সালোকসংশ্লেষণ কাকে বলে
সালোকসংশ্লেষণ
জীবদেহের সকল শারীরবৃত্ত্বীয় কাজের জন্য যে শক্তির প্রয়োজন হয় সে শক্তি আসে প্রধানত শর্করা জাতীয় খাদ্য থেকে। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে এ শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি হয় উদ্ভিদের সবুজ পাতায় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। প্রাণিজগতের শর্করা খাদ্যের প্রাথমিক উৎস হচ্ছে সবুজ উদ্ভিদ। বিভিন্ন প্রাণি খাদ্য-শৃঙখল ও খাদ্য জালের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সবুজ উদ্ভিদ থেকে শর্করা জাতীয় খাদ্য পেয়ে থাকে। সবুজ উদ্ভিদ কর্তৃক শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া নিচে আলোচনা করা হলোসবুজ উদ্ভিদ শর্করা জাতীয় খাদ্যবস্তু তৈরি করার সময় একটি বিশেষ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিরূপে খাদ্যবসত্মুর মধ্যে সঞ্চিত করে রাখে। এ শারীবৃত্তীয় প্রক্রিয়া সালোকসংশ্লেষণ নামে পরিচিত। সংজ্ঞা হিসেবে বলা যেতে পারে- যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় সবুজ উদ্ভিদ ক্লোরোফিলের সাহায্যে সূর্যালোকশক্তি ব্যবহার করে পানি ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের সমনবয়ে শর্করা (গ্লুকোজ) উৎপন্ন করে এবং উপজাত হিসেবে অক্সিজেন ত্যাগ করে, তাকে সালোকসংশ্লেষণ বলে।
সালোকসংশ্লেষণ অঙ্গ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা তথা খাদ্য উৎপাদনের বেশিরভাগই সবুজ পাতাতে ঘটে। এজন্য পাতাকে শর্করা উৎপাদনের প্রাকৃতিক কারখানা বলা হয়। তবে পাতা ছাড়াও উদ্ভিদের সবুজ কচি কান্ড, ফুলের বৃতি, পর্ণকান্ড প্রভৃতি অংশেও সালোকসংশ্লেষণ হয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়াটি বোঝার জন্য পাতার অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন; কেননা দিনের বেলায় সূর্যালোকের উপস্থিতিতে সবুজ উদ্ভিদের পাতায় মেসোফিল টিস্যুতে সালোকসংশ্লেষণ ঘটে। এখানে সালোকসংশ্লেষণের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত কোষগুলো সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলোএকটি পাতার প্রস্থচ্ছেদ অণুবীক্ষণ যন্ত্রে প্রত্যক্ষ করলে দেখা যায়, এটা অনেকগুলো কোষস্তরের সমনবয়ে গঠিত।
একেবারে উপরের কোষস্তরের নাম হচ্ছে উর্ধ্ব বহিঃত্বক। এ কোষস্তর থেকে মোমজাতীয় পদার্থ উৎপন্ন হয়ে বহিঃতবকের উপরে একটি আবরণের সৃষ্টি করে যা কোষ থেকে পানি বের হওয়া রোধ করে। মাঝের স্তরের কোষগুলোকে একত্রে মেসোফিল স্তর বলে। মেসোফিল স্তরের কোষগুলো সরল প্যারেনকাইমা প্রকৃতির। মেসোফিল স্তরকে দুহভাগে ভাগ করা হয়। যথা-প্যালিসেড প্যারেনকাইমা ও স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা। প্যালিসেড প্যারেনকাইমা কোষগুলোতে অধিকহারে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে এবং এ স্তরেই সালোকসংশ্লেষণের হার বেশি। স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা কোষগুলো অত্যন্ত ঢিলাভাবে সাজানো থাকে, তাই এদের মধ্যে অনেক ফাঁকা জায়গা থাকে। এ ফাঁকা জায়গাগুলো দিয়ে বায়ু চলাচল করার ফলে তা থেকে পাতার কোষগুলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করতে পারে এবং সালোকসংশ্লেষণে উৎপন্ন অক্সিজেন বের করে দিতে পারে। পাতার নিচের দিকের বাইরের স্তরটি হচ্ছে নিমণবহিঃত্বক। এ স্তরেই সাধারণত পত্ররন্ধ্র থাকে। পত্ররন্ধ্রের মধ্য দিয়েই বায়ু পাতার ভেতরের কোষগুলোর কাছে পৌঁছায়। দিনের বেলায় পত্ররন্ধ্র খোলা থাকে, ফলে এ পথে বায়ু পাতার ভিতরে প্রবেশ করতে পারে এবং সালোকসংশ্লেষণ ঘটে। রাতে পত্ররন্ধ্র বন্ধ থাকে, ফলে সালোকসংশ্লেষণও বন্ধ থাকে। পত্ররন্ধ্রের দু’পাশে দুটি রক্ষীকোষ থাকে, যারা পত্ররন্ধ্র খোলা ও বন্ধ হওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে।
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া
সালোকসংশ্লেষণ একটি জটিল প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় অনেকগুলো ধারাবাহিক রাসায়নিক বিক্রিয়ার শেষে শর্করা উৎপন্ন হয়। এসব রাসায়নিক বিক্রিয়াকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়, যথাআলোক পর্যায় ও অন্ধকার পর্যায়।
আলোক পর্যায় : আলোক পর্যায়ে ক্লোরোফিল সূর্যালোক থেকে আলোকশক্তিকে গ্রহণ করে এর সাহায্যে পানির অণুকে ভেঙ্গে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন তৈরি করে। অক্সিজেন পত্ররন্ধ্রের ভিতর দিয়ে বের হয়ে বায়ুতে মিশে যায়। হাইড্রোজেন সালোকসংশ্লেষণের পরবর্তী অন্যান্য বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এ পর্যায়ে আলোক অত্যাবশ্যকীয়।
অন্ধকার পর্যায় : অন্ধকার পর্যায়ে আলোর প্রয়োজন হয় না। এ পর্যায়ে আলোক পর্যায়ে উৎপন্ন হাইড্রোজেন অনেকগুলো ধারাবাহিক জটিল বিক্রিয়ার মাধ্যমে কার্বন ডাই-অক্সাইডের সাথে বিক্রিয়া করে সরল শর্করা উৎপন্ন করে। উৎপন্ন শর্করা পরে উদ্ভিদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার জটিল শর্করায় রূপান্তরিত হয়। উদ্ভিদ দেহে সঞ্চয়ের জন্য সালোকসংশ্লেষণে উৎপন্ন শর্করা অদ্রবণীয় শ্বেতসারে পরিবর্তিত হয়।
সালোকসংশ্লেষণে নির্গত অক্সিজেনের উৎস
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উপজাত হিসেবে উৎপন্ন অক্সিজেন, রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পানি থেকে আসে, কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে নয়। অক্সিজেনের রেডিও আইসোটোপ ব্যবহার করে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Comment below if you have any questions