো বেড়ে উঠতে, এমনকি বাঁচতে পারে না। সুতরাং জলজ উদ্ভিদসমূহের জনম ও বেড়ে উঠার জন্য পানির ভূমিকা অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ।

জলজ প্রাণিঃ আমাদের পরিবেশে যে সকল প্রাণি আছে তাদের মধ্যে জলজ প্রাণির জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। জলজ প্রাণি জলে বাস করে, জলজ পরিবেশ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে, জলেই বংশ বৃদ্ধি করে এবং বেশিরভাগ জলজ প্রাণি জল থেকেই বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পেয়ে থাকে। জলজ প্রাণির মধ্যে মাছ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। মাছ পানি থেকে খাদ্যগ্রহণ করে বেঁচে থাকে, পানিতে বংশ বৃদ্ধি করে এবং মাছ ফুলকার সাহায্যে পানিতে দ্রবণীয় অক্সিজেন গ্রহণ করে। মাছের ফুলকা এমনভাবে তৈরি যা শুধু পানি থেকেই অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। ফলে মাছ পানির বাইরে দ্রুত মরে যায়। তবে কিছু কিছু মাছ তার ত্বকের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে ফলে ডাঙ্গায় কিছুক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে। যেমন- কই, শিং, মাগুর ইত্যাদি। আমাদের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের প্রায় ৮০ ভাগ মাছ থেকে পেয়ে থাকি। ফলে জলজ পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেলে আমাদের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের অভাব দেখা দিবে, যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করবে। সুতরাং বলা যায় আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য জলজ পরিবেশ অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং জলজ পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকা প্রয়োজন।

প্রাকৃতিক পরিবেশর জন্য পানির মানদন্ড : নদ-নদী, খাল-বিল ও সমুদ্রের পানির মানদন্ড নিমেণ উল্লেখ করা হলো-

• বর্ণ ও স্বাদ: বিশুদ্ধ পানি স্বচ্ছ, বর্ণহীন ও স্বাদহীন। জলজ উদি ভদ ও প্রাণির জন্য স্বচ্ছ ও বর্ণহীন পানিই ভাল। অর্থাৎ নদ-নদী, খাল-বিল ও সমুদ্রের পানি স্বচ্ছ ও বর্ণহীন হওয়াই ভাল। তবে প্রাকৃতিক পরিবেশের পানি স্বাদহীন নয়। কারণ নদ-নদী ও খাল-বিলের পানিতে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ দ্রবীভূত থাকে, যা জলজ উদি ভদ ও প্রাণির জন্য প্রয়োজনীয়। আবার সমুদ্রের পানিতে প্রচুর খাদ্য লবণ দ্রবীভূত থাকে। ঝর্ণা এবং বৃষ্টির পানির মান নদ-নদীর পানি থেকে বিশুদ্ধ।

• দ্রবীভূত অক্সিজেন: জলজ উদি ভদ সালোকসংশেস্নষণের মাধ্যমে অক্সিজেন উৎপন্ন করে যা পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। এই দ্রবীভূত অক্সিজেন মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণি বেঁচে থাকার জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করে। সুতরাং জলজ পরিবেশের প্রাণিদের জন্য পানিতে অক্সিজেনের নির্দিষ্ট পরিমাণ উপস্থিতি প্রয়োজন। যদি কোনো কারণে এই অক্সিজেন প্রয়োজনীয় মাত্রার চেয়ে কমে যায় তবে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণি বাঁচা কষ্টকর। জলজ প্রাণিদের জন্য প্রতি লিটারে কমপক্ষে ৫ মিলিগ্রাম অক্সিজেন থাকা প্রয়োজন।

• তাপমাত্রা: পানির তাপমাত্রাও এর একটি গুরুত বপূর্ণ মানদন্ড। পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। তাছাড়া বেশি তাপমাত্রায় জলজ প্রাণির প্রজননসহ সকল শরীরবৃত্তীয় কাজেও সমস্যা সৃষ্টি হয়।

• পানির pH: pH দ্বারা পানির অমস্নত্ব বা ক্ষারকত্ব বোঝায়। অর্থাৎ পানি অ্যাসিড ধর্মী বা ক্ষার ধর্মী তা নির্ভর করে পানির pH এর উপর। যদি pH এর মান ৭ হয় তবে পানি নিরপেক্ষ হয়। যদি pH এর মান ৭ অপেক্ষা বেশি হয় তবে পানি ক্ষারধর্মী হয়। আবার pH এর মান ৭ অপেক্ষা কম হলে পানি অ্যাসিডধর্মী হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশের পানির pH এর মান অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত খাল-বিল, নদ-নদী, পুকুর ইত্যাদিতে পানি ক্ষার ধর্মী হয়ে থাকে। যদি pH এর মান ৬-৮ এর মধ্যে হয় তবে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণির জন্য কোনো অসুবিধা হয় না। তবে pH এর মান খুব কমে গেলে অর্থৎ পানি খুব অ্যাসিডধর্মী হলে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণি বেঁচে থাকতে পারে না। আবার pH এর মান অত্যন্তবেড়ে গেলেও জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণি বেঁচে থাকতে পারে না।

• লবণাক্ততা : সাধারণত সমুদ্র ছাড়া অন্যান্য উৎসের পানি মিঠা পানি হয়ে থাকে নদীর পানিতেও কিছু খনিজ লবণ দ্রবীভূত থাকে সেই অনুসারে পানিকে মিঠা পানি ও খর পানি বলা হয়। মিঠা পানির উদ্ভিদ ও প্রাণি লবণাক্ত পানিতে বাঁচতে পারে না। তাই খাল-বিল, নদ-নদীর পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেলে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণির জীবনধারণের অসুবিধা সৃষ্টি হয়। তবে কিছু কিছু মাছ সমুদ্রে বাস করলেও ডিম ছাড়ার জন্য অর্থাৎ বংশ বৃদ্ধির জন্য মিঠা পানিতে চলে আসে। যেমন- ইলিশ মাছ, শেমন মাছ ইত্যাদি। তবে সামুদ্রিক মাছ ও উদ্ভিদ লবণাক্ত পানিতেই জীবনধারণ করে।

মানুষের ব্যবহরের জন্য পানির মানদন্ড : আমরা প্রাত্যহিক জীবনে গোসল করা, কাপড় ধোয়া, রান্না-বান্না এবং খাবার জন্য পানি ব্যবহার করি। তাছাড়া কৃষিতে সেচ, শিল্প কারখানায় দ্রাবক, কাঁচামাল বা শীতকে বিভিন্নভাবে পানি ব্যবহার করি। প্রতিটি কাজের জন্য নির্দিষ্ট গুণাগুণ সম্পন্ন পানি প্রয়োজন। বিভিন্ন কাজে ব্যবহার্য পানির প্রয়োজনীয় মানদন্ড নিমেণ উল্লেখ করা হলো-

• খাবার পানি : জীবাণুমুক্ত ও কিছু প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান যুক্ত পানি খাবার পানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভূগর্ভস্থ পানি জীবাণুমুক্ত করে খাবার পানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক যুক্ত থাকলে তা খাবার উপযুক্ত নয়।

• কৃষিতে সেচ : কৃষিতে সেচ কাজে খাল-বিল, নদ-নদী বা ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহৃত হয়। কৃষিতে লবণাক্ত পানি ব্যবহার করা যায় না।

• শিল্প-কারখানায় : শিল্প-কারখানায় নদীর মিঠা পানি ব্যবহার করা প্রয়োজন। খর পানি শিল্প কারখানায় যন্ত্রপাতির ক্ষয়সাধন করে ও দ্রুত নষ্ট করে ফেলে।

• ঔষধ ও রাসায়নিক শিল্পে : ঔষধ ও রাসায়নিক শিল্পে দ্রাবক হিসেবে বা কাঁচামাল হিসেবে বিশুদ্ধ পানি অর্থাৎ পাতিত পানি ব্যবহার করা হয়।

পানি পরিশোধন : প্রাকৃতিক উৎস হতে আমরা যে পানি পেয়ে থাকি তাতে বিভিন্ন প্রকার পদার্থ মিশ্রিত ও দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। তাছাড়া প্রাকৃতিক উৎস হতে প্রাপ্ত পানিতে বিভিন্ন প্রকার জীবাণু থাকতে পারে। ফলে খাওয়া ও অন্যান্য কাজে পানি ব্যবহারের পূর্বে তা প্রয়োজন অনুসারে পরিশোধন করা প্রয়োজন। পানি পরিশোধনের জন্য কোন পদ্ধতি ব্যবহৃত হবে তা নির্ভর করে পরিশোধিত পানি কী কাজে ব্যবহৃত হবে তার উপর। পানি পরিশোধনের কয়েকটি পদ্ধতি নিমেণ বর্ণনা করা হলো-

• ছাকন : পানিতে অদ্রবণীয় পদার্থ মিশ্রিত থাকলে তা ছাকন পদ্ধতিতে পৃথক করা যায়। এক্ষেত্রে ফিল্টার পেপার ব্যবহার করে অদ্রবণীয় পদার্থ পৃথক করা যায়। অথবা সূক্ষ্ম কাপড়, বা ছাকনি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ছাকন পদ্ধতিতে পরিশোধিত পানিতে দ্রবণীয় পদার্থ ও জীবাণু দূর করা যায় না। পানিতে ধুলা-বালিসহ ময়লা আবর্জনা এ পদ্ধতিতে পৃথক করা যায়।

• স্ফুটন : পানি সাধারণ বায়ুমন্ডলীয় চাপে ১০০ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট তাপমাত্রায় ১০-১৫ মিনিট ফুটালে জীবাণুমুক্ত হয়। সাধারণত বাসা-বাড়িতে খাবার জন্য পানি ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করা যায়।

• পাতন : পাতন প্রক্রিয়ায় বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়। পানিকে ফুটিয়ে বাষ্পিভূত করে সেই বাষ্পকে আবার ঘনীভূত করাকে পাতন বলে। ঔষধ শিল্পে বা রাসায়নিক শিল্পে দ্রাবক হিসেবে বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজনে পাতন পদ্ধতিতে পানি পরিশোধন করে বিশুদ্ধ পানি পৃথক করা হয়। এ পদ্ধতিতে পানিতে কোনো দ্রবনীয় লবণ ও জীবাণু থাকে না। পাতিত পানি খাবার পানি হিসেবে উপযুক্ত নয়। কারণ এতে আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো খনিজ পদার্থ থাকে না।

• ক্লোরিনেশন : যদি পানিতে রোগ সৃষ্টিকারী কোন জীবাণু থাকে তবে তা দূর করার জন্য জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়। ব্লিচিং পাউডার বা অন্য কোন রাসায়নিক পদার্থ (যেমন-NaOCl) যা Cl2 গ্যাস উৎপন্ন করে তা ব্যবহার করে পানি জীবাণুমুক্ত করা যায়। এ পদ্ধতিতে Cl2 গ্যাস ব্যবহৃত হয় বলে একে ক্লোরিনেশন বলে। তবে ক্লোরিনের মাত্রা পানিতে কিছুটা থেকে যায়। ক্লোরিনের পরিমাণ বেশি হলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

• ফিটকিরি : পানিতে ফিটকিরি মিশিয়েও পানি জীবাণুমুক্ত করা যায়। আমাদের দেশে বন্যার সময় পস্নাবিত অঞ্চলে এ পদ্ধতিতে পানি শোধন করা হয়।

• অন্যান্য পদ্ধতি : O3 গ্যাস বা অতি বেগুনি রশ্মি ব্যবহার করেও পানি পরিশোধন করে জীবাণুমুক্ত করা যায়। সাধারণত বোতলজাত পানির কারখানায় এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।

পানির উৎসঃ
আমরা প্রকৃতিতে যেখান থেকে পানি পেয়ে থাকি তাই পানির উৎস। নদ-নদী, খাল-বিল, ঝরনা, হ্রদ এবং ভূগর্ভ হতে আমরা পানি পেয়ে থাকি। আবার মেরু অঞ্চল ও সুউচ্চ পর্বতমালায়ও বরফ আকারে প্রচুর পরিমাণ পানি সঞ্চিত আছে। এসব পানি লবণাক্ত নয়। এগুলো মিঠা পানি নামে পরিচিত। পৃথিবীর প্রায় ৯৭ ভাগ পানি সমুদ্র ও মহাসমুদ্রে সঞ্চিত আছে। তবে এসব পানিতে প্রচুর লবণ থাকায় তা পানের উপযুক্ত নয়। এ পানিকে লোনা পানি (saline water) বলা হয়। সাধারণত নদ-নদী,খাল-বিল, ঝরনা, হ্রদ ও ভূগর্ভস্থ পানিই মানুষ কৃষিকাজ, শিল্প কারখানা, গৃহস্থালি কাজ এবং পানের জন্য ব্যবহার করে থাকে। তবে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে লবণ পৃথক করে সমুদ্রের পানিও পান করা যায়।

বাংলাদেশে মিঠা পানির উৎসঃ

আমরা রান্না থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজে অর্থাৎ কাপড় ধোয়া, খাওয়া, নির্মাণ, কলকারখানা, যানবাহনের ইঞ্জিনের শীতলীকরণ, সৃষিতে সেচ ইত্যাদি কাজে প্রচুর পরিমাণ মিঠা পানি ব্যবহার করে থাকি। আমাদের দেশে অসংখ্য নদ-নদী, খাল-বিল রয়েছে যেখান থেকে আমরা এসকল কাজে ব্যবহারের জন্য পানি পেয়ে থাকি। তাছাড়া ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করেও আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় পানি পেয়ে থাকি। বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ফলে বৃষ্টির পানিও সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে পারি।

সুতরাং বলা যায় খাল-বিল, নদ-নদী, বৃষ্টি এবং ভূগর্ভস্থ পানিই আমাদের দেশে মিঠা পানির উৎস।

বাংলাদেশে পানির উৎসের হুমকি বাংলাদেশে পানির উৎসসমূহ হচ্ছে নদ-নদী, খাল-বিল এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। এসব উৎসে পানির প্রাপ্যতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে মিঠা পানির উৎসসমূহ হুমকির সম্মুখিন হয়ে পরেছে। নিম্নে এর কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো:

১। নদী ভাঙ্গন ও পলি জমা : বাংলাদেশে প্রতি বছর বর্ষায় নদ-নদীতে ভাঙ্গন দেখা দেয়। নদ-নদীতে পলি জমে ভরাট হয়ে নদীর ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে নদ-নদীতে পানির প্রাপ্যতা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

২।  নদী-দখল : আজকাল মানুষ নদী ভরাট করে বিভিন্ন রকম নির্মাণ কাজ করছে। ফলে নদীতে পানি ধারণক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।

২। নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ : বাংলাদেশে বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়ে ফসলের জমি, ঘরবাড়ি ডুবিয়ে দেয়। এজন্য নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে শাখা ও প্রশাখা নদীতে পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে।

৩।  জলবায়ু পরিবর্তন : বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) বৃদ্ধির ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে হিমালয় পর্বতমালার সঞ্চিত বরফ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এজন্য হিমালয় পর্বতমালা থেকে সৃষ্ট নদীসমূহে উৎস থেকে পানির প্রাপ্যতা হ্রাস পাচ্ছে। আমাদের দেশের প্রায় সব নদীই হিমালয় পর্বতমালা থেকে সৃষ্ট হয়েছে। তাই বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে আমাদের দেশের নদীসমূহের পানির প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে।

৪। নদী অববাহিকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি : নদী অববাহিকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কৃষি থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই নদীর পানির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে নদীর পানি প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে।

৫। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার : কৃষিতে সেচ দেওয়ার জন্য শুষ্ক মৌসুমে গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া বড় বড় শহরে খাবার পানির সরবরাহেও ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন আরও নিচে নেমে যাচ্ছে। অর্থাৎ ভূগর্ভস্থ পানির মজুদও দিন দিন কমে যাচ্ছে।

পানির পুনঃআবর্তন :

পৃথিবীর পৃষ্ঠের শতকরা ৭৫ ভাগ অংশই পানি দিয়ে আবৃত। তবে বেশির ভাগ পানিই লবণাক্ত হওয়ায় আমরা তা সরাসরি ব্যবহার করতে পারি না। পৃথিবীতে মোট সঞ্চিত পানির মাত্র শতকরা ১ ভাগ হলো মিঠা পানি (Fresh Water)। প্রকৃতিতে এই মিঠা পানির পুনঃআবর্তন ঘটছে। ফলে আমরা এই পানি আদিকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারছি। তা না হলে এই মিঠা পানির সঞ্চয় অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত। দিনের বেলা সূর্যের তাপে সমুদ্রের পানি বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করছে। বায়ু প্রবাহের ফলে এই পানি বাতাসের সাথে ভূপৃষ্ঠের স্থলভাগের উপর চলে আসে। অতঃপর তা ঘনীভূত হয়ে মেঘ সৃষ্টি করে এবং এই মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়। উল্লেখ্য যে, বৃষ্টির পানি লবণমুক্ত মিঠা পানি। স্থলভাগে বৃষ্টির ফলে নদ-নদী ও খাল-বিল পুনরায় মিঠা পানিতে ভরে উঠে। খাল-বিল নদ-নদীর পানি প্রবাহিত হয়ে শেষ পর্যন্ত আবার সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। এভাবে সমুদ্র থেকে বাতাসে, বাতাস থেকে বৃষ্টির মাধ্যমে খালবিল, নদ-নদীতে এবং নদ-নদী থেকে পানি সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। এটিই পানির পুনঃআবর্তন প্রক্রিয়া। এই পুনঃআবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই মিঠা পানির উৎসগুলো আদিকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত টিকে আছে। তা না হলে স্থলভাগের পানি নিঃশেষ হয়ে যেত এবং স্থলভাগের কোনো গাছপালা জীবজন্তু বেঁচে থাকতে পারত না।

0মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Comment below if you have any questions

Basic Computer Course

MS Word
MS Excel
MS PowerPoint
Bangla Typing, English Typing
Email and Internet

Duration: 2 months (4 days a week)
Sun+Mon+Tue+Wed

Course Fee: 4,500/-

Graphic Design Course

Adobe Photoshop
Adobe Illustrator

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 9,000/-

Web Design Course

HTML 5
CSS 3

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 8,500/-

Digital Marketing Course

Facebook, YouTube, Instagram, SEO, Google Ads, Email Marketing

Duration: 3 months (2 days a week)
Fri+Sat

Course Fee: 15,000/-

Class Time

Morning to Noon

1st Batch: 08:00-09:30 AM

2nd Batch: 09:30-11:00 AM

3rd Batch: 11:00-12:30 PM

4th Batch: 12:30-02:00 PM

Afternoon to Night

5th Batch: 04:00-05:30 PM

6th Batch: 05:30-07:00 PM

7th Batch: 07:00-08:30 PM

8th Batch: 08:30-10:00 PM

Contact:

Alamin Computer Training Center

796, West Kazipara Bus Stand,

West side of Metro Rail Pillar No. 288

Kazipara, Mirpur, Dhaka-1216

Mobile: 01785 474 006

Email: alamincomputer1216@gmail.com

Facebook: www.facebook.com/ac01785474006

Blog: alamincomputertc.blogspot.com

Contact form

নাম

ইমেল*

বার্তা*

-->