পরাগায়ন কি
পরাগায়ন (Pollination)
ফুলের পরাগধানী থেকে পরাগরেণু একই ফুলের অথবা একই প্রজাতির অন্য ফুলের গর্ভমুন্ডে স্থানান্তরের প্রক্রিয়াকে পরাগায়ন বলা হয়।
পরাগায়ন প্রধানত দুই প্রকার। যথা- স্ব-পরাগায়ন ও পর-পরাগায়ন।
স্ব-পরাগায়ন (self-pollination) : ফুলের পরাগধানী হতে পরাগরেণু স্থানান্তরিত হয়ে একই ফুলের গর্ভমুন্ডে অথবা একই গাছের অন্য একটি ফুলের গর্ভমুন্ডে পতিত হওয়াকে স্ব-পরাগায়ন বলে। স্ব-পরাগায়নে অংশগ্রহণকারী দুটি ফুলের জিনোটাইপ (জীবের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী বস্তুসমষ্টি) একই রকম থাকে। প্রকৃতিতে অল্প সংখ্যক উদ্ভিদে স্ব-পরাগায়ন ঘটে। তুলা, শিম, টমেটো, কানশিরা প্রভৃতি উদ্ভিদে স্ব-পরাগায়ন পরিলক্ষিত হয়।
স্ব-পরাগায়নের ফলে সৃষ্ট নতুন উদ্ভিদ প্রকরণে পার্থক্য খুবই কম থাকে। ফলে পরিবর্তিত পরিবেশে এ ধরনের উদ্ভিদ সহজে খাপ খাওয়াতে পারে না। তবে স্ব-পরাগায়িত উদ্ভিদের ফুল ও ফল ধারণের সময় এক হওয়াতে এ ধরনের উদ্ভিদের চাষ ও শস্য আহরণে সুবিধা হয়।
পর-পরাগায়ন (cross-pollination) : একটি ফুলের পরাগধানী হতে পরাগরেণু স্থানান্তরিত হয়ে একই প্রজাতির অন্য একটি গাছের ফুলের গর্ভমুন্ডে পতিত হওয়াকে পর-পরাগায়ন বলে। পর-পরাগায়নে অংশগ্রহণকারী দুটি ফুলের জিনোটাইপ কিছুটা ভিন্নতর হয়। প্রকৃতিতে বেশিরভাগ উদ্ভিদে পর-পরাগায়ন পরিলক্ষিত হয়। ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা, আম, কাঁঠাল, শিমুল ইত্যাদি উদ্ভিদে পর-পরাগায়ন ঘটে। পর-পরাগায়নের ফলে সৃষ্ট উদ্ভিদে প্রকরণ দেখা যায়। যা উদ্ভিদকে পরিবর্তনশীল পরিবেশে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করে। পর-পরাগায়নের ফলে সৃষ্ট উদ্ভিদ পিতৃ-মাতৃ উদ্ভিদ হতে লম্বা হতে পারে, যা খাটো উদ্ভিদ অপেক্ষা অধিক আলো পেতে সাহায্য করে। পর-পরাগায়নের ক্ষেত্রে পরাগরেণু দূরবর্তী স্থানে স্থানান্তরের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন হয়। সাধারণত পতঙ্গ, বায়ু, পানি ও প্রাণির মাধ্যমে পরাগায়ন ঘটে। পরাগায়নের মাধ্যমের ভিন্নতার জন্য পরাগায়ন প্রক্রিয়ার নাম ভিন্নতর হয়।
নিম্নে বিভিন্ন মাধ্যমে পর-পরাগায়নের বর্ণনা দেওয়া হল:
পতঙ্গের সাহায্যে পরাগায়ন : অধিকাংশ উদ্ভিদের পরাগায়ন পতঙ্গের মাধ্যমে হয়। যে সকল ফুলের পরাগায়ন পতঙ্গের সাহায্যে হয়ে থাকে তাকে পতঙ্গপরাগী ফুল বলা হয় এবং এ প্রক্রিয়াকে পতঙ্গ পরাগায়ন বলে। পতঙ্গ পরাগী ফুলের উজ্জল বর্ণ, সুগন্ধ ও মধুগ্রন্থি থাকে। বর্ণ ও গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে মধু সংগ্রহরে জন্য ফুলে ঢোকার সময় পতঙ্গের দেহে পরাগরেণু লেগে যায়। এ পতঙ্গ মধু সংগ্রহের জন্য যখন একই প্রজাতির অন্য ফুলে ঢোকে তখন এদের দেহে লেগে থাকা পরাগরেণু ঐ ফুলের গর্ভমুন্ডে লেগে পরাগায়ন ঘটায়। সরিষা, হাসনাহেনা, বাবলা প্রভৃতি উদ্ভিদের ফুলে পতঙ্গ পরাগায়ন ঘটে।
বায়ুর সাহায্যে পরাগায়ন : অনেক উদ্ভিদের ফুলের পরাগায়ন বায়ুর সাহায্যে হয়ে থাকে। যে ফুলের পরাগায়ন বায়ুর সাহায্যে সম্পন্ন হয়ে থাকে তাকে বায়ু পরাগী ফুল বলে এবং এ প্রক্রিয়াকে বায়ু পরাগায়ন বলে। বায়ু পরাগী ফুল সাধারণত আকর্ষণহীন হয়। এ সমস্ত ফুল আকারে ছোট, ফলে এদের পরাগরেণু ক্ষুদ্র ও হালকা হয়। এদের পরাগরেণু হালকা হওয়ায় সহজেই বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে। এ জাতীয় উদ্ভিদের ফুলে অসংখ্য পরাগরেণু সৃষ্টি হয়, কেননা বায়ুর মাধ্যমে পরাগরেণু স্থানান্তরের সময় অনেক পরাগরেণু নষ্ট হয়ে যায়। বাতাসে ভেসে আসা পরাগরেণু ধরার জন্য এসকল উদ্ভিদের ফুলের গর্ভমুন্ড পাখির পালকের মত রোমশ হয়। পাইনাস, ধান, গম, ভূট্টা, ইক্ষু, ঘাস জাতীয় উদ্ভিদে এ প্রক্রিয়ায় পরাগায়ন ঘটে।
প্রাণির সাহায্যে পরাগায়ন : কিছু কিছু ফুলের পরাগায়ন পাখি বাদুড়, শামুক, কাঠবিড়ালি প্রভৃতি প্রাণি দ্বারা হয়ে থাকে। যে সকল ফুলের পরাগায়ন প্রাণির সাহায্যে হয়ে থাকে তাকে প্রাণি পরাগী ফুল বলে এবং এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় প্রাণি পরাগায়ন। প্রাণি পরাগী ফুল সাধারণত বড় ও উজ্জ্বল বর্ণের হয়। মাদার, শিমুল, কদম প্রভৃতি উদ্ভিদের ফুলের পরাগায়ন প্রাণির সাহায্যে হয়ে থাকে।
পানির সাহায্যে পরাগায়ন : যে ফুলের পরাগায়ন পানির সাহায্যে হয়ে থাকে তাকে পানি পরাগী ফুল বলে এবং এ প্রক্রিয়াকে পানি পরাগায়ন বলে। পাতা শেওলা, কাঁটা শেওলা প্রভৃতি জলজ উদ্ভিদে পানি পরাগায়ন ঘটে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions